দৃষ্টিভঙ্গি

১।

বাংলা সিনেমায় হঠাৎ করেই নায়িকারা শর্ট ড্রেস  পড়া শুরু করেনি। আপনি যদি ষাটের ও সত্তরের দশকের সিনেমাগুলো দেখেন তাহলে দেখবেন সেখানে তারা শাড়ি পড়ে তুলনামুলক শালীনতার সাথে অভিনয় করছে ।আস্তে আস্তে পোশাক ছোট করার মহড়া করতে করতে আজকের এই অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। মানুষ হঠাৎ করে পরিবর্তন মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। আস্তে আস্তে মানুষের মানুষের মন মগজে জিনিসটা বদ্ধমূল হওয়ার জন্য আস্তে আস্তে এগুতো হবে। মুলত এটাই হচ্ছে সঠিক কাজগুলোর কর্মপন্থা।আবার শয়্তানও ঠিক একই প্রসেসেই এগিয়ে যায়। কোরানে সেজন্য বলা হয়েছে-

“শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু”। (সুরা বাকারা-২০৮)

এখানে আল্লাহ অন্যান্য আয়াতের মত শয়তানকে অনুসরন করতে নিষেধ না করে শয়তানের পদাংক অনুসরন করতে নিষেধ করলেন কেন? শয়তানের স্টেপগুলোই হয় এরকম।সে আগে আপনাকে কম খারাপের দিকে নিয়ে যাবে পরে আপনাকে চুড়ান্ত খারাপের অতল গহবরে ফেলে দেবে।

২।

নারী স্বাধীনতা,নারী অধিকারের বুলি আওড়িয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীবাদী movement  চলছে। অন্যান্য দেশ করলে আমাদের দেশই বা পিছিয়ে থাকবে কেন?আমাদের দেশেও নারীবাদী মোভমেন্টগুলো আস্তে আস্তে আত্মপ্রকাশ করেছে। উইকিপিডিয়াতে feminism  নিয়ে যে বক্তব্য আছে সেখানে যে মূল  ছবিটা সংযুক্ত পাবেন সেটা বাংলাদেশের নারীবাদী মোভমেন্টেরই একটি ছবি। অর্থাৎ বাংলাদেশে নারীবাদী মোভমেন্টের যে বীজ বপন করা হয়েছিল তা আজ সুবিশাল মহীরুহ হয়ে শিকড় অনেকদূর বিস্তৃত করে ফেলেছে।  এ মোভমেন্ট নিয়ে বিভিন্ন লোকের মন্তব্য বিভিন্ন। ওইদিন একজন মন্তব্য করল “আমাদের দেশের যারা নারীবাদীদের খাতায় নাম লিখিয়েছে তারা বেশিরভাগ পারিবারিক জীবনে সুখী নয়।পারিবারিকভাবে তারা স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন”।জানি না কথাটির সত্যতা কতটুকু। আপনারা সবাই শেয়ালের লেজকাটার কাহিনীটি জানেন। অনেকে নারীস্বাধীনতার জন্য বাকবাকুম বাক বাকুম করা লোকদের সম্বন্ধে এ শেয়ালের কাহিনীটি উল্লেখ করেন। তাদের মতে এরা নিজেরা সুখে নেই বলে বাংলাদেশের নারীদের সামনে নারী অধিকার,সমান অধিকার,কাজের অধিকার ইত্যাদি বলে নারীদের সাংসারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। আসল সত্যতা কি তা আল্লাহই ভাল জানেন।তবে বাস্তবতার অনেক কিছু সেদিকেই ইংগিত করে বলে আমার মনে হয়।

৩।

আমি আগেই বলেছি কোন কিছুকে আপনি প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে হঠাৎ করে সম্ভব নয়। পশ্চিমা বিশ্বে পরিবার ধবংসের যে মহড়া আমরা দেখেছি আলহামদুলিল্লাহ মুসলিম দেশগুলো সে সকল থেকে অনেকটুকুই মুক্ত। পশ্চিমারা নারীদের পন্যের পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে। তারা তাদের মা, বোন, স্ত্রীদের বিক্রি করে দিলেও মুসলিমরা এখনো তা করে নি। ব্রিটিশ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার মুসলিমদের দুটি জিনিসকে প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।একটি হল যাকাত ব্যবস্থা আরেকটি মুসলিমদের পারিবারিক বন্ধন। আজ মুসলিমদের সে জিনিসকে ধবংস করার জন্যে একটা মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে।তারা এদেশে পাচার করছে বিভিন্ন এন জি ও। সাথে সাথে তাদের সংস্কৃতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের মধ্যে।কারন তারা জানে বাংলাদেশের মুসলিমরা খাঁটি টাটকা মুসলিম না হলেও তাদের মধ্যে যে অল্পস্বল্প ঈমান বিদ্যমান আছে সেটার শক্তিতে তাদের এ গরল তারা গলাধঃকরন করবে না। অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক ও চাতুর্যের সাথেই তারা নারী স্বাধীনতা নামক চকোলেটের ভেতরে সভ্যতা ধবংসের ট্যাবলেট ভরে দিচ্ছে।

