‘আইসবার্গ ফেনোমেনন’ ও দলীয় সন্ত্রাস

‘আইসবার্গ ফেনোমেনন’ বোঝেন? ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের একটা পরিভাষা। কোন একটা নির্দিষ্ট কেইসের যতগুলো ভিক্টিম রিপোর্টেড হয়, সেগুলো আইসবার্গের উপরের দৃশ্যমান অংশ, আর আনরিপোর্টেড কেইস এর থেকে অনেক অনেকগুণ বেশি, যেটা আইসবার্গের নিচের অদৃশ্যমান অংশ, ওগুলো গোনায় আসেইনা।

আজকে এই যে আবরার কিংবা বিশ্বজিৎদের নিয়ে কথা হচ্ছে, এত শোকগাথা রচিত হচ্ছে, এরা হচ্ছে আইসবার্গের উপরের ছোট্ট অংশের একটু, যেগুলো ভাইরাল হয়ে আমাদের কানে এসে পৌঁছেছে। যারা না মরে আধমরা হয়ে কোনরকমে বেচে থাকে, তাদের নিউজ কারও কানে পৌছেনা, উল্টো তারাই হল থেকে বহিস্কৃত হয়ে বাকি জীবন চুপ হয়ে থাকতে বাধ্য হয়। নিচের এই বিশাল অদৃশ্যমান অংশ গোণার বাইরে রয়ে যায়- যে প্রতিবাদী কণ্ঠগুলোকে শুরুতেই নিস্তব্ধ করে দেয়া হয়, ওদের কষ্টগুলো রাতের আধারে গুমরে কাদে, কারো কানেও পৌছে না। যে পরিবারগুলো শুধু ইসলামপন্থী হওয়ার অপরাধেই স্বামীহারা হয়, সন্তানহারা হয়, দিনের পর দিন গুম, খুন হয়ে হারিয়ে যায় যাদের স্বজন, ওদের ঘরের কান্নাগুলো সভ্য সমাজে পৌছেনা, দেয়ালে ঠেকে যায়।

এই আমি কলেজ লাইফ, ভার্সিটি লাইফে এরকম নিউজ দেখলে প্রচুর কাদতাম, কিন্তু দেখতে দেখতে গা সহা হয়ে গেছে, আবরার এর ছবিগুলো দেখে আমার কষ্ট লেগেছে প্রচণ্ড, কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পড়েনি।কারণ, এমন ভিক্টিম বাংলাদেশের ঘরে ঘরে, আনাচে কানাচে। ওদের কান্নায় বাংলার বাতাস ভারি হয়ে আছে অনেক আগে থেকেই, কিন্তু সে আওয়াজ আমরা শুনেও শুনিনি। অপরাধ মুখ বুজে সহ্য করতে করতে নিজের ঘাড়ে এসে চাপলে তখন আমাদের টনক নড়ে, তার প্রমাণ এই আবরার, যারা বাবা-মা আজীবন যাদের ভোট দিয়ে এসেছে, তাদের সোনার ছেলেদের হাতেই নিজের সন্তানকে খুন হতে হলো। আপনারা আর কতদিন নিজেকে ‘সেইফ’ মনে করে কানে আঙ্গুল দেবেন?

সরকারি ভার্সিটিগুলোতে নিজের কাছের ভাইদেরই যত গল্প শুনেছি, তাতে আমি নিশ্চিত, দ্বীনপন্থী, হক্বপন্থী কোন ছেলে মিনিমাম হেনস্থা থেকে শুরু করে শারীরিক নির্যাতন, হল বহিস্কারের থ্রেট পর্যন্ত খায়নি, এমন কেইস হাতে গোণা। এই জালেমশাহীর একদম মিনিমাম লেভেলের জুলুমের শিকার আমি নিজেই: আমি শুধু অনলাইনে একটু ইনফ্লুয়েনশিয়াল লেখা লিখি বলেই থার্ড ইয়ারে উনাদের সভাপতির ফোন থ্রেট খেয়েছি, আরবি পড়াই বলে সেকেন্ড প্রফে ফেইল করায়ে দেয়ার থ্রেট খেয়েছি, ফাইনাল প্রফে আমার নামের পাশে ইনফিনিটি স্টার বসিয়ে আমার বন্ধুপ্রতীমেরা পাচটা ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছে ফেইল করানোর জন্য। ওরা ষড়যন্ত্র করে, আল্লাহও করেন, আমাকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ ওদের বাবারও ‘বাবা’কে আমার নিজের সাপোর্টে নিযুক্ত করেছিলেন, একটা কিছুতেও ফেইল করাতে পারেনি, আলহামদুলিল্লাহ। সর্বশেষ ধাক্কা ছিলো ইন্টার্ন লাইফে, ঐ ছদ্মবেশী কুকুরগুলোর কয়েকটা আমার রোস্টারমেট ছিলো, প্রেগন্যান্সি নিয়ে এত অসুস্থ অবস্থায় আমি ডিউটি করেছি, অন্য মেয়েদের কিছু হলে ওরা ঝাপিয়ে পড়তো, আর আমার কষ্ট দেখে ওরা এতটুকু হেল্পতো করেইনি, উপরন্তু স্যারদের কাছে আমার নামে বদনাম করে আমার উপর অতিরিক্ত ডিউটি চাপিয়ে দিতো। নিরবে চোখের পানি ফেলেছি, মুখবন্ধ করে একটা একটা দিন পার করেছি, কিন্তু মাফ করে দিইনি।

আল্লাহ ওদেরকে, ওদের জাতভাইদেরকে হয় হিদায়াত দিন, অথবা দুই জাহানেই লাঞ্চিত করুন, অপদস্থ করুন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *