দরজা খুলতে কিছুটা দেরী হল। আমিন সাহেব মনে মনে কয়েকটি শব্দ আওড়াতে আওড়াতে কিছুটা রাগান্বিত হয়ে ঘরে ঢুকলেন। অফিসের বিভিন্ন ঝামেলা, জ্যাম মোটামুটি প্রতিদিনি তার মেজাজকে খিটখিটে করে তোলে। ড্রয়িং রুমের দিকে তাকাতেই দেখেন তার পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে তুলি র্যাপিং পেপারে একটা প্যাকেট মোড়াচ্ছে। এখানে সেখানে পেপারের টুকরো পড়ে আছে। বাবাকে দেখতেই ‘হাই বাবা’ বলে মিষ্টি হাসি দেয়।
খিটখিটে মেজাজ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বিষয়কেও অসুন্দর করে তোলে। ঘর আগোছালো করার জন্য আমিন সাহেব তার মেয়েকে বকাঝকা করে টেবিলের উপর রাখা মগ হতে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের রুমের দিকে গেলেন।
পরদিন সকাল……
আমিন সাহেবের বালিশের পাশে র্যাপিং পেপারে মোড়ানো সুন্দর একটি প্যাকেট। উপর লেখা- ‘আবুর জন্য’
শিশু শ্রেনীতে পড়া তুলি এখনো ‘আব্বু’ বানান শিখেনি। আমিন সাহেব তার গতকালকের আচরণের জন্য কিছুটা লজ্জিত হলেন। প্যাকেট খুলে দেখেন ভেতরে কিছুই নেই। তিনি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে তুলিকে ডাকলেন- আদরের স্বরে বললেন, “এভাবে খালি প্যাকেট কাউকে দিতে নেই। মানুষ মনে কষ্ট পাবে… আবার তুমি একটা বানান ভুল করেছ… ”
তুলি মাথা নিঁচু করে বসে আছে। গতকালকের বকাঝকার রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যখন বুঝল আব্বু আর কালকের মত রাগান্বিত অবস্থায় নেই, তখন একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল “আব্বু, গতকাল আমাদের স্কুলের মিস বলেছে সবাইকে বেশী বেশী উপহার দিতে তাই আমি তোমাকে উপহার দিয়েছি।
-কিন্তু আম্মু, বক্সটাতো খালি।
-না আব্বু। খালি না। আমি এখানে গুনে গুনে একশটা আদর রেখেছি। তারপর এর মুখটা বন্ধ করে দিয়েছি…
স্বর্গীয় অনুভূতি দোলা দিয়ে গেল আমিন সাহেবের অন্তরে। গতকালকের ব্যবহার আর কিছুক্ষন আগে মেয়েকে বিজ্ঞোচিত জ্ঞান দান করার জন্য লজ্জিত হলেন। তিনি মেয়েকে কোলে নিয়ে দুই গালে,কপালে, মাথায় গুনে গুনে একশটা আদর দিলেন।
আমিন সাহেবের স্ত্রী রুমে ঢুকলেন, “বাপ মেয়ের খাতির হয়ে গেছে অলরেডী। চল চল…..
টেবিলে নাস্তা দিয়েছি…
মামনি! তোমার স্কুলের ড্রেসটা পরে নাও।……
গল্প কিন্তু শেষ!
জনৈক গুণীজন বলেন- “সর্বশক্তিমান স্রষ্টা প্রত্যেক মানুষকে একটা করে গিফট বক্স দিয়েছেন। দুঃখের বিষয় হল একটা বিরাট অংশ এ বক্সটা খুলতে পারেনি বা খোলার চেষ্টা করেনি। আর অনেকে গিফট বক্সটা খুলেছে কিন্তু গিফটটাকে উপলব্ধি করতে পারেনি। স্রষ্টা তাঁর স্রষ্টাসুলভ গিফটই তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে দিয়েছেন … সীমাবদ্ধ জ্ঞানের মানুষেরা বার বার সেটা উপলব্ধিতে আনতে ব্যর্থ হয়েছে”।