ডায়ালাইসিস ও কৃতজ্ঞতা

নেফ্রোলজি ওয়ার্ডে ডিউটি, রাউন্ড চলছে ডায়ালাইসিস রুমে… এক মহিলা পেশেন্টের বেডে যেতেই চোখে পড়লো একটা বই, তার উপরে কুরআনের একটি আয়াত(হয়তো যিনি পড়ছেন তিনিও জানেন না, কত ভারী কত প্রশান্তিদায়ক একটি আয়াত):
لهم فيها ما يشائون.

থমকে দাঁড়ালেম, অর্থটা এমন: “সেখানে তারা যা ইচ্ছা তা-ই পাবে।” হু, জান্নাতের বর্ণণা। এখানকার রোগীদের জন্য সবচে বড় এন্টিডোট মনে হয় এই আয়াতটিই: দুনিয়ার এই কষ্ট, যাতনা, দুর্ভোগ, এগুলো কয়েকদিনেরই, আসল আবাস হচ্ছে জান্নাত, যেখানে রোগ, শোক, জরা, বার্ধক্য কিছুই নেই, “সেখানে তারা যা ইচ্ছা যেমন ইচ্ছা তাই-ই পাবে।” আল্লাহু আকবার!

কিডনী ডায়ালাইসিস শব্দটির সাথে বোধহয় কমবেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু এই ‘ডায়ালাইসিস’ আসলে কী? সহজ কথায়: মানুষের শরীরে রক্তের দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধনের জন্য আল্লাহ রাব্বুল ইয্যাহ জন্মলগ্ন থেকে একটি ফিল্টার মেশিন সেট করে দিয়েছেন, সেটাই হচ্ছে কিডনী। এই কিডনীর কার্যক্ষমতা যদি কোন কারণে কমে যায়, তখন রক্তের দূষিত পদার্থগুলো আর বের হতে পারেনা, ওগুলো জমে জমে নানাবিধ উপসর্গ শুরু হতে থাকে। তখন উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি ছাকনযন্ত্রের মাধ্যমে পুরো শরীরের রক্ত বাইরে এনে ফিল্টার করে আবার ঢোকানো হয়: এটাই হিমোডায়ালাইসিস। যেহেতু ঐ ব্যক্তির কিডনী কার্যক্ষম না, তাই একটি ভালো কিডনী দিয়ে প্রতিস্থাপন(ট্রান্সপ্লান্ট) ছাড়া এটা পুরো ভালো হয়না, কিছুদিন পরপরই এই ডায়ালাইসিস করতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল। বলা হয়ে থাকে যে, কিডনীর রোগ হওয়া মানে রোগী নিজেও মরে, পরিবারের জায়গা জমি সব বেচে শেষ করে তারপর মরে।

কৃতজ্ঞতায় অবনত হতে হয় সেই সত্ত্বার কথা ভেবে যিনি বিনা পয়সায় আমাদের প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ডায়ালাইসিস করিয়ে নিচ্ছেন, যার বিন্দুমাত্র কোন সাইড ইফেক্ট নেই। এ তো কেবল একটা অর্গ্যান: কিডনী। আর বাকি সব অর্গ্যানের কথা চিন্তা করলে হাজারবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেও তার শোকর করা পূর্ণ হবেনা।

আর যাদেরকে আল্লাহ এই কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করেছেনই, তারা যদি সবর করতে পারেন, আল্লাহর কাছে বিনিময়ও অনেক বেশি। বিনিময় সেই জান্নাত, যেখানে মানব মন যা চায়, ঠিক তাই পাবে, তারও চেয়ে অনেক অনেক বেশি; কোন চোখ যা দেখেনি, কান যা শোনেনি, কোন হৃদয় যা কল্পনা করেনি….

★ সুস্থদের জন্য কয়েকটি ডাক্তারি উপদেশ:
১. কিডনী সুস্থ রাখার ১০ টি উপায় দ্রষ্টব্য( ৪ নং ছবি)।
আমি নিজেই এর মধ্যে অনেকগুলো মেনে চলতে পারিনা, তবে মানা উচিৎ।
২. ডায়রিয়া হলে প্রচুর পরিমাণে ওরস্যালাইন খাবেন, আর খুব ঘন ঘন, অনেকবার পায়খানা কিংবা বমি হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হোন, নচেৎ রক্তে লবন কমে গিয়ে কিডনী ফেইলিউর হয়ে যেতে পারে।
৩. সাপের কামড়, বোলতা, ভীমরুলের কামড়কে ইগ্নোর না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, বিষাক্ত হলে তাতেও কিডনীর সমস্যা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *