ভ্লাদিমির শহরে ইভান দিমিত্রিচ আকসিওনভ নামে একজন সফল ব্যবসায়ী বাস করতেন। তার যৌবনে এলোমেলো জীবনে অভ্যস্ত থাকলেও বিবাহ পরবর্তী জীবনে তিনি স্ত্রী এবং সন্তানদের সাথে সুন্দর জীবন অতিবাহিত করছিলেন। এক গ্রীষ্মে, ইভান তার পরিবারকে বিদায় জানিয়ে মেলায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তার স্ত্রী তাকে না যেতে অনুরোধ করেছিল, কারণ সে স্বপ্ন দেখেছিল যে, তার সাথে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটতে পারে। সে হেসে হেসে তার যাত্রা শুরু করল। তার যাত্রার অর্ধেক পথ যাওয়ার পর তিনি একটি সরাইখানায় থামলেন। যেখানে তার সাথে একজন ব্যবসায়ীর দেখা হল যাকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। সে ঐ ব্যবসায়ীর সাথে চা বিস্কিট খেতে খেতে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে গেলেন। ইভান পরের দিন ভোরে উঠে তার যাত্রা শুরু করে দিলেন। পঁচিশ মাইল ভ্রমণের পর, তিনি রাস্তার পাশে থামলেন তার ঘোড়াদের খাওয়ানোর জন্য। তখন তিনজন সৈন্য তার কাছে এলো, যারা তাকে সরাইখানায় কাটানো সময় এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল। এক পর্যায়ে ইভান তাদের কাছ থেকে জানতে পারল ঐ ব্যবসায়ীকে গলা কাটা অবস্থায় সরাইখানায় পাওয়া গেছে। তারা ইভানকে সম্ভবত সন্দেহভাজন বলে মনে করছেন যেহেতু তিনি লোকটিকে চিনতেন এবং সে রাতে সরাইখানায় তার পাশের রুমেই ছিলেন। । ইভান দৃঢ়ভাবে হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। এক পর্যায়ে তার ব্যাগ তল্লাশি করলে একটি রক্তাক্ত ছুরি পাওয়া যায়। ইভান তার নির্দোষতার প্রতিবাদ করলেও তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এমনকি তার স্ত্রীও অবাক হয়েছিলেন যে তিনি এ হত্যার সাথে জড়িত থাকতে পারেন কিনা, কারণ রক্তাক্ত ছুরির মত বেশ অকাট্য প্রমাণ তার বিরুদ্ধে ছিল। ইভান তার স্ত্রী এবং ছোট বাচ্চাদের বিদায় জানিয়েছিলেন এই বলে যে শুধুমাত্র স্রষ্টাই সত্য জানতে পারেন এবং শুধুমাত্র স্রষ্টাই প্রকৃত ক্ষমা প্রদান করতে পারেন। তার যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড হয়। জেলে মারাত্মকভাবে বেত্রাঘাত করার পর তাকে সাইবেরিয়ার খনিতে কাজ করতে পাঠানো হয়। সেখানে ছাব্বিশ বছরের কারাবাসের সময়, তাঁর চুল দাঁড়ি সব সাদা হয়ে গিয়েছিল, শরীর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল।
একদিন জেলখানায় মাকার সেমিওনিচ নামে নতুন এক কয়েদী আসলো। ইভানের সাথে তার বেশ ভালো পরিচয় এবং খাতির হয়ে যায়। মাকার সেমিওনিচকে ইভান তার কারারুদ্ধ হওয়ার পুরো ঘটনা শেয়ার করলো।এতে সেমিওনিচের মধ্যে কিছু অদ্ভুত আচরণ লক্ষ্য করা যায়। আরো কিছু বিষয়ের প্রেক্ষিতে ইভানের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ছাব্বিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধী সেমিওনিচ।তার জন্যই ইভান জীবনের সবকিছু হারায়। ইভান মনে মনে ক্রুদ্ধ হলেও ধৈর্য্যের সাথে সে পুরো বিষয়টি হ্যান্ডেল করে। কথার কথা ইভান আরো আবিষ্কার করে সেমিওনিচ দেয়ালের নীচে একটি গর্ত খনন করছে।সে ইভানকে হত্যা করার হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে দেয় যাতে সে পালিয়ে যেতে পারে, এমনকি সে ইভানকেও পালানোর অফার করে। ইভান জবাব দিয়েছিল যে , সেমিওনিচ তাকে অনেক আগেই হত্যা করেছিল, তাই তার পালানোর কোন ইচ্ছা নাই।
পরের দিন, সুড়ঙ্গের ব্যাপারটি সবার কাছে প্রচার হয়ে যায় এবং প্রতিটি বন্দীকে সুড়ঙ্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সকলেই বিষয়টি অস্বীকার করে। যখন ইভানকে জিজ্ঞাসা করা হয়, সে সেমিওনিচের বিষয়ে বলা উচিত কিনা সে সম্পর্কে দীর্ঘসময় নিজের সাথে বিতর্ক করে। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত সে চুপ থেকে সেমিওনিচের জীবন রক্ষা করে।
সেই রাতে, সেমিওনিচ ইভানের কাছে এসেছিল ছাব্বিশ বছরের যন্ত্রণার জন্য ক্ষমা চাইতে। সে ইভানকে বলে তুমি চাইলে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে সবকিছু স্বীকার করব। আমি তাদের কাছে স্বীকারোক্তি দিবো যে, ছাব্বিশ বছর আগে আমিই সরাইখানাতে ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছি এবং ছুরিটি তোমার ব্যাগে রেখে দিয়েছি।এতে তুমি জেলখানার এই অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি পাবে। ইভান তাকে ইশারায় বুঝানোর চেষ্টা করলো যে , মুক্তি পেলেও তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। বাড়ির জন্য তার মন আর কাঁদে না। সে জানেনা তার স্ত্রী সন্তানরা কোথায় আছে! জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় তার আর কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। ইভানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেমিওনিচ জেলারের কাছে সবকিছু স্বীকার করে ইভানের মুক্তির প্রার্থনা করলেন। কিন্তু হায় ভাগ্যের পরিহাস! যখন তার মুক্তির আদেশ আসে, ইভান ইতিমধ্যে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরকালে পাড়ি জমিয়েছিল।
আচ্ছা বলুন তো, কি দোষে ইভানের পুরো জীবনটা এভাবে তছনছ হয়ে গেলো? ইভান কি আর জীবন পাবে এই জীবনকে মেরামত করতে।
অন্যদিকে সেমিওনিচ অন্যায় করেও সারাটিজীবন আরামে কাটিয়ে একপর্যায়ে জেলে এসেছে। এখন এই পৃথিবীতেতো সুবিচার নিশ্চিত সম্ভব হয়নি কখনো হবেও না। তাহলে এভাবেই পৃথিবী থেকে সব শেষ হয়ে যাবে।
হিটলার কিংবা মুসোলিনীর মত মানুষগুলো এতো এতো মানুষকে হত্যা করেও এভাবে পার পেয়ে যাবে?
এই দুনিয়ার অসংখ্য রাজা বাদশা এক নায়করা মানুষের উপর নিদারুণ অন্যায় জুলুম অত্যাচার করেন ফাইভ স্টার হোটেল টাইপ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। অন্যদিকে হাজার হাজার সৎ যোগ্য মানুষ দুনিয়াতে কষ্টের সাথে থাকে শেষ দিনটি পর্যন্ত।