গতকাল ডেঙ্গুজ্বরাক্রান্ত কাজিনকে দেখতে পিজি হাসপাতাল গিয়েছিলাম।
১. যাওয়ার পথে ক্যান্টনমেন্টের ওখানে আমাদের রাস্তার অপোজিটে ফুলে সাজানো একটা লাশবাহী ট্রাক যাচ্ছে, উবারচালক জানালেন, এটা হু মু এরশাদ সাহেবের লাশ। অনেকক্ষণ গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইলাম আর ভাবছিলাম- সমস্ত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির শেষ পরিণতি মৃত্যু, এর মত অলঙ্ঘ্য আর নেই। এই দিন আমারও আসবে, হয়তো ফুলে ঘেরা থাকবেনা। অতঃপর ড্রাইভারের স্বগতোক্তি,
– আমাদের দেশের ক্ষমতাওয়ালাদের ঐ গাড়িতে না ওঠন পর্যন্ত গদির নেশা ছুটবে না।
– হুম, বটে!
২. ওয়ার্ডে রোগীর পাশে বসেছিলাম, পাশের বেডেই আরেক রোগীর আত্মীয়রা মোবাইলে একটা কি যেন ভিডিও দেখছে, মামার অতি উৎসাহী খাদেমা মোবাইলটা চেয়ে নিয়ে এসে আমাদের হাতে দিলো, দেখেন আন্টি, কি অবস্থা! চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা, কয়েকজন মিলে কি একটা বেধে যেন কোপাচ্ছে! খেয়াল করতেই দেখি মানুষ। ওমা! হাত পা বেধে উপুড় করে শুইয়ে দুইজন পশুমানুষ আরেকজন জ্যান্ত মানুষের গলায় গরু জবাই করার মত কোপাচ্ছে। মানুষটা মাথা উঠানোর চেষ্টা করছে আর গরুর মত গোঙাচ্ছে। আর দেখতে পারিনি, মেয়েটাকে বললাম, এসব দেইখোনা, ভয় পাবে….
আগে দেখতে পারতাম না এসব, কিন্তু এখন দেখতে দেখতে, বিশেষ করে লেটেস্ট ভাইরাল হওয়া রিফাত হত্যার ভিডিও দেখে ‘গরু কোপানো’র স্টাইলে মানুষ কোপানো দেখাটা ধাতস্থ(!!) হয়েছে অনেকটাই। শুধু চোখটা বন্ধ করে ভাবলাম:
জনপদে জুলুম যখন অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়ে চলে, সে জাতির উপর গযব তখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। দেবালয়ের লোকেরা ভাবছে, আগুন লেগেছে নগরে, আমাদের কী? আগুন ছড়িয়ে গেলে তা দেবালয়ও এড়ায় না, এ কথা বোঝার বেশি দিন বাকি নেই আর!
৩. ওয়ার্ড ভরা রোগী, তার মধ্যে বেশিরভাগই ডেঙ্গু। এই ডেঙ্গু আমাকে খুব ভাবাচ্ছে এবার। ডেঙ্গুজ্বর আগেও ছিলো ঢাকায়, কিন্তু এবার মহামারীর রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন ঢাকায় গড়ে ১৫০ এর মত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুবাহক এবার স্ট্রেইন বদলে ফেলেছে, তাতে করে যারা এর আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকেরই দ্বিতীয়বার ভিন্ন স্ট্রেইনের মশার আক্রমণে ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার (DHF), ডেঙ্গু হিমোরেজিক শক (DHS), ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (DSS), মাল্টি অর্গ্যান ফেইল্যুর (MOF) পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছে, অনেকে মারাও যাচ্ছেন। গত ১ মাসে ১৬০০ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে মৃত্যুর হারও কম নয়। কি ভয়ংকর ব্যাপার! আল্লাহ তা’আলা যালেম নমরূদকে শায়েস্তা করেছিলেন ছোট্ট একটি মশা দিয়ে। আবারও আমাদেরকে সেই একই পতঙ্গ দিয়ে গযব পাঠাচ্ছেন না তো? কিংবা বড় কোন গযবের পূর্বাভাস হিসেবে, যেভাবে পাঠানো হয়েছিলো ফেরাউনের ক্বওমের উপর? ভয় হয়, খুব ভয় হয়। যে জাতি গযবের শিকার হয়, সে জাতির জালেমরাই শুধু মরেনা, মরে মজলুমরাও।
আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। শেয়াল-শকুনে ভরা শ্বাপদসংকুল এই দেশটাকে আবারও মানুষের বাসযোগ্য বানিয়ে দিন।