৪।

এ কথা আমাদের মেনে নিতেই হবে আমরা নামধারী মুসলিমরা নারীদের যথার্থ অধিকার দিচ্ছি না। যে সকল অধিকার ইসলাম দিয়েছে সে সকল অধিকার আমরা আমাদের মা বোন,স্ত্রীদের দিতে কুন্ঠাবোধ করছি।আর সে সুযোগটাই নিচ্ছে নারীবাদীরা।অনেকটা বলা যায় আমরাই তাদের সুযোগ করে দিচ্ছি।

আল্লাহ কোরআনে বলছেন-

বলুনঃ ‘হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান’। (সূরা আলে ইমরান-৬৪)

এখানে শুধুমাত্র আহলে কিতাবকে উদ্দেশ্য করে বললেও সব মতবাদের মানুষকে এ মূলনীতির ভিত্তিতে আমরা যদি নিয়ে আসতে পারি তাহলে অনেকক্ষেত্রে ফলপ্রসূ কিছু ঘটানো সম্ভব বলে আমার মনে হয়।কোরআন যেখানে নারীদের উত্তরাধিকার দিয়েছে সেখানে আমাদের দেশেই মুসলিমরা তাদের মেয়ে তাদের বোনদের সে অধিকার দিচ্ছে না।নারীবাদিরা হয়ত উত্তরাধিকারের অংশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন।যেখানে কোন অধিকারই নারীদের দেয়া হচ্ছে না সেখানে তারা যদি আদৌ ঠিকভাবে তাদের আন্দোলন করত তাহলে অবশ্যই ইসলামের দেয়া অধিকার নিয়ে আগে কথা বলত।

কোরআন বলছে-

“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে”। (সূরা নিসা-৪)

আমাদের নারীবাদী শ্রেনী সম্পদের সমান অধিকার নিয়ে কথা বলতে বলতে গলার রগ ফুলিয়ে ফেলছেন কই তারা তো কখনো এ মোহরানা নামক নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলে না।ইসলাম যৌতুক বিরোধী এবং নারীর প্রাপ্য মোহরানা দেয়ার কথা বলে।যৌতুক আমাদের সমাজের একটি অভিশাপ।এ অভিশাপের মূলোৎপাটন করার জন্য ইসলামের মোহরানা সিস্টেমের কোন বিকল্প নেই। তারা যদি আদৌ নারীর প্রকৃত অধিকার নিয়ে কথা বলত তাহলে অন্তত যে বিষয়ে বাংলাদেশের মত মুসলিম অধ্যুষিত দেশে বেশিরভাগ লোকই সরাসরি বিরোধী নয়,সে বিষয়ে বলত।কিন্তু তারা সে বিষয়ে না বলে পাত্রের অবস্থা বিবেচনা না করে পশ্চিমা শেখানো বুলি “সবখানে সমান অধিকার” “সবখানে সমান অধিকার” নামক মন্ত্রের জিগির তুলছে তখন এরকম উপসংহারে আপনি পৌঁছতে বাধ্য হবেন “ডাল মে কুচ কালা হ্যায়”।

বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বিয়ের কিছুদিন পরই সংসার ভেংগে যাচ্ছে।স্বামীর হয়ত স্ত্রীর প্রতি আকর্ষন কমে যায়।ফলে সংসারে তাকে নানা ভাবে অত্যাচার করা শুরু করে।এ সময় মেয়েরা হয়ত পৃথিবীতেই বসেই দোযখের স্বাদ নিয়ে নেন।কোরআনে এরকম পুরুষদের উদ্দেশ্য করে বলছে-

“নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন”। (সূরা নিসা-১৯)

নারীবাদী সমাজ এ বিষয়গুলো কি প্রচার করতে পারে না?রেজাল্ট কি হবে আমি জানিনা তবে পাবলিক মটিভেশন পরিবর্তন হবে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।

তারা চাকরিক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকারের কথা বলে।আগে নারীদের চাকরিক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলুন। এক পরিসংখ্যানে পড়লাম আমেরিকার মত দেশে ৮০% মহিলা কর্মক্ষেত্রে sexual harassment এর শিকার হয়।আপনারা আগে নারীপুরুষ আলাদা কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করুন।রাস্তাঘাটে নারীদের চলাফেরার অবস্থা নিশ্চিত করুন।যেমন মহানবী (সঃ) বলেছিলেন-

“অচিরেই তুমি দেখবে এক মহিলা সুদূর কাদেশিয়া থেকে একাকী একটি উটে সওয়ার হয়ে এই মসজিদ(নববী) অভিমুখে রওনা হয়েছে এবং সম্পূর্ন নিরাপদে এখানে এসে পৌঁছেছে”।

সেরকম সমাজ ব্যবস্থা যদি বিনির্মিত হয়, উম্মতের কিছু মহিলাকে এমন কিছু সেক্টর আছে যেগুলোতে কাজ করা একান্ত জরুরি বলেই আমার মনে হয়।মহিলা ডাক্তার সমাজের জন্য একান্তু জরুরী।আমার মতে এটা উম্মতের জন্য ফরযে কিফায়া (ভুল হলে আল্লাহ মাফ করুক)।উহুদের ময়দানে মা আয়েশা,উম্মে সালিত,উম্মে সুলাইম,উম্মে আম্মারা (রাঃ) অংশগ্রহন করছিলেন।প্রয়োজনে মহিলারা অবশ্যই কাজ করবে তবে অবশ্যই তা আল্লাহর দেয়া বিধানের মধ্যে থেকে তারঁ দেয়া অর্পিত দায়িত্বপালনের পর।

তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম ইসলাম নারীদের কম অধিