উনারাও মানুষ ছিলেন…

রাসূলুল্লাহ, আম্বিয়া কিংবা সাহাবা আজমা’ঈনদের জীবনচরিত পড়ার শেষপ্রান্তে এসে আমরা অধিকাংশই এরকম একটা উপসংহার টানি:
আল্লাহর রাসূল বলে কথা, নবী বলেই এমন পেরেছেন, সাহাবাদের তুলনা কি আমাদের সাথে??

এবং এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই আমাদের সবচে’ বড় ভুল, আত্মশোধনের পেছনে বড় বাধা। আমরা অবচেতন মনেই এমনটা চিন্তা করি, উনারা আল্লাহর বিশেষ মদদপ্রাপ্ত ছিলেন, বিশেষভাজন ছিলেন, গায়েবী সাহায্য পেতেন বলেই এত বড় ত্যাগ তারা করতে পারতেন, অসম্ভব রকমের যুহদের উদাহরণ তারা দেখিয়ে গেছেন। অথচ আমাদের চিন্তাটা হওয়া উচিৎ ছিলো বিপরীত: উনারাও ‘রক্ত-মাংসের মানুষ’ ছিলেন: ক্ষুধা, তৃষ্ণা, প্রবৃত্তি, আহার, নিদ্রা, রাগ, ক্রোধ, অভিমান সবই তাদেরও ছিলো; কিন্তু কেবলমাত্র সত্যের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা আর আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয়ই তাদেরকে এতখানি ত্যাগ করাতে পেরেছিলো। আমাদের এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে: উনারাও ‘মানুষ’ ছিলেন, নিজের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে চেষ্টার পর হয়তো অসাধ্য পর্যায়ে গিয়ে নবী রাসূলদের আল্লাহ তা’আলা কিছু গায়েবী সাহায্য দিয়েছেন, তার আগ পর্যন্ত নিজের সবটুকু বিলিয়েই তারা করেছেন।

তারও চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে: আমরা যেই সাহাবাদের অনুসরণ করাকে অসাধ্য মনে করে নিজের অবস্থানে ফিরে যাই আর জান্নাতুল ফিরদাউসে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হই; সেই আল্লাহর রাসূল নিজেই, সেই সাহাবারাই জান্নাতের নিশ্চয়তা পেয়েও জাহান্নামের ভয়ে কেঁদে আকুল হয়েছেন, নিজেকে মুনাফিক মনে মনে করে অস্থির হয়েছেন, হাশরের ভয়াবহতার বর্ণনা শুনে অঝোরে কেঁদেছেন, সামান্য পাপ করে ফেলেও বছরের পর বছর তার প্রায়শ্চিত্তে কাটিয়েছেন, খাবারের হিসেব দিতে হবে তাই সামান্য বেশি খাবার দেখেই হাউ মাউ করে কেদেছেন, বড় বড় দালানকোঠা দেখে জান্নাতের বাড়ি হারিয়ে ফেলার আশংকায় বিছানায় মাথা দিতে পারেননি…. আর আমরাও সেই একই জান্নাতের আশা করি, সেই ডান কাতারে শামিল হওয়ারই চিন্তা করি, তাদের সাথেই হাশর নাশর হওয়ার প্রত্যাশা করি: আর ঈমান আমলের বেলায় মনে করে বসি: নাহ, তাদের মত কি আদৌ সম্ভব??

আসলেই সম্ভব না হয়তো, কিন্তু নিজেদের অবস্থান থেকে চেষ্টা করাতো সম্ভব। তা যদি না-ই পারি, তাহলে বরং চিন্তা করা উচিৎ: আমার দ্বারা জান্নাতের স্বপ্ন দেখা কি আদৌ সম্ভব??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *