দাম্পত্য: হ্যাপিলি এভার আফটার?

বিবাহিত জীবনের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়, এইতো বছর চারেক হলো। শুনেছি, ন্যূণতম দশ বছরের সংসারজীবন না হলে নাকি দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা হয়না। সেই দিক দিয়ে দাম্পত্য বিষয়ে কাউকে পরামর্শ দেয়ার যোগ্য নিজেকে মনে করিনা। তবে টুকটাক ব্যক্তিগত ঘটকালির অভিজ্ঞতা অনেকদিনের, আর অনলাইনে সবক দেয়ার অভিজ্ঞতা তারওচেয়ে বেশিদিনের, সেই সাথে দাম্পত্য নিয়ে অল্পবিস্তর পড়াশোনা আছে, আর আমাদের এক জীবনের চারপাশে আরও অনেক জীবন থাকে, আমরা জীবন চলার পথে তা থেকেও কিছু অভিজ্ঞতা টুকে নিই- এসব সম্বল নিয়েই উত্তম উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করি, কেননা হাদিসে এসেছে- একজন মুমিনের কাছে আরেকজন মুমিনের অধিকার হচ্ছে, সে কোন বিষয়ে উত্তম পরামর্শ চাইলে তা দেয়া। সেদিন তেমনই এক প্রশ্নের উত্তরে পরামর্শের ডালি খুলে বসেছিলাম, মনে হলো সেই কথাগুলো নোট আকারে লিখে রাখলে মন্দ হয়না, আল্লাহ চাইলে অন্য কেউ উপকৃতও হতে পারেন-

১. বিয়ে নিয়ে পড়াশোনাঃ

বিয়ের আগে আমি বিবাহোচ্ছুক পাত্র-পাত্রীদের প্রথমেই যে পরামর্শ দিই তা হলো, বিয়ে নিয়ে পড়াশোনা করতে। দাম্পত্য জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তো আসলে নিজে বিয়ে করার আগে হয়না, তবে অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতার নির্যাস কিছুটা হলেও পাওয়া যায় অভিজ্ঞদের লেখা বই পড়ে, মোটামুটি সুখী দম্পতিদের কাছে পরামর্শ নিয়ে। এই পড়াশোনাটা ঠিক ফিক্বহী নয়, বরং বিপরীত জেন্ডারের সাইকোলজি জানা, বৈপরীত্যগুলো বোঝা। কারণ, একটা সংসার শুধু কল্পনা আর আবেগের উপর টিকে থাকেনা, অনেক অনেক স্যাক্রিফাইস আর কম্প্রোমাইজের প্রয়োজন হয়। এই প্রায়োগিক বিষয়গুলো জানতেই প্রয়োজন কিছু পড়াশোনা, ইউটিউবেও শাইখদের বেশ সুন্দর কিছু লেকচার পাওয়া যায় সেগুলো দেখা। কয়েকটা বইয়ের নাম বলে দিচ্ছি-

ক. বিয়ে, স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর: মীর্যা ইওয়ার বেগ

খ. সংসার সুখের হয় দুজনের গুণে: জুলফিকার আলি নকশাবন্দি

গ. কুররাতু আইয়ুন ১, ২ : শামসুল আরেফিন শক্তি

ঘ. বাতিঘর: মাসুদা সুলতানা রুমী

ঙ. সুখের নাটাই: আফরোজা হাসান

চ. YouTube এ ছোট্ট দুটো লেকচার আছে, খুব সুন্দর- What Women Need to Know about Men, What Men Need to Know about Women.
২. বউ-শাশুড়ির কুরুক্ষেত্রঃ

ছেলেদের জন্য খুব খুব জরুরী একটা প্রস্তুতি হলো (বিশেষ করে যৌথ পরিবারে), স্ত্রী ও মা এর মধ্যে ব্যালেন্স করতে শেখা, এই কাজটা পৃথিবীর সবচে কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি বলা যায়। যে মা এতটা বছর তার ছেলেকে একটু একটু করে বড় করেছেন, সেই সন্তানের উপর তার অধিকার সবটুক। আবার যে মেয়েটা বাবার বাড়ির সব মায়া ছেড়ে স্বামীর ঘরে এসেছে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে, এই স্বপ্ন সে সাজিয়েছে সেই কৈশোর থেকে একটু একটু করে, স্বামীর উপর তার আবদারও সবটুক। এই দ্বিমুখী প্রত্যাশা, আবেগ, অনুভূতি আর অভিমানগুলো সামাল দিতে গিয়ে একটা ছেলেকে অনেক সময় পড়ে যেতে হয় এক্কেবারে মাঝ নদীতে- এ কূল ও কূল দুকূলেই বিপদ। ছেলেটিকে এই ঝড় সামলে ওঠার জন্য হতে হয় দক্ষ অভিনেতা, ট্রিক জানতে হয় মাকে খুশি রেখে স্ত্রীকে ভালোবাসার উপায়। অবিবাহিত ছেলেরা বিয়ের আগে অনেকে জানেও না, বউ-শাশুড়ি সংক্রান্ত সমস্যা একটা দম্পতির সম্পর্ককে জাহান্নাম বানিয়ে দিতে পারে, যার worst sufferer হয় সাধারণত ছেলেরা- গোবেচারা ছেলেটি এক দিকে মায়ের অভিশাপ, আরেক দিকে স্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে জীবন নিয়ে এক বুক হতাশায় ডুব দেয়। আবার অতিরিক্ত মা ন্যাওটা ছেলের স্ত্রীরা হয় নির্যাতিত, খুব স্ত্রৈণ স্বামীর মায়েরা হন বঞ্চিত। এসব ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞ সিনিয়রদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে, যারা যৌথ পরিবারের সংকট সমাধানে মোটামুটি জ্ঞান রাখেন।
৩. বিয়ের আগে আফসোস নয়, সবর ও চেষ্টাঃ

মুমিনের জীবনটাই একটা পরীক্ষাগার, আর এই পরীক্ষার একটা পার্ট বিয়ের আগের পরীক্ষা৷ কঠিন পরীক্ষায় স্বর্ণ খাটি হয়, তাই যেখানে সব উপায় ব্যর্থ, সেখানে সবর অবলম্বনই শ্রেয়। হতেও পারে, এই সবরের মাধ্যমে আল্লাহ তাকে পরবর্তী জীবনে আরও অধিক সবরের জন্য প্রস্তুত করছেন। অববাহিতরা মনে করে, বিয়ে করলেই বুঝি শান্তির বাগান৷ অথচ দেখুন, গত সপ্তাহেই এক স্বামী লাইভে এসে তার স্ত্রীকে খুন করলো। ভাবাও যায়না এত জঘন্য কাজের কথা, অথচ তারাও তো কত স্বপ্ন নিয়েই সংসার শুরু করেছিলো, তাইনা? বিয়ের পর অনেক নিয়ামত পাওয়া যায়, আলহামদুলিল্লাহ। তবে বিয়ের আগে যে অফুরন্ত অবসর তরুণরা পায়, এই অবসর কিন্তু বিয়ে- বাচ্চা এগুলোর সাথে সাথে কমতে থাকে৷ মুমিন যদি এই অবসরটাকে গনীমত মনে করে ইল্ম অর্জনের কাজে লাগায়, সেটা কতই না উত্তম! মানুষ কল্পনা করে, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে একসাথে ইল্ম অর্জন করবে, এই করবে সেই করবে কত কী! অথচ এই আমরাই দেখেছি- কত কত সিরিয়াস ত্বলিবুল ইল্মও বিয়ের পর রিযিকের তাগিদে ইল্মের লাইন থেকে একদম ঝরে পড়েছে। তাই মুমিনের জন্য এটা মাথায় রাখা দরকার যে, বিয়ের আগে যেমন পরীক্ষা আছে, বিয়ের পরেও আছে, দুনিয়া তো জান্নাত নয়। আবার দুই স্টেইজেরই কিছু নিয়ামতও আছে। কঠিন পরীক্ষার দিনে যে সবরের স্বাদ নিতে পারে, অঢেল প্রাচুর্যের সময় শোকর সে-ই করতে পারে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই-
মেডিকেল লাইফে আমার এক বান্ধবী ছিলো, দেখা হলেই বলতো- দোস্ত, বিয়ে করবো, বাসা থেকে কোনভাবেই বুঝতেছে না। কী দুয়া পড়লে বিয়ে হবে, শিখায়ে দে তো। ওকে ‘রব্বানা হাবলানা…..’ দুআটা লিখে দিলাম, আমল করতে বললাম, বাবা-মাকে বুঝাতে বললাম, আর দুয়া কবুলের যে শর্তগুলো আছে, ওগুলো মানার পরামর্শ দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, ছ’মাসের মধ্যেই ওর বিয়ে হয়ে গেল। মেয়েটা এত্ত খুশি হয়ে এসে জানালো- তোর দেয়া দুয়া পড়েই আমার বিয়ে হইছে রে। আম্মু আব্বু তো রাজিই হচ্ছিলোনা এতদিন… বিয়ের কয়েকমাস পরের গল্প, এখন ওর সাথে চলতে ফিরতে দেখা হলেই নতুন ডায়ালগ শুনি- ধুর, আর ভাল্লাগেনা দোস্ত৷ সারাদিন ঝগড়া হয় তোর ভাইয়ার সাথে৷ ক্যান যে বিয়ে করসিলাম! আম্মুআব্বুকে ফোন দিয়ে সারাদিন রাগারাগি করি- কেন তোমরা এখনই আমার বিয়ে দিলা? ক্যান এই বিপদে ফেললা আমাকে?

আমি অবাক হয়ে শুধু ভাবলাম- এজন্যই কুরআনে মানুষকে অকৃতজ্ঞ বলা হয়েছে। দুদিন আগেই যে মেয়ে বিয়ে নিয়ে বাবা-মায়ের মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলো, সেই মেয়ে এখন আবার তাদের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে বিয়ে কেন দিলো সেই অভিযোগ তুলে! আসলে এটাই সত্য যে, জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই পরীক্ষা আছে। যারা বেসবর, তারা নিয়ামত পেয়েও বেসবর হয়। আর কৃতজ্ঞ বান্দাহ সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকে। তাই আল্লাহর নেয়া পরীক্ষায় হা-হুতাশ না করে সবর আর দু’আর পথ বেছে নিতে হবে। সেই সাথে বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বুঝাতে হবে- আমাদের বাবা-মায়েরা যে জেনারেশনে ছিলেন, তার তুলনায় যুগ যে অনেক বদলে গেছে, তাই তারা হয়তো ইয়াং জেনারেশনের সমস্যাগুলো তাদের মত করে উপলব্ধি করতে পারেন না। তাই তাদের কাছে সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতে হবে। এই সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু ফেইসবুকে বসে বিয়ে নিয়ে হা হুতাশ মার্কা স্ট্যাটাস দিয়ে কোন লাভ নেই, নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করা ছাড়া।

