- বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় পড়বে–
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ وَلاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি), তাঁর উপরে ভরসা করছি। নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ব্যতীত’।
- বিদায়কালেপঠিতদুয়া–
সফরকারী ব্যক্তি নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে বিদায় নেয়ার সময় তাদের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত দু’আ পড়বে–
أَسْتَوْدِعُكُم اللَّهَ الَّذِي لاَ تَضِيعُ وَدَائِعُهُ
অর্থ: ‘তোমাদেরকে গচ্ছিত রাখছি আল্লাহর কাছে, যার কাছে গচ্ছিত কিছুই বিনষ্ট হয়না’। (নাসাঈ, আলবানীর মতে সহীহ)
বাড়ির অধিবাসীরা মুসাফিরের উদ্দেশ্যে বলবে-
أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ
মুসাফির একাধিক ব্যক্তি হলে ‘কা’ এর জায়গায় ‘কুম’ বলবে-
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكُم وَأَمَانَتَكُمْ وَخَوَاتِيْمَ أَعْمَالِكُمْ
অর্থ: ‘আমি আপনার/আপনাদের দ্বীন, আপনার/আপনাদের আমানত সমূহ ও আপনার/আপনাদের শেষ আমল সমূহকে আল্লাহর যিম্মায় ন্যস্ত করলাম’। (তিরমিযী, আবু দাউদ)
- যানবাহনে আরোহনের সময়-
যানবাহনের সিঁড়িতে পা দিয়ে ‘বিসমিল্লাহ’, (বিমানে) উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবর’ এবং সীটে বসে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে। অতঃপর নামার সময় ‘সুবহা-নাল্লাহ’ বলবে।
- যানবাহনেআরোহনেরপর–
পরিবহন চলতে শুরু করলে তিনবার ‘আল্লাহু আকবর‘ বলে নিম্নের দো‘আটি পাঠ করবে-
سُبْحَانَ الَّذِىْ سَخَّرَلَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِيْنَ، وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ– اَللّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِىْ سَفَرِنَا هذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى، اَللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هذَا وَاطْوِ لَنَا بُعْدَهُ، اَللّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِى السَّفَرِ وَالْخَلِيْفَةُ فى الْأَهْلِ وَالْمَالِ، اَللّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَآبَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِى الْمَالِ وَالْأَهْلِ
অর্থ: ‘মহা পবিত্র সেই সত্তা যিনি এই বাহনকে আমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা একে অনুগত করার ক্ষমতা রাখি না’। ‘আর আমরা সবাই আমাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’ (যুখরুফ: ১৩-১৪)। হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকটে আমাদের এই সফরে কল্যাণ ও তাক্বওয়া এবং এমন কাজ প্রার্থনা করি, যা তুমি পসন্দ কর। হে আল্লাহ! আমাদের উপরে এই সফরকে সহজ করে দাও এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি এই সফরে আমাদের একমাত্র সাথী এবং আমাদের পরিবারে ও মাল-সম্পদে তুমি আমাদের একমাত্র প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে পানাহ চাই সফরের কষ্ট ও খারাব দৃশ্য হতে এবং আমাদের মাল-সম্পদে ও পরিবারের নিকটে মন্দ প্রত্যাবর্তন হতে।
- বৃহস্পতিবার সকালে সফরে বের হওয়া উত্তম-
কা’ব ইবনে মালেক (রা: ) হতে বর্নিত, নবী (সা:) তাবুক অভিযানে বৃহস্পতিবার বের হলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বের হওয়া পছন্দ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)
- সফরের জন্য সঙ্গী খোঁজ করা এবং একজনকে আমীর নিযুক্ত করে তার আনুগত্য করা-
আবূ সাঈদ ও আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যখন তিন ব্যক্তি সফরে বের হবে, তখন তারা যেন তাদের একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়।” (আবূ দাউদ হাসান সূত্রে)ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি লোকেরা জানত যে, একাকী সফরে কী ক্ষতি রয়েছে; যা আমি জানি, তাহলে কোন সওয়ারী একাকী সফর করত না।” (বুখারী)
- রাতে সফর করা উত্তম-
আনাস (রা:) বলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তোমরা রাতে সফর করো। কেননা, রাতে যমীনকে গুটিয়ে দেওয়া হয়।” (অর্থাৎ, রাস্তা কম মনে হয়।) (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)
- কোন মহিলার জন্য একাকী সফর করা হারাম-
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
- সফরের সঙ্গীকে সাহায্য করা-
রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, “যার বাড়তি সওয়ারী আছে, সে যেন তা তাকে দেয় যার সওয়ারী নেই এবং যার অতিরিক্ত সফরের সম্বল রয়েছে, সে যেন সম্বলহীন ব্যক্তিকে দেয়।” (মুসলিম)রাসূলুল্লাহ (সা:) সফরে (সকলের) পিছনে চলতেন। তিনি দুর্বলকে চলতে সাহায্য করতেন, তাকে পিছনে বসিয়ে নিতেন ও তার জন্য দুআ করতেন। (আবূ দাঊদ হাসান সূত্রে)
- সফরে দুআ কবুল হয়, তাই দু‘আ করা মুস্তাহাব-
আবূ আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তিনজনের দুআ সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয়- নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ, মুসাফিরের দুআ ও ছেলের জন্য মাতা-পিতার বদ্দুআ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
- উঁচুনিচুজায়গায়চড়ারসময়দু’আ–
মুসাফির উঁচু জায়াগায় চড়ার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং নিচু জায়গায় নামবার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে।জাবের (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা (সফরে) যখন উঁচু জায়গায় চড়তাম তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম এবং নীচু জায়গায় নামতাম, তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম। (বুখারী)
- সফরে মানুষ বা অন্য কিছু থেকে ভয় পেলে যে দু‘আ পড়বে-
আবূ মূসা আশআরী (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন কোন শত্রুদলকে ভয় করতেন তখন এই দুআ পড়তেন,
اَللّٰهُمَّ إنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে ওদের মুখামুখি করছি এবং ওদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। (আবূ দাউদ, নাসাঈ বিশুদ্ধ সূত্রে)
- অত্যাচারীদের সমাধি এবং তাদের ধ্বংস-স্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় করণীয়-
ইবনে উমার (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) সামূদ জাতির বাসস্থান হিজর (নামক) স্থানে পৌঁছে নিজ সাহাবীদেরকে বললেন, “তোমরা এ সকল শাস্তিপ্রাপ্তদের স্থানে প্রবেশ করলে কাঁদতে কাঁদতে (প্রবেশ) কর। যদি না কাঁদো, তাহলে তাদের স্থানে প্রবেশ করো না। যেন তাদের মত তোমাদের উপরেও শাস্তি না পৌঁছে যায়।” (সহীহুল বুখারী ৪৩৩, ৩৩৭৮, মুসলিম ২৯৮০)
- গন্তব্যস্থলে অবতরণ করে পড়বে-
খাওলা বিনতে হাকীম (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি (সফরের) কোন মঞ্জিলে নেমে এই দুআ পড়বে-
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
অর্থাৎ, ‘আল্লাহর পরিপূর্ন বানীসমূহের অসীলায় তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আমি আশ্রয় চাচ্ছি‘।
তাহলে সে মঞ্জিল থেকে অন্যত্র রওনা হওয়া পর্যন্ত কোন জিনিস তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম, মিশকাত- ২৪২২)
- প্রয়োজন পূরন হয়ে গেলে সফর থেকে অতি শীঘ্র বাড়ি ফিরা মুস্তাহাব-
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “সফর আযাবের অংশ বিশেষ। সফর তোমাদেরকে পানাহার ও নিদ্রা থেকে বিরত রাখে। সুতরাং যখন তোমাদের কারোর সফরের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে, তখন সে যেন বাড়ি ফিরবার জন্য তাড়াতাড়ি করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
- সফর শেষে দিনের বেলায় বাড়ি ফিরে আসা উত্তম-
আনাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) সফর শেষে রাত্রিকালে স্বীয় বাড়ি ফিরতেন না। তিনি সকালে বা বিকালে বাড়ি আগমন করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
- সফর থেকে বাড়ি ফেরার সময় দুআ-
আনাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সা:) এর সঙ্গে সফর থেকে ফিরে এলাম। পরিশেষে যখন মদীনার উপকন্ঠে এসে উপকন্ঠে এসে উপনীত হলাম, তখন তিনি এই দুআ পড়লেন–
آيِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ سَاجِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ
অর্থাৎ, আমরা সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, উপাসনাকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী। (মুসলিম)
- সফর থেকে বাড়ি ফিরে পুরুষদের জন্য বাড়ির নিকটবর্তী কোন মসজিদে দু’রাকাত নফল নামায পড়া মুস্তাহাব-
কা’ব ইবনে মালেক (রা:) হতে বর্নিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সফর থেকে বাড়ি ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দু’রাকআত নামায পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
- নিজ গৃহে প্রবেশকালীন দুআ-
প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবেন। অতঃপর গৃহবাসীর উদ্দেশ্যে সালাম দিবেন। (বুখারী, মিশকাত- ৪১৬১, নূর ২৪: ৬১)
- মুসাফিরেরতাহারাত, সালাত (ক্বসরওজমা) ওসিয়াম–
১৫ দিনের কম সময় অবস্থানের নিয়তে নিজ আবাস থেকে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরে বের হয়ে নিজ এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে একজন ব্যক্তি মুসাফির বলে পরিগণিত হয়। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৪, জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ১/৪৩৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১০৫)।
- মুসাফিরের জন্য সালাত ক্বসর করার বিধান রয়েছে -চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত আদায় করবে (তবে ফজরের সুন্নাতসহ পড়তে হবে)।
- জরুরতবশত যোহরের সালাত দেরি করে এবং আসরের সালাত এগিয়ে একসাথে, এবং মাগরিবের সালাত দেরি করে ইশার সালাতের সাথে জমা করেও পড়তে পারবে।
- যানবাহনে আরোহন অবস্থায় ফরজ সালাতের সময় হলে যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে হবে। তবে তা সম্ভব না হলে বসা অবস্থায়ই কিবলামুখী হয়ে সালাত পড়তে পারবে।
- যানবাহনে অযু করা সম্ভব না হলে প্রয়োজনে তায়াম্মুম করতে পারবে। তারপরও সালাত তরক করা যাবেনা।
- বাড়ি থেকে অযু করে মোজা পরে সফরে বের হলে সফরকালে অযু ভেঙে গেলে পা ধোয়ার পরিবর্তে মোজার উপর মাসেহ করার সহজতা রয়েছে। (এই বিষয়ের ফতোয়া বিস্তারিত জেনে নিতে হবে)
- রমজান মাসে সফর করলে রোযা না রেখে পরবর্তী সময়ে ক্বাযা করলেও চলবে (তবে সফর কষ্টদায়ক না হলে সিয়াম রাখাই উত্তম)।