ফ্রয়েড মানুষের চিন্তা-ভাবনা,ইচ্ছা কামনা, অনিচ্ছাসৃষ্টি সবকিছুকে যৌনধারনা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন সবকিছুর মূলে যৌনতাকে দেখিয়েছেন। ফ্রয়েডের এ ধারনা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ বলেই জানি, তবে আজকাল আমাদের সবকিছুই যে মানুষের এ যৌনচিন্তাকে কেন্দ্র করে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।আপনি যদি আজকালকার যুব সমাজের আড্ডা, কৌতুক এগুলোর দিকে লক্ষ্য করেন সবকিছুর মূলই যেন সেক্স। আর মিডীয়াগুলো যে মানুষের এ যৌনসত্ত্বাকে সর্বোচ্ছ ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চায় সেটা বুঝার জন্য আপনাকে মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হতে হবেনা। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আজকাল সব অনুষ্ঠানই যেন এ সেক্সকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠা।ভ্যলেন্টাইন্স ডে,থার্টি ফার্স্ট নাইটের মত দিবসগুলো মানুষের এ যৌন আকাঙ্ক্ষাকে উপজীব্য করেই করা। কিছুদিন আগে বাংলার মানুষ ১৬ ডিসেম্বর উদযাপন করল। অনেকে মন্তব্য করেছে বিজয় দিবস নাকি ভালবাসা দিবস বুঝতেই পারলামনা।
আদম এবং হাওয়া শয়তানের প্ররোচনায় নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার ফলে তাদের গোপন অঙ্গ প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল।এক তাফসীরকারক এ বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন, শয়তান যেমন আদি পিতা ও আদিমাতাকে পথ ভ্রষ্ট করার জন্য তাদের যৌন অঙ্গ প্রকাশকে অন্যতম স্টেপ হিসেবে নিয়েছিল আজকাল তেমনি শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য যে জিনিসকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে তা মানুষের যৌনচাহিদা।আর তা করার জন্য এ থার্টি ফার্স্ট নাইট টাইপের অনুষ্ঠানের বিকল্প শুধু এ থার্টি ফার্স্ট নাইটই।
স্কুল জীবনে প্রথম চৌধুরীর একটা কথা খুব ভালভেব অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল।
“ব্যধিই সংক্রামক স্বাস্থ্য নয়”
পশ্চিমাদের ভাল জিনিস নেই তা বলবনা কিন্তু সেগুলো আমদানি না করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে,থার্টি ফার্স্ট নাইট,লিভ টুগেদারের মত জিনিস সমানে আমদানি করে বাঙ্গালি প্রমথ চৌধুরীর কথা খুব ভালভাবেই প্রমান করে দিল।মাভৈঃ!মাভৈঃ!
আসলে আমরা সবাই “occidentosis”রোগে ভুগছি।পশ্চিমাদের কাছ থেকে যা দেখি সেটাকে আমরা সবকিছু ভেবে বসি।তাই বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস,কিংবা বাংলা নববর্ষে যতই স্বদেশপ্রীতি দেখিয়ে বুক চাপরাই নাকেন পশ্চিমাদের ভ্যালেন্টাইন ডে কিংবা থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন এখন একটা ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে।
এ সম্পর্কে চিন্তা করতে গিয়ে আল্লামা ইকবালের একটা কবিতা খুব বেশি মনে পড়ছে।
পাশ্চাত্যের শক্তি সে নয় রোবার অথবা বেহালাতে
নাই সে শক্তি পর্দাবিহীন নারীর নৃত্য জলসাতে
নাই সে শক্তি পুষ্পমুখী ও যাদুকরীদের মায়াজালে
নাই অভিনব কেশ কর্তনে নগ্ন উরুর তালে তালে
নাই সে শক্তি নাস্তিকতা ও ধর্মহীন মতামতে
নাই সে শক্তি লাতিন হরফে-প্রাচীন লিপির শরাফতে
জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্প থেকে সে পেয়েছে বিশ্বে বিপুল বল
এ আগুন থেকে চিরাগ সে তার হল রওশন সমুজ্জ্বল।
এ পৃথিবী সফলদের পিছনে ঘুরে।যারা এ পৃথিবীতে উন্নত তারাই পৃথিবী নামক রেলগাড়ীতে চালকের আসনে থাকে আর অন্যরা যে কোন বগিতে যে কোন দিকে মুখ করে থাকনা কেন তাদেরকে চালক যে দিকে নিয়ে যায় সে দিকে যেতে হয়।তাদের পথই অনুসরন করতে হয়।কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা বারবার বুঝতে ভুল করি রবীঠাকুর তার স্কুল পালানোর জন্য বিখ্যাত কবি হননি।বেকহাম তার চুলের স্টাইলের জন্য বিখ্যাত হননি কিংবা আইস্টাইন গোঁফের জন্য জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানীতে পরিনত হননি।যে জিনিসটি তাদেরকে আজ বিশ্বে এ মর্যাদায় ভূষিত করেছে সে জিনিসটা যদি আমরা উপলব্ধি করে, ধারন করতে পারি তবেই কেবল আমরা তাদের মত বিখ্যাত হওয়ার আশা করতে পারি।
আজকাল অনুকরন করতে করতে কিছু মানুষের অবস্থা এমন যে, কৃষ্ণাংগরা যদি পশ্চিমাদের মত উন্নতি লাভ করে তাহলে তারা তাদেরকে অনুসরন করে মুখে কালি লাগাতে,অপারেশন করে ঠোঁট মোটা করতে কিংবা চুলকে কোঁকরাতেও দ্বিধা করবেনা।সত্যিই আজিব তাদের চিন্তা চেতনা।
দুঃখ অনেকগুন বেড়ে যায় যখন দেখি বাংলাদেশের মত একটা দেশে যেখানে বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে তারা এ পশ্চিমাদের অখাদ্য কুখাদ্য অতি আনন্দের সাথে গলাধঃকরন করে।আল্লাহ মুসলিমদের পৃথিবীতে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য পাঠিয়েছে,মুসলিমরা জগতের জন্য অনুগ্রহ আর সে মুসলিমরাই অন্যের নেতৃত্ব আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে কিংবা অন্যদের অনুগ্রহপ্রার্থী।আজ যখন কিছু নামধারী মুসলিম বলে “merry Christmas বললে সমস্যা কি?আমার মনে হয়না এটা খারাপ কিছু”?তখন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে তোমার মনে হওয়া না হওয়া দিয়ে কি শরীয়ত চলে?তোমার মন কি শরীয়ত?তুমি আরেজনকে এভাবে অনুকরন অনুসরন করছ কেন?তোমার কি নিজস্বতা বলতে কিছু নেই? মুসলিমরা তো ঢালাই হওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়নি বরং তারা ঢালাই করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে।তারা ঘুরে যাওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়নি বরং তারা ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের অবস্থা তো এমন ছিলনা,কিসে আমাদের এ রকম অবস্থায় নিয়ে আসলো?ভাবতে হবে।
ইসলাম ও অন্যান্যদের অনুষ্ঠানের পার্থক্য প্রানশক্তিতে।ইসলামের অনুষ্ঠানগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তাইতো দুঈদের অনুষ্ঠান শুরু হয় আল্লাহকে স্মরন করে দুরাকাত নামাযের মাধ্যমে।অপরদিকে পশ্চিমাদের অনুষ্ঠান কিংবা অন্যান্যদের অনুষ্ঠানের মধ্যে স্রষ্টার তো কোন অংশ থাকেইনা এমনকি বেহায়াপনায় যার প্রধান প্রানশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।ইসলামী অনুষ্ঠানগুলো মানুষে মানুষে সহমর্মিতার শিক্ষা দেয় অপরদিকে আমাদের আজকাল পশ্চিমা সংস্কৃতি হতে আগত অনুষ্ঠানগুলো মানুষকে ভোগবাদের দিকে নিয়ে যায়।
হুমায়ুন আহমেদ তার এক জন্মদিনে জীবন থেকে একটা বছর চলে গেল বলে আক্ষেপ করেছিলেন।ছোটবেলায় একটা গান শুনেছিলাম “লোকে বলে বয়স বাড়ে আমি বলি কমে রে”,আমরা দিন দিন মৃত্যুর দিক এগিয়ে যাচ্ছি আর খুশিতে লাফাচ্ছি,ব্যাপারটা কেমন যেন!আমরা মহা আনন্দে জন্মদিন পালন করছি আর বছরের শেষদিন উদযাপন করছি মহা ধুমধামের সাথে সত্যি আজব চীজ আমরা। আমার জীবন থেকে আরো একটা বছর চলে গেল এতে এত আনন্দিত হওয়ার কি আদৌ কিছু আছে?আমি যদি দেখি পরীক্ষার হলে আমার সময় যাচ্ছে কিন্তু আমি আমার আশানুরুপ ফলাফলের জন্য উত্তর পত্র তৈরি করতে পারিনি তাহলে কি আমি খুশি হব?নাকি আমরা ভেবে বসে আছি আমাদের পরকালের পাথেয় সংগ্রহ যথাযথভাবেই হয়েছে।মাঝে মাঝে কুরআনের একটা আয়াত খুব ভাবায়।আল্লাহ বলেন-
“মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা’আলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন”। (সূরা হাশর-১৮)
আমার মনে হয় বছরের শেষদিনটা আত্মপর্যালোচনার(এহতেসাব) এক মোক্ষম সময়। আমি গত বছর কি করলাম কিংবা আগামী বছর আমি পরকালের পাথেয় কিভাবে সংগ্রহ করব তা চিন্তা করার এর চেয়ে উত্তম সময় নেই।মায়মুন ইবনে মাহরান খুব সুন্দর বলেছেন-
“ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সচেতন যে নিজের নফসের হিসেব স্বৈরশাসক এবং কৃপন ব্যক্তির চেয়েও কঠোরভাবে নেয়”।
হযরত ওমর রাঃ বলেছেন-
“আল্লাহ তোমার কাছ থেকে হিসাব নেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসাব নাও”।
হাশরের ময়দানের হিসাব নিকাশ নিয়ে চিন্তা করতে হবে।সেখানে যেন আফসোস করতে নাহয়। কারন সে আফসোস আমার কোন কাজে আসবেনা।হাশরের ময়দানে যেন আমাকে লজ্জিত হতে নাহয়। সেখানে যেন আমার এ চিন্তা করতে নাহয়
আহা!আমি যদি ওই কাজটি করতাম।
আহা!আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।
আহা!আরেকবার চান্স পেলে সব ঠিকঠাক মত করতাম।
আহা! তামার পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে হীরাটা হাতছাড়া হয়ে গেল?
আফসোস!আফসোস!আফসোস! কিন্তু সে আফসোসের তো কোন মূল্য থাকবেনা।