আসলেই কি তাই ?

বছর দুয়েক আগে এক ভাই কথায় কথায় বলছিল যে, মেয়েদের মাসজিদে যাওয়ার বিধান আলী (রা) এর সময় ইজমার মাধ্যমে রহিত (মানসুখ) হয়ে গেছে। তখন শুনে টাশকি খেলেও বিষয়টা কীভাবে এপ্রোচ করা উচিত বুঝতে পারিনি। গত সেমিস্টারে IOU তে “উসূল আল হাদীস” কোর্সটা পড়তে গিয়ে ঐ ভাইয়ের বক্তব্যের অসারতা একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেল। এই ধরণের কথা হয়ত অনেকেই ফেস করেন। “উসূল আল হাদীস” কোর্স থেকে আমি বিষয়টা এভাবে বুঝেছি-

উসূল আল হাদীসের একটি আলোচ্য বিষয় হল- ‘মুখতালিফুল হাদীস’। অর্থাৎ যখন একটি হাদীস আপাতভাবে অপর একটি হাদীসের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করে। এসব ক্ষেত্রে সল্যুশন হিসেবে জামহূর ‘উলামায়ে কিরাম পর্যায়ক্রমিক কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করেন যার একটি হল- নাসিখ-মানসুখ পর্যালোচনা। অর্থাৎ কোন বিধানটি অপর বিধানকে রহিত করেছে। একটি বিধান অপর একটি বিধানকে রহিত করতে হলে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এগুলো হল-

(১) যে বিধানটি রহিত হচ্ছে (মানসুখ) এবং যেটি রহিত করছে (নাসিখ) দুটোকেই লিগ্যাল এভিডেন্স হতে হবে। অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহর বিধান হতে হবে।

(২) নাসিখ কে মানসুখের চাইতে সমান পর্যায়ের অথবা অধিক শক্তিশালী হতে হবে। অর্থাৎ কুরআন কুরআনের আয়াতকে এবং হাদীসকে, মুতাওয়াতির হাদীস অপর একটি মুতাওয়াতির হাদীসকে এবং মুতাওয়াতির হাদীস আহাদ হাদীসকে রহিত করতে পারে।

(৩) নাসিখকে মানসুখের চেয়ে পরে নাযিল হতে হবে।

(৪) আক্বীদার মৌলিক বিষয়, উসূল কিংবা অতীতের কোন ঐতিহাসিক ঘটনা বা নবীদের কাহিনী মানসুখ হতে পারে না।

(৫) স্থায়ী কিংবা সাময়িক কোন বিধান মানসুখ হতে পারবে না। কারণ, সাময়িক বিধান নিজে থেকেই নির্দিষ্ট সময় পর বন্ধ হয়ে যাবে।

(৬) দুটো বিধানের মধ্যে আপাত বিরোধ থাকতে হবে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে জাম’আ (সমন্বয়সাধন) সম্ভব হবে না।

এখন, ঐ ভাইয়ের দাবীটি উপরোক্ত মূলনীতিগুলোর আলোকে বিশ্লেষণ করলে কী দাঁড়ায় ? সাধারণ মানুষের নামে না জেনে কথা বলা আর সাহাবীদের ব্যাপারে না জেনে কথা বলা এক জিনিষ নয়-এই বোধটা হারিয়ে গেলে সেটা দুঃখজনক।

৬ আগস্ট, ২০১৫

তিতুমীর হল, বুয়েট, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *