আল্লাহ প্রত্যেক প্রানীকেই তার স্ব স্ব স্থানে, স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে সেরা করে  পাঠিয়েছেন। হাতি,বাঘ গাধা সবাই তার তার স্থানে তার তার বৈশিষ্ট্যে সেরা। একবার জনৈক পশুপ্রেমিক পশুদরদী আমাকে প্রশ্ন করেছিল আচ্ছা তোমাদের হাদীসে তো আছে যে ঘরে কুকুর ঢুকে সে ঘরে ফেরেশতা ঢুকে না। আমি বললাম হ্যাঁ।

-কিন্তু এতে কি একটা সৃষ্টিকে ছোট করা হলনা?

-অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং পশুদরদীমূলক প্রশ্ন! অন্য একটি হাদীসে আছে একবার বনী ঈসরাঈলদের এক পতিতাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন শুধুমাত্র তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ানোর জন্য। বিষয়টা আসলে যে রকম ব্যাখ্যা করেছেন। আল্লাহ প্রত্যেকটা প্রানীকে একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এবং সে স্বভাব অনুযায়ী আচরনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা হাদীসে আছে এতে দুঃখে বুক চাপড়ানোর মত কিছু হয়নি। আচ্ছা কারো গায়ে আপনার পা লেগে গেলে সরি বলেন কিন্তু হাত লাগলে সরি বলেননা। কিংবা কেউ আপনাকে কোন খাবার ডান হাতে দিলে আপনি খুশি হন কিন্তু বাম হাতে দিলে আপনার অখুশি হওয়ার কারন কি? দুটো হাতই তো আল্লাহর দেয়া।

[সেদিনের মত আলোচনা সেখানেই সমাপ্ত হয়েছিল]

গাধা প্রানীটির পরিশ্রম করার ক্ষমতা অনেক ভাল কিন্তু তারপরো কোন মানুষকে গাধা বললে সে রেগে গিয়ে হেরে যায়। হয়তোবা তখন তার মধ্যে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ হওয়ার গর্ব কয়েকগুন বেশি পরিমানে জাগ্রত হয়। ছোট বেলায় শিক্ষক কিংবা অভিভাবক সম্প্রদায় থেকে গাধা লকব পায়নি এমন ইনসান খুব কম। যদি গাধা সম্পর্কে যতদূর জেনেছি গাধারা যথেষ্ট  intelligent।

জনৈক কবি বলেছিলেন-

“যদিও ঈসার গাধা যায় মক্কা ভূমি

হেথাও থাকবে গাধা জেনে রাখ তুমি”

অর্থাৎ ঈসা (আঃ) এর মত একজন মহান নবীর গাধা হয়েও এবং মক্কার মত পবিত্র জায়গায় গিয়েও গাধা গাধাই থাকবে। পবিত্র মক্কার দর্শন দ্বারা এ গাধার কোন উপকার হবেনা।

আমাদের মুসলিমদের অবস্থা এ গাধার থেকে খুব একটা ভাল বলে আমার মনে হয়না। আল্লাহ হজ্জের মত এমন একটি ইবাদত আমাদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন,যা অন্য কোন জাতির নেই। তাদের হয়ত ছোট খাট একজায়গায় জড় হওয়ার অনুষ্ঠান থাকতেপারে কিন্তু এভাবে পুরো বিশ্ব থেকে এসে একসাথে মহান স্রষ্টার দেয়া ফরয ইবাদত আছে বলে আমার জানা নেই। এ হজ্জের আনুষ্ঠিকতা গুলোর কথা একবার চিন্তা করলে বুঝা যায় কি মহা নেয়ামত আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। পুরো বিশ্বের মুসলিমদের একসংগে একই সূত্রে বাঁধার জন্য এর চেয়ে সুন্দর কিছু হতেই পারেনা। এ হজ্জে আমাদের যে ট্রেনিং দেয়া হয় একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলে বিস্মিত নয়া হয়ে পারা যায়না।

আলহামদুলিল্লাহ! সকল প্রশংসা সে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার।

কিন্তু হৃদয়ের গভীরে রক্তক্ষরন অনুভব করি যখন দেখি এ হজ্জের যথাযথ ফসল আমরা ঘরে তুলতে পারছিনা।আল্লাহ যে ট্রেনিং আমাদের দিচ্ছেন সে ট্রেনিংটা আমাদের কোন কাজেই আসছেনা। তাই কেউ যদি আমাকে বলে “এ হজ্জ তো নিছক টাকা পয়সা অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়”, তখন আমি তার কোন উত্তর খুঁজে পাইনা।

শুনেছি আমাদের দেশের কিছু বুদ্ধিজীবী পরজীবী ফজরের আযানকে ঘুমের ব্যাঘাত বলে আখ্যায়িত করে। আমি তাদের সাথে অনেকটুকুই একমত। মুয়াজ্জিনের আযান শুনার পর মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ সাড়া দেয়,বাকীরা পরম আনন্দে নাকডেকে ঘুমায়। এ আযান যেহেতু মুসলিমদের জীবন যাপনের পদ্ধতির উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি তাই কেউ যদি আযানকে এক বিরক্তির কারন বলে আখ্যা দেয় এতে আমি খুব বেশি অবাক হইনা,বরং অনেক ক্ষেত্রে আমি তার সাথে একমতই পোষন করি।

আমাদের পুরো জীবন চলছে কাফির মুশরিকরা যেভাবে দেখিয়েছে সেভাবে,বস্তুবাদীরা যেভাবে চেয়েছে সেভাবে,সেখানে  লেজুড় ধর্ম হিসেবে ইসলামকে গ্রহন করার ফায়দা কি? আমার সারাদিনের অন্যান্য কাজকর্মের সাথে এ ইসলাম নামক ধর্মটার অনুশাসন খুব বেশি বেখাপ্পা। কারন ইসলামকে আমি রেখেছি মসজিদে সেখানে গেলেই কেবলমাত্র আমার আল্লাহর বিধান মানার প্রশ্ন আসে অর্থনীতি,সমাজনীতি,রাজনীতিতে আল্লাহর আইনের উপর আমরা ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছি। এসব ক্ষেত্রে আল্লাহকে স্মরন আমাদের জন্য হারাম করে নিয়েছি।ছোট বাচ্চাটি যখন দুদিন পরে প্রশ্ন করবে “সাড়ে তেইশ ঘন্টা চলি আমি এক রীতিতে আর আধ ঘন্টা চলি আমি এক রীতিতে এটা খুব বেশি বেমানান নয় কি? আমি তখন চুপ করে থাকতে বাধ্য হব, কারন এ প্রশ্নের যৌক্তিকতা যথেষ্ট।

হজ্জের প্রত্যেকটা অংশ আমাদের কিসের কিসের ট্রেনিং দিচ্ছে সেটা নিয়ে কথা বলতে গেলে হয়ত আমার এ আর্টিকেল আরো কয়েকপৃষ্টা যাবে,তাই আমি সে দিকে যাচ্ছিনা। হজ্জের সবচেয়ে কমন যে বিষয়টির সাথে পরিচিত সেটা হচ্ছে

“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,লাব্বাইক লা শারীকালাকা লাব্বাইক।ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা লাকাওয়াল মুলক লাশারীকালাকা”

এ দোয়াটি এত বেশি পড়া হয় যা শুধু হাজীরা নয় সারাবিশ্বের মুসলিমদের আলোড়িত করে। কিন্তু এ দোয়ার অর্থ কি?

আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাজির নিশ্চয় সকল প্রশংসা তোমার, সকল নে’য়ামত তোমারি আর সকল সাম্রাজ্য ও তোমার। তোমার কোন শরীক নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *