দৃশ্যপট ১: আল্লাহর নবী ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম স্বীয় স্ত্রী হাজেরা আলাইহাস সালামকে শিশুপুত্র ইসমাঈলসহ একাকী জনহীন মরুপ্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছেন। মা হাজেরা বার বার ছুটে এসে জিজ্ঞেস করছেন: হে ইব্রাহীম! আমাদেরকে এমন এক উপত্যকায় ছেড়ে দিয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সঙ্গী-সাথী আর না আছে অন্যকিছু? ইব্রাহীম নিরুত্তর। মা হাজেরা আবার জিজ্ঞেস করলেন: তবে কি আল্লাহই আপনাকে এই কাজের হুকুম করেছেন? ইব্রাহীম উত্তর করলেন ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর হাজেরা নিঃশঙ্কচিত্তে বললেন:
حسبي, لا يضيعنا.
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, নিশ্চয়ই তিনি আমাদেরকে বরবাদ করবেন না।” অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেছেন:
رضيت بالله.
অর্থাৎ, আমি আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট ও আস্থাভাজন।
দৃশ্যপট ২: বালক ইসমাঈল সবেমাত্র শিশুকাল অতিক্রম করে দৌড়ঝাপের বয়সে উপনীত হয়েছেন, পিতা ইব্রাহীম এবার আরও কঠিন একটি নির্দেশ পেলেন। পুত্রকে সোজাসাপ্টা ভাষায় জানিয়ে দিলেন: হে পুত্র! আমি স্বপ্নে তোমাকে যবেহ করতে দেখেছি। এএ ব্যাপারে তোমার মতামত জানাও। পুত্র ইসমাঈল নিঃশঙ্কচিত্তে উত্তর দিলেন: “হে আমার পিতা! এটি যদি আল্লাহর নির্দেশ হয়, তবে আপনি পালন করুন।
ستجدني إن شاء الله من الصابرين.
আল্লাহ চায়তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।”
ইসলামের প্রত্যেকটি রিচুয়ালের মধ্যে অবশ্যই অন্তর্নিহিত কিছু শিক্ষা থাকে। আমাকে যদি বলা হয়, ঈদুল আদহা কিংবা কুরবানীর ঈদ থেকে আমি নিজ জীবনের জন্য কি শিক্ষা নিতে পারি? আমি এককথায় বলবো: জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকা, হোক তা আমার কাঙ্ক্ষিত কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত। উপরোক্ত দুটি দৃশ্যপটের অবতারণা এ বিষয়টি বোঝাতেই।
লক্ষ্য করে দেখুন, একজন স্বামী তার সবচে প্রিয় দুজন মানুষ, স্ত্রী ও সন্তানকে নির্জন প্রান্তরে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছেন, স্ত্রী চিন্তিত হয়েছেন, কিন্তু যখনই জানলেন এটা আল্লাহর হুকুম, তিনি তার উপরেই সমর্পণ করলেন। বালক ইসমাঈল, এতটুকুন সন্তান, তাকে জবেহ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করা হয়েছে, আল্লাহর নির্দেশ জানতে পেরে এত কঠিন একটা বিষয়ও সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছেন, আল্লাহু আকবার! This is called Submission, they didn’t ask ‘why’, rather said: We heard & we obeyed….
আমাদের জীবনেও এমন অনেক অনেক পরিস্থিতি আসে, যেগুলোর সবকিছু আমাদের ইচ্ছানুযায়ী হয়না। আমাদেরকেও আল্লাহ পরীক্ষা করেন: জীবন, সম্পদ, অর্থ, ফলফসলের ক্ষতির সম্মুখীন করে। যেকোন ধরণের পরীক্ষায় আপতিত হলে এই পয়েন্টটা মাথায় ফিক্সড করে রাখা দরকার: আল্লাহ যেটা চেয়েছেন সেটাই হয়েছে, আর আল্লাহর সিদ্ধান্ত আমার চিন্তার সমরেখায় হোক আর বিপরীত হোক, অবশ্যই তার মধ্যে কোন না কোন কল্যাণ রয়েছে, আর সে কল্যাণ ধৈর্যশীলদের জন্যই।
এই বিশ্বাসটুকু শক্তভাবে হৃদয়ে ধারণ করা: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, আমার আল্লাহ আমাকে কোন অবস্থাতেই অপদস্থ করবেন না। পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, আমি ভেঙে পড়বোনা, হা হুতাশ করবোনা, অযথা আফসোস করে আল্লাহর নাখোশী কামাই করবোনা: ইনশাআল্লাহ তিনি আমাকে সর্বাবস্থায় ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। আর ধৈর্যশীলতার বিনিময় কেবলই ‘জান্নাহ’: আমাদের সালাত, আমাদের নুসুক সবকিছুর মাঞ্জীলে মাক্বসাদ তো ঐ একটাই…