কঠিনতম এক সত্যের মুখোমুখি…

দু’মিলিমিটার ব্যাসের একটি শিরা, ইঞ্জুরি হয়ে ব্লিডিং শুরু হয়েছিলো, থামানো যায়নি। রানিং ব্লাড, হার্টসল, এড্রেনালিন, ডোপামিন, ডোবিউটামিন, সিপিআর সব ম্যানেজমেন্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শেষরাতের দিকে মারা যায় রোগীটি….

রাত দেড়টায় লাস্ট ফলো আপ দিয়ে আইসিইউ ডাক্তারের কাছে হ্যান্ডওভার দিয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলাম, সক্কালবেলা ফজর পড়েই খোঁজ নিতে ছুটলাম, গেট তালাবদ্ধ। ফ্লোরে আধোঘুম দু’আদমিকে ডেকে জিজ্ঞেসিলাম: ICU এর কোন রোগী মারা গেছে কি?
– জ্বি ম্যাডাম, মাঝ রাইতে দুইজন মারা গ্যাছে, লাশ নিয়া গেছে রাইতেই।
– রোগীর ছেলের এক হাতে একটা আঙ্গুল, সে-ই কি?
– হ হ, হেই রোগীই।

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি’ঊন। প্রভাতের সূর্য তখন উঠি উঠি করছে, হাসপাতালের করিডোর ভরা সারি সারি ঘুমন্ত মানুষ, এদিক ওদিকে ভাঙাচোরা খাটে কম্বল মুড়ি দিয়ে জবুথবু হয়ে শুয়ে আছে কেউ, দূরে মাদুর বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়েছেন এক শ্মশ্রুমণ্ডিত ভদ্রলোক(এ পাড়ায় এমন দৃশ্য বিরল, দেখলে তাই আপন আপন লাগে), আকাশটা কালচে থেকে লালচে হচ্ছে, জেগে ওঠা একঝাক পাখির কিচিরমিচির: প্রতিদিনকার ভোর, স্তব্ধ হয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখছি:

কিসের অহংকার মানুষের? কিসের এত বিবাদ-বিভেদ? এতটুকু একটা ভেইন অক্ষম হয়ে গেলে আর কথাটি বলার শক্তিও থাকেনা, সেই মানুষের কিসের গর্ব, কিসের বড়াই? এত বুদ্ধি মানুষের, অথচ মৃত্যুর ডাক এলে সে নিজ তাগিদে গাটের পয়সা খরচ করেই মৃত্যুস্থানে এসে উপস্থিত হয়। তারপর! অজান্তে অপ্রস্তুতভাবেই আপতিত হওয়া অসীম অন্ধকার, কঠিনতম এক সত্যের মুখোমুখি, যারচে সত্য আর নেই….

“অতঃপর যখন রূহ পৌঁছে যায় কণ্ঠদেশে। তোমরা তখন কেবলই তাকিয়ে থাকো(তা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা তোমাদের)।….. কেন তোমরা রূহকে তখন ফিরিয়ে আনোনা, যদি তোমাদের দাবি সত্যই হয়ে থাকে?” [সূরা ওয়াক্বিয়াহ: ৮৩-৮৭]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *