وَالْعَصْرِ –
إِنَّ الإِنْسَانَ لَفِيْ خُسْرٍ-…
“নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ব্যতীত যারা……” [সূরা আসর]
দ্বীনের কাজ বলেন, দুনিয়ার কাজ বলেন, সময়ের সদ্ব্যবহার ছাড়া কিছুই হয়না। আর যারা সময়ের হিসেবে গাফেল, তারাই ক্ষতিগ্রস্তদের কাতারে শামিল হয়ে যায়। প্রতিদিনের ২৪ টি ঘণ্টা, সপ্তাহের ২৪*৭ ঘণ্টা কিভাবে কেটে যাচ্ছে, আমরা বেশিরভাগই জানিনা। দিন শুরু হলেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু পরিকল্পনাগুলো মাথাতেই থাকে, খাতাতে ওঠেনা, জীবনে বহুদূর। তো সময়ের অপব্যবহার কীভাবে হচ্ছে, তা জানতে হলে আমাদের সারাদিনের টাইমের লগ বানাতে হবে।
Time Log:
কিভাবে বানাবেন? সকাল থেকে শুরু করে ২৪ ঘন্টার প্রতি আধাঘণ্টায় আপনি কী করেন, তা গুণে গুণে একটা চার্টে লিখুন। এটাই আপনার ‘টাইম লগ’। এই কাজটি করতে পারাই টাইম ম্যানেজমেন্টের প্রথম ধাপ।

Effective Time Count:
টাইম লগের পুরোটা টাইমই কি আমরা নিজেদের মত কাজে লাগাতে পারি? উত্তর হচ্ছে- না। খাওয়া, দাওয়া, গোসল, ঘুম, বাথরুম, ভার্সিটি/ অফিসে যাওয়া-আসা এরকম অনেক কাজ থাকে যেগুলো আমাদের করতেই হয়, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার উপায় নেই, তাই জবাবদিহিতাও নেই। আমাদের জবাবদিহিতা ‘ইফেক্টিভ টাইম’ নিয়ে। এটি খুব সহজেই হিসেব করা যায়।
Effective Time= Total Time – Maintenance Time
এখানে, টোটাল টাইম হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা, অত্যাবশ্যকীয় যে কাজগুলো আমাদেরকে করতেই হয় তার মোট সময় হচ্ছে মেইনটেন্যান্স টাইম। টোটাল টাইম থেকে মেইন্টেন্যান্স টাইম বাদ দিলে যে টাইমটুকু থাকে, এটিই ‘ইফেক্টিভ টাইম’। কারো যদি টোটাল টাইম হয় ২৪ ঘণ্টা, মেইন্টেন্যান্স টাইম হয় ১৪ ঘণ্টা , তাহলে তার ইফেক্টিভ টাইম হবে, ২৪- ১৪= ১০ ঘণ্টা। এই সময়টুকুই আমাদের সম্পদ, এটুকুই আমরা কাজে লাগাতে পারি, এটুকু কাজে লাগিয়েই কেউ সাফল্যের সোপানে পৌছে যায়, এটুকুর অপব্যবহার করেই কেউ বিফল হয়ে যায়।
Effective Executive:
এবার প্রশ্ন আসে, ইফেক্টিভ টাইমটুকু আমরা ইফেক্টিভভাবে কাজে লাগাবো কি করে?
উত্তরটি দিয়েছেন ম্যানেজমেন্ট এর উপর অন্যতম বেস্টসেলার বই ‘দ্য ইফেক্টিভ এক্সিকিউটিভ’ বইয়ের লেখক পিটার ফ্রাঙ্কেন ড্রাকার।উনার ভাষায় ‘ইফেক্টিভ এক্সিকিউটিভ’ হওয়ার মাত্র ৩ টি ধাপ-

১। Record time: শুরুতেই আমরা দেখে এসেছি ‘টাইম লগ’ কীভাবে করতে হয়। আপনার টাইম লগের দিকে তাকান, এবার খুঁজে বের করুন, কোন কোন কাজ আপনার সময়গুলোকে নষ্ট করছে (Time waster)।
২। Manage Time: টাইম ওয়েস্টার কাজগুলো বাদ দিয়ে দিন। লগে এই কাজগুলোর পাশে ক্রস (X) চিহ্ন বসান।
৩। Consolidate Time: আপনার এই জীবন ও ওপারের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কী কী কাজ করা দরকার, যা আপনি করবেন ভেবেও শুরু করতে পারছেন না, সেগুলোকে একটু একটু করে টাইম লগের ফাকা স্লটগুলোতে বসিয়ে পূরণ করে নিন।
Time Blocking:
উপরের ৩ নং পয়েন্টে আমরা যে টাইম কন্সোলিডেইট করা তথা সময়গুলোকে দরকারি কাজে লাগানোর কথা বলেছি, এর মূল উপায় হলো টাইম ব্লকিং। অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে অথবা আগের রাতে পরের দিনের ২৪ ঘণ্টায় কখন আপনি কী করতে চান, তা সময় অনুযায়ী লিখে একটি ‘To-do List’ তৈরি করুন। এটিই হচ্ছে ‘টাইম ব্লকিং’, দিনের প্রতিটি সময় দরকারি কোনো কাজে ব্লক করে তারপর দিন শুরু করা, এতে করে লক্ষ্যে ফোকাসড থেকে কাজ করা যায়, সময় নষ্টও হয় কম। টাইম ব্লকিং এর দুটি চার্ট দিচ্ছি, আন্দাজ পাবেন ইনশাআল্লাহ –

১।
২।

তার মানে আমরা দেখতে পেলাম যে, আমাদের হাতে ‘সময়’ আছে ঠিকই, কিন্তু আমরা তা অস্থানে খরচ করছি বলেই সঠিক স্থানে খরচ করতে পারছিনা। একটু হিসেব করে চললেই দেখবেন, সময় একটু একটু করে আপনার আয়ত্ত্বে আসতে শুরু করছে (ইনশাআল্লাহ)।
☞ সবশেষে একটা কনফিউশান ক্লিয়ার করি- টাইম লগ, টাইম ব্লক, টু- ডু লিস্ট এগুলো কি একই জিনিস?
– দেখতে মোটামুটি কাছাকাছি হলেও একটু পার্থক্য আছে। টাইম লগ হচ্ছে- সারাদিন আপনি কী কী করেন তার হিসেব, এই লগে আপনার করা ‘অকাজ’ এর লিস্টও থাকতে পারে। টু-ডু লিস্ট হচ্ছে- আপনার কী কী করা দরকার, তার লিস্ট। আর টাইম ব্লকিং হচ্ছে- সারাদিনের প্রত্যেকটা সময়কে হিসেব করে আপনার দরকারি কাজগুলো দিয়ে ব্লক করা, যেন অকাজের সময় বেশি না থাকে। সেদিক দিয়ে টু-ডু লিস্টেরই টাইম-ওয়াইজ ভার্শন হচ্ছে টাইম ব্লকিং।
তো, আপনিও আপনার লগ, ব্লক তৈরির কাজে নেমে পড়ুন….