৪. ভাই, নিজের পায়ের মাটি শক্ত করুনঃ

সেদিন এক বোনের কাছে শুনছিলাম, এক ভাই ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে চাইছে, কিন্তু বাবা কোনভাবেই রাজি হচ্ছেন না ছেলে ছাত্র, কোন কামাই নেই তাই। ব্যাপারটা শুনে মনে মনে দুঃখই লাগলো- আহারে, বাইরের কিছু মুসলিম কান্ট্রির কথা শুনেছি, সেখানে বাবামায়েরা সন্তানদের ছাত্রছাত্রী অবস্থায়ই বিয়ে দিয়ে দেন, পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যার যার বাবা-মাই তার সন্তানের ব্যয়ভার বহন করেন। আমাদের দেশে ছেলেমেয়েরা যে সময় বাবা-মায়ের খেয়ে হারাম সম্পর্কে জড়ায়, ওখানে ছেলেমেয়েরা সেই একই টাকায় খেয়ে বৈধ স্বামী-স্ত্রীর সাথে প্রেম করে। আমাদের দেশের অভিভাবকেরাও যদি এটুকু বুঝতো! আসলেই তো উচিৎ ছিলো সমাজে বিয়ে সহজ করার, আর যিনা কঠিন করার, কিন্তু এই সমাজে যিনা সহজ, বিয়েটাই কঠিন। আমরা সচেতন হলে হয়তো আমাদের সন্তানদের জেনারেশনে গিয়ে আমরা এমনটা করতে পারবো আল্লাহ চাইলে। তবে এখনকার জেনারেশন চাইলেই অভিভাবকদের মানসিকতা রাতারাতি বদলে ফেলতে পারবে না, তাই তাদেরকে হা-হুতাশ না করে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে।

বিকল্প পথ হিসেবেই সেইসব ভাইয়ের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে- স্ত্রীর খরচটুকু কামাই করুন অন্তত, এরপর বাবাকে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দিতে বলুন। নাহলে আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিয়ের পর বেকার স্বামীর বাবার টাকায় খেয়ে কোন মেয়ে সাধারণত আত্মসম্মান নিয়ে থাকতে চাইবেনা, চাইলেও পারবেনা।কারণ, বাবা-মাও ঐ বউকে ভালো চোখে দেখবেনা, কথায় কথায় খোটা দিবে (বেশ কয়েকটা দ্বীনি বিয়ের এরকম অভিজ্ঞতা নিজে দেখেই এই কথাটা বললাম)। তাই বলি, একজন স্ত্রীর মাসে কত আর খরচ? হাইয়েস্ট ৫ হাজার টাকা, আর হিসেবি হলে ২/৩ হাজার টাকাতেও চলে। এইটুকু টাকা কামাই করতে পারবেন না বিয়ের জন্য? আমরা নিজেরাই এরকম ২/৩ টি বিয়ে দিয়েছি, ছেলে-মেয়ে, মেয়ে দুজনই পড়ছিলো.. এই অবস্থায়। সেই ছেলেগুলো এতটা দায়িত্ববান ছিল যে, তখনই ওরা পড়ার পাশাপাশি নিজের খরচ চালাতো, সাথে স্ত্রীর ভরণপোষণও দিতো। কেন সম্ভব না? একটা প্রাইভেট পড়ালেও তো তা দিয়ে দেয়া যায়। ওরা ছাত্রাবস্থা থেকে ফাইট করেছে, সবর করেছে, একটা সময় দুজনেই পাস করে বের হয়ে ভালো চাকরি পেয়েছে, ওদের বাচ্চারাও বড় হয়ে গেছে। দুজনে ছাত্র অবস্থায় পড়াশোনা সামলে বাচ্চাকেও সময় দিয়েছে, যুদ্ধটা হয়তো কঠিন ছিলোনা, কিন্তু ওদের দায়িত্বশীলতা ছিলো, সবর ছিলো, তাই আল্লাহ বারাকাহও দিয়েছেন সংসারে৷ বিয়ে মানে অনেক বড় একটা দায়িত্ব, একটা ছেলে বিয়ে করতে চাইলে আমরা মনে করি, তার এটুকু দায়িত্ব থাকাই উচিত। তেমনি একটা মেয়েরও। আপনি নিজেই চিন্তা করেন তো, বিয়ের পর আপনার স্ত্রীর খরচ আপনি বাবা-মার কাছে চেয়ে দিবেন, আপনার নিজের কি ভালো লাগবে? অভাবী ঘরের কত ছেলে তো ছাত্রাবস্থায় ইনকাম করে বাবা-মায়ের খরচও চালায়, আপনি একটা স্ত্রীর খরচ জোগাড় করতেও পারবেন না? এখনকার শিক্ষিত ছেলেরা দুই-চারটা গার্লফ্রেন্ড চালানোর যোগ্যতা রাখে, আর আমাদের স্বীনি ভাইয়েরা একজন স্ত্রীর খরচ জোগাড় করতে পারবেন না, সত্যিই কি তাই?

৫. বিয়ে মানেই কি দ্বীনের পূর্ণতা?

অনেক দ্বীনি ভাইবোন মনে করে থাকেন, বিয়ে করলেই বুঝি দ্বীন পূর্ণ হয়ে গেল। তার স্পাউজ তাকে তাহাজ্জুদে ডেকে দেবে, কত কত স্বপ্ন। আসলে দ্বীন তো তারই পূর্ণ হয়, যার আগেই অর্ধপূর্ণ ছিলো। বিয়ের আগের জীবনটায় যারা কঠোর দ্বীন পালন করে, তারাও বিয়ের পরে দেখেছি অনেকেই ঢিলে হয়ে যায়। একজন আরেকজনের ভালোটা দেখে শিক্ষা নেয়ার চেয়ে একজন আরেকজনের গাফলতি থেকেই শিক্ষা বেশি নেয়৷ যে মেয়েটা/ছেলেটা আগের জীবনে কোনদিন তাহাজ্জুদ পড়েনি, বিয়ের পর তাহাজ্জুদ শুরু করাটা তার জন্য আরও কঠিন হবে। যে ছেলেটা বিয়ের আগে ফজরে উঠতে পারতোনা, সে কি করে নিশ্চিত হবে যে, তার হবু স্ত্রীও ফজর কাযা করে? বিয়ের আগে খুব ভালো দ্বীনি থাকার পরও ঐটুকু ধরে রাখতে অনেক বেগ পেতে হয় সংসার আর বাচ্চাকাচ্চার প্রেশারে। আর যার আগে থেকেই দুর্বলতা, সে কি রাতারাতি বদলে যাবে? তাই বিয়ের পর আমার স্বামী/ আমার স্ত্রী এসে আমাকে বদলে দেবে, এই আশাটা দুরাশাই মাত্র। আমিতো দেখেছি, আমাদের দ্বীনি বান্ধবীদেরও বেশিরভাগ বিয়ের পর দ্বীনের ব্যাপারে আরও সহজ হয়ে গেছে, যে মেয়েটা বিয়ের আগে দুনিয়া নিয়ে ভাবতোই না, সেও বিয়ের পর দুনিয়া নিয়ে পেরেশান হয়ে যায়। আর যারা বিয়ের আগে পর্দা করতোনা বিয়ের পর করবে ভেবে, তারা বিয়ের পর স্বামীর সাথে আরও বেপর্দা হয়ে ফেইসবুকে ছবি দেয়৷ তাই দ্বীনি সঙ্গী পাওয়ার মূল উপায় হলো, আগে নিজের দ্বীনকে সংশোধন করা৷ আর বিয়ের পর স্রোতের তালে গা না ভাসিয়ে, একে অপরের দ্বীনি ভুলগুলো অগ্রাহ্য না করে ভুলগুলো ভালোবেসে ধরিয়ে দেয়া, দুইজনে মিলে দ্বীনের উপর জমে থাকার চেষ্টা করা। স্ত্রীর প্রতি দুর্বল হয়েও অনেক দ্বীনি ভাই দ্বীন ছেড়ে দেয়, অথচ এই ভালোবাসা মেকি, আল্লাহর ভালোবাসাটাই হওয়া উচিৎ চূড়ান্ত। আর সংসার জীবনে সবসময় যুহদ সংক্রান্ত কোন বই তালীমে রাখা। কেননা, যে দম্পতিকে দুনিয়ার মোহ পেয়ে বসে, তারা নিজের অজান্তেই দ্বীনকে হারিয়ে দুনিয়ার ভেতর ডুবে যায়।

৬. ‘ওকে আমি ঠিক করে নেবো’:

ছেলেরা আরেকটা খুব বড় ভুল করে, সৌন্দর্য দেখে দ্বীনে কমতি থাকার পরও বিয়ে করে ফেলে, বিয়ের পর স্ত্রীকে ঠিক করে ফেলবে, এই চিন্তায়৷ অথচ হিদায়াত আল্লাহর হাতে, মানুষ চাইলেই কাউকে বদলে ফেলতে পারেনা। এমন অনেক দ্বীনি বোনকে দেখেছি, যারা বিয়ের আগে নিক্বাব করতেন, বিয়ের পর স্বামীর সোহবতে হিজাবও ছেড়ে দিয়েছে। এমন অনেক দ্বীনি ভাইকে দেখেছি, স্ত্রীকে দ্বীনি বানিয়ে ফেলবে এই আশায় সুন্দরী অদ্বীনি বিয়ে করেছে। পরবর্তীতে স্ত্রীকে তো বদলাতে পারেই না, উল্টো নিজেই বদদ্বীনের দাওয়াতে দ্বীন ছেড়ে দিয়েছে। সুতরাং, অন্য সব কিছু স্যাক্রিফাইস করা হলেও দ্বীন স্যাক্রিফাইস করা যাবেনা, এই কথাটুকু বিয়ের আগে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আর দু’আ করে যেতে হবে।

৭. আখলাকবিহীন দ্বীনের খোলস:

বিয়ের আগে অবশ্যই পাত্র-পাত্রীর নিকটজনের কাছে তার আখলাকের খোজ নেয়া উচিৎ। আখলাক খারাপ এমন দ্বীনি মানুষ স্পাউজ হিসেবে খুব খারাপ। কারণ, একজন সাধারণ মানুষের আচরন খারাপ হলে মানুষ কেবল তাকেই দোষ দেয়, বিপরীতে একজন দ্বীনি মানুষের আচরন খারাপ হলে সমাজ আগে আঙ্গুল তোলে তার ধর্মের দিকে, কারণ ঐ দ্বীনি মানুষেরা ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের ভুল আচরনকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে থাকেন। তাই একজন ভালো আখলাকের মানুষের দ্বীনে সামান্য ঘাটতি থাকলেও তার সাথে সংসার করা যায়, কিন্তু একজন দ্বীনি মানুষের আখলাকে বড় ধরণের সমস্যা থাকলে তার সাথে সংসার করা খুব কঠিন। এমন অনেক অনেক দ্বীনি বিয়ে ভেঙে যেতে দেখেছি, অনেক দ্বীনি বোন ফোন করেও কান্নাকাটি করেন, তারা স্বামীর লেবাস দেখে বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু বিয়ের পর তার আখলাকের কুতসিৎ রূপটা ধরা পড়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজন দ্বীনি হয়েও এখন প্রচুর বিয়ে ডিভোর্স হয় শুধু কোন একজনের আখলাকের সমস্যার কারণে। তাই এই ব্যাপারে অবশ্যই বিয়ের আগে খোজ নেয়া উচিৎ বলে মনে করি। এমন কারোর কাছে খোজ নেয়া উচিৎ, যে ঐ মানুষটাকে কাছে থেকে চিনে এবং যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্য কথাটিই বলবে।

আজ তাহলে এটুকুই। আরেকদিন সময়-সুযোগ করে নাহয় বাকিটা বলা যাবে (ইনশাআল্লাহ)। সে পর্যন্ত আমার নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিও আরেকটু সমৃদ্ধ হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *