বাচ্চারা খাতার পাতায় দাগ টেনে পেন্সিল দিয়ে একটা খেলা খেলছে, কোন একটা নাম ধরে ডাকছে, কখনো অন্ধকার ঘরে বা রাত জেগে খেলছে- খুব নিরীহ একটা খেলা ভেবে আমরা অভিভাবকেরা পাত্তাই দিচ্ছিনা। অথচ এই জেনারেশনের বাচ্চাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত এই খেলা, যেটা ওরা ফান হিসেবে খেলে, আসলে জ্বিন ডাকার খেলা, Oija Board/প্ল্যানচেট টাইপের। শুধু স্কুল না, মাদ্রাসার স্টুডেন্ট, দ্বীনি পরিবারের বাচ্চারাও রেগুলার খেলছে। ওদেরও দোষ না, ওরা আসলে ভয়াবহতা না বুঝে ফান হিসেবেই খেলছে।
আমাদের জেনারেশনে এই খেলাগুলো আমাদের দেশে প্রচলিত ছিলোনা বলে আমরা অভিভাবকেরা অনেকে বুঝতেই পারিনা, ফান করতে করতে বাচ্চারা আসলে জ্বিনকে ডাকছে, নাউযুবিল্লাহ! আমার আগের পোস্টের কমেন্টগুলো দেখেন, বাচ্চাদেরই বিবৃতি:
– রাত ১২ টার পর খেলতে হয়।
– রাত ২/৩ টায় রুম অন্ধকার করে খেলতে হয়।
– চার্লি বলে একজনকে ডাকা হয় (যেটা আসলে জ্বিন)।
– কোনো কোনো খেলায় মোমবাতি জ্বালানো, পুতুল সাথে নিয়ে অন্ধকার ঘরে খেলা, আয়নার সামনে গিয়ে ডাকা…এরকম আরও হরর হরর বিষয় আছে।
এই বিষয়গুলো বাচ্চারা জাস্ট ফান বা কিউরিসিটি হিসেবেই খেলছে। ওরা আসলে জানেই না, জ্বিন-যাদুর জগৎ কতটা ভয়ংকর, নোংরা, ঈমানবিধ্বংসী। ওরা যে এভাবে খেলছে, হয়তো জ্বিন এসে হাজির হচ্ছেনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই (আল্লাহর রহমতে); কিন্তু ওদের যে পড়াশোনায় অমনোযোগ, দ্বীনি কাজে অনাগ্রহ, দ্বীনি জ্ঞানার্জনে কাঠিন্য, মোবাইলের ভয়ংকর নেশা… এগুলোর পিছনে শয়তানের পরোক্ষ প্রভাব যে অবশ্যই আছে, তাতে তো কোন সন্দেহই নেই।
এবার আসি বাস্তব অভিজ্ঞতার বিষয়। আমার ভাইয়া কিছুদিন একটা রুকইয়া বিষয়ক বই লিখেছে এবং রুকইয়া ট্রেনিংও দিচ্ছে, অনেকেই জানেন হয়তো। কিছুদিন আগে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে এমনই এক অভিভাবক (দ্বীনি) আসেন। সংগত কারণেই পরিচয় দিচ্ছিনা। বাবা-মা দুজন জব করেন, বাচ্চারা বাসায় বসে এসব ফানি গেইম খেলে আবার টিকটকে আপ্লোড করে। এমনই একদিন ওরা এরকম একটা হরর চ্যালেঞ্জ নেয় ভাইবোনেরা মিলে। এভাবেই কিছু তন্ত্র মন্ত্র পড়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে অন্ধকারে ওরা ইফরিত/জ্বিনকে ডাকে, ‘জাস্ট ফান’ হিসেবেই টিকটক করছিলো ওরা। এর মধ্যে হঠাৎ ওদের ঘরের ফার্নিচার নড়ে ওঠে, কিছুক্ষণ পর আবার নড়ে কিছুদূর সরেও যায়। এইবার ওরা বুঝতে পারে আসলেই জ্বিন হাজির হয়েছে, ভয়ে চিৎকার করে ওরা গেইম অফ করে দেয়। এরপর থেকে বাসায় বিভিন্ন ভৌতিক ইভেন্ট ঘটতে থাকে।
এর কয়েকদিন পরের ঘটনা। ওরা একদিন ঘরে ঢুকে দেখে, পুরো বাসায় হাটু পানি। এই পানির কোন সোর্স নাই।
আর কয়েকদিন পর ওদের বাসায় আগুন ধরে, সেই আগুন থেকে পুরো বাড়িতে আগুন ধরে যায়। সেই আগুনেরও কোন সোর্স নাই। ওদের ঘর পুড়ে গেলেও ওদের কারও ফিজিক্যাল ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।
অবস্থা যখন এই পর্যায়ে, কোনোভাবেই কোন সমাধান হচ্ছেনা, তখন কোনোভাবে তারা ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করে। আলহামদুলিল্লাহ, তারা এখন রুকইয়া করছে এবং অবস্থা ভালোর দিকে। (এই ঘটনার ভিডিও, বাড়ি পোড়ার ছবি আমি নিজেও দেখেছি)
এইবার তাহলে আন্দাজ করেন, বাচ্চারা ফান করতে করতে যদি সত্যিই জ্বিনের পাল্লায় পড়ে যায়, কী পরিমাণ বিপদ ডেকে আনবে নিজের হাতে। জ্বিন তো আমাদের খেলা বা ফানের বিষয় না। কুরআনে যাকে আমাদের প্রকাশ্য শত্রু বলা হয়েছে, কুরআন-হাদিসে আমাদের সকাল সন্ধ্যায় হেফাজতের আমল করতে বলা হয়েছে, প্রত্যেকটা কাজে শয়তান থেকে হেফাজতের জন্য দুয়া শেখানো হয়েছে আমাদেরকে। অথচ এই প্রজন্মের বাচ্চারা বুঝে/ না বুঝে সেই শয়তানকে নিজের ঘরে ইনভাইট করে আনছে। যে শয়তান জ্বিনের উদ্দেশ্যই মানুষকে জাহান্নামে নেয়া, সেই শয়তানকে বাচ্চারা খেলার সঙ্গী বানিয়ে নিচ্ছে।আল-ইয়াযু বিল্লাহ। আল্লাহ আমাদের বাচ্চাদের হেফাজত করুন।
অভিভাবকদের করণীয় কী?
– বাচ্চাদের মুখে নতুন কোন খেলা বা নতুন কোন বিষয়ের নাম শুনলে আমরা সেটা নিয়ে নিজেরা একটু জানার চেষ্টা করবো, ওদের কাছে জানতে চাইবো, AI এর হেল্পও নিতে পারি।
– জ্বিন শয়তান সংক্রান্ত কোন খেলা যেন ফান হিসেবেও না খেলে, তাদের বন্ধুরা খেললেও যেন ওরা তাদেরকেও বিষয়টার ভয়াবহতা বুঝিয়ে বলে বা টীচারকে জানায়। শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু, হাদিস কুরআনের রেফারেন্স দিয়ে বাচ্চাদের জেহেনে এটা ঢুকিয়ে দিবো।
– বাচ্চাদেরকে সকাল-সন্ধ্যার হেফাজতের আমলগুলো নিয়মিত করাবো, মুখস্থ করিয়ে দেবো, নিজেরাও করবো। বাসায় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রিন্ট করে বা স্টিকার টাঙিয়ে দিতে পারি যাতে বাচ্চারা সেটা দেখে আমল করতে পারে।
আরেকটা বিষয় আমি আগের পোস্টের কমেন্ট থেকে খেয়াল করলাম: কিছু অভিভাবক সন্তানের কাছে না জেনেই বলে দিচ্ছেন- আমি জানিনা, আমার বাচ্চারা জানার প্রশ্নই আসেনা! সত্যিই, আপনারা এমন চিন্তা লালন করেন? বাচ্চারা কি শুধু প্যারেন্ট থেকেই শেখে? ডিভাইস ইউজ না করলেই ফিত্নার সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়? বন্ধু বান্ধব কিংবা আশেপাশ থেকে এমন অনেক কিছুই বাচ্চারা জানবে/শিখবে, যেটা তারা ঘরে কখনোই শোনেনি, দেখেনি- এটাই ন্যাচারাল লার্নিং প্রোসেস। প্লিজ, এই সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে বাস করে কখনোই NMK syndrome (Not My Kid Syndrome) এ ভুগবেন না। ‘আমার বাচ্চা করতেই পারেনা’ এমন ভাবনাটাই ভুল। বরং বিষয়টা নিয়ে উত্তম পদ্ধতিতে প্যারেন্ট-চাইল্ড কনভার্সেশন করা, যেন বিষয়টা নেগেটিভ হলে বাচ্চারা নিজেই সরে আসতে পারে।
