বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ফার্স্ট ইয়ার বেশ আনন্দের, প্রথম কিছুদিন র্যাগ এর ভয় আর কিছুটা অচেনা অচেনা লাগলেও এরপর ক্যাম্পাস বেশ ভাল লাগতে শুরু করে, ক্লাশের পর কিছুটা আড্ডাবাজি আর এখানে-সেখানে ধুমধাম ঘুরাঘুরি-সব মিলিয়ে অনেকটা ‘কাঙ্খিত জীবন’ (অনেকের কাছে, সবার কাছে না) বলা চলে, বিশেষত যারা মনের মত ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে যায়।
এরপর সেকেণ্ড ইয়ারে আসে পরিচিতি বাড়ানোর জন্য এই সেই এসোসিয়েশন আর ক্লাবে কাজ করা, জুনিয়রদের দেখলে বড় ভাই টাইপের একটা ভাব নিয়ে কথা বলা, স্যারদের নিয়ে মজার মজার কমেন্ট করা আর বিভিন্ন সাবজেক্ট সম্পর্কে জুনিয়রদের ভুং-ভাং ডায়ালগ দেওয়া- এই করতে করতেই শেষ।
থার্ড ইয়ারে এসে ক্যারিয়ার এর চিন্তা উঁকি দিতে শুরু করে। বড় ভাইদের থেকে শোনা যায় IELTS, TOEFL, GRE, Paper আরও কি কি নাকি সব করা লাগে। টিউশনি থেকে আসার ফাঁকে কিংবা কোন অলস দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য এসব চিন্তা বড্ড জট পাকিয়ে মাথা ভারী করে তোলে, কিন্তু ঐ পর্যন্তই। “আরে হবে হবে” করতে করতেই এসে যায় ফোর্থ ইয়ার।
এবার সামনে পুরা “আন্ধা”। সময় সীমিত কিন্তু দেখা যায় এতদিনের অর্জন টেন্সটু জিরো। তখন খালি খোঁজাখুঁজি কোন কোম্পানি সিজি দেখে, কারা স্টার্টিং এ কত দেয়, কারা বাইরে যেতে দেয়না কিংবা কোথায় কার মামা-চাচা আছে আর কাকে কাকে নাকি অলরেডি ঐসব মামা-চাচারা একখান চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে দিয়েছে। কেউবা আবার দেখে কোন ভার্সিটির ডিমাণ্ড কী, কোনটার র্যাঙ্কিং কত ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এসব করতে করতেই এসে যায় শেষ মুহূর্ত-তখন দেখা যায় কোন এক ফ্রেণ্ড খুব স্মার্ট হয়ে চাকরির ভায়ভা দিয়ে শুকনো মুখে ফিরে আসছে আবার রাতে ফেসবুকে অনেকেই চাকরি/স্কলারশিপ পাওয়ায় “ফিলিং ওয়াণ্ডারফুল” লিখে স্ট্যাটাস দেয়। তবে বাস্তবতা হল সবাই একসময় জীবনে ‘সেটল’ হয়ে পড়ে, কেউবা এদেশে কেউবা বিদেশে।
এরপর দীর্ঘদিন একঘেয়ে চাকরির ফাঁকে একসময় বড় ভাইদের রি-ইউনিয়ন হয়। তারা বউ-বাচ্চা নিয়ে হোস্টেল জীবনের স্মৃতি ছুঁতে আসেন-আর নিজ রুমে এসে দেখান “এই যে এটা আমার বেড ছিল”, “আমাদের সময় আলমারি ছিল ঐখানে” ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর আবার সেই একঘেয়ে জীবনে ফিরে যাওয়া। এবং এভাবেই একসময় জীবনে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে মেলাতে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা-এইত জীবন।
১২ আগস্ট, ২০১৪