ক্ল্যাসিক্যাল কন্ডিশনিং

ক্লাসিক্যাল কন্ডিশানিং সম্পর্কে বলেছিলাম না একবার? মনোবিজ্ঞানী প্যাভলভ একবার একটি পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি দেখলেন যে একটা কুকুরের সামনে যতবার খাবার আনা হয়, ততবারই তার জিভে স্যালাইভেশন হয়। এখানে খাবার এমন একটা স্টিমুলাস, যেটা কুকুরের মধ্যে অজান্তেই একটা রেস্পন্স তৈরি করে, সেটাই স্যালাইভেশন। তো উনি ভাবলেন, রেসপন্স তৈরি করেনা এমন কোন স্টিমুলাস দিয়ে রেসপন্স তৈরি করা যায় কিনা? যেমন: ঘণ্টা(বেল) এমন একটা জিনিস, যেটা শুনলে কুকুরের কখনোই জিভে জল আসবে না। তো কি করা যায়? উনি এই ঘণ্টাটাকেই কুকুরের খাবারের সাথে পেয়ার করলেন, মানে যখনই ঘণ্টা বাজান, তখনই খাবার দেন। এরকম কিছুদিন করার পর একসময় দেখা গেলো, ঐ কুকুরটির সামনে যদি ঘণ্টা বাজানো হয়, খাবার না দিলেও তার জিভে স্যালাইভেশন হচ্ছে, কারণ সে ভাবছে এটার সাথেই খাবারের সম্পর্ক। এই কন্ডিশনিংটাই ক্লাসিক্যাল কন্ডিশনিং।

তো এটার একটা প্র‍্যাক্টিক্যাল (কিঞ্চিৎ অশালীন) উদাহরণ হচ্ছে: পশ্চিমা ভোগবাদী/পুঁজিবাদী সমাজ এই পেয়ারিং সিস্টেমটাকেই কাজে লাগাচ্ছে এডভার্টাইজিং এ। ঐ যে মনে পড়েনা, একটা কারের বিজ্ঞাপন দেয়া হয় যেখানে কারের সাথেই একটা নারী দাড় করানো? (বিজ্ঞাপন টা কার, কারের না নারীর?) আসলে এখানে ঐ কারকে নারীর সাথে পেয়ারিং করে ক্রেতার কাছে কন্ডিশনিং করা হয়েছে, নারীর প্রতি যাদের দুর্বলতা আছেই, ঐ নারীর সাথে সাথে অজান্তেই কারটার প্রতিও একটা আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে এবং ক্রেতা জানেও না যে বাজারে গিয়ে তার নিজের অজ্ঞাতেই ঐ বিজ্ঞাপনের কারটিই আগে পছন্দ হবে। অদ্ভূত না? চিন্তা করে দেখুন, ক্রিকেটফ্রিকদের কন্ডিশানিং করার জন্য কি করা হচ্ছে? শাকিব কিংবা মাশরাফির হাতে বিজ্ঞাপনযোগ্য কিছু একটার মডেল বানিয়ে দেয়া হচ্ছে, দর্শক শাকিবকে পছন্দ করার সাথে সাথে ঐ প্রোডাক্টটিকেও অবচেতনেই পছন্দ করে বসছে…..

এবারে ভালো এক্সাম্পল দিই, সব থিওরিরই পজিটিভ & নেগেটিভ প্রয়োগ আছে, আমরা নেগেটিভটা বাদ দিবো, পজিটিভ টা নিবো ইনশাআল্লাহ। একটা বাচ্চা যদি স্কুলে গিয়েই টীচারের কাছে অপমানিত হয়, বকা খায়, তাহলে স্কুলের সাথেই তার অপমান ফিলিংসটা পেয়ারিং হয়ে যাবে, ফলে পরবর্তীতে সে স্কুলের কথা চিন্তা করলেই ঐ অপমানের কথা মনে করবে & স্কুলফোবিয়া ডেভেলপ করবে। আবার বিপরীতটাও করা যায়। স্কুলে কিংবা ক্লাশরুমে খেলনা কিংবা তার পছন্দের কিছু যদি দেয়া হয়, তার স্মৃতিতে স্কুলের কথা মনে হলেই খেলনার কথা মনে হয়ে একটা পজিটিভ ফিলিংস কাজ করবে। ফলে সে স্কুলে পড়াশোনা করালেও ঠিক অতটা ভীতিকর মনে করবেনা। মজার না ব্যাপারটা?

এমন একটা গল্প শুনেছিলাম কোন সাহাবিয়া কিংবা কোন দ্বীনি মায়ের, যিনি তার বাচ্চাকে সালাতে আগ্রহী করানোর জন্য মুসল্লার নিচে ঐ বাচ্চার পছন্দের মিষ্টান্ন লুকিয়ে রাখতেন, পরে কোন একদিন মিসিং হয়ে গেলে সেটা ফিরিশতারা এনে রেখে দেন(জানিনা ঘটনা সহীহ কিনা), যাহোক এখানেও কিন্তু বাচ্চার পছন্দের জিনিসের সাথে অপছন্দের ব্যাপারটিকে পেয়ার করা হয়েছে, এবং সেটাতেই বাচ্চা একসময় অভ্যস্ত হয়ে গেছে….

ব্যাপারটা সুন্দর না? এবার মিলিয়ে দেখুন তো, কোন কোন পজিটিভ ক্ষেত্রে আপনি থিওরিটি কাজে লাগাতে পারেন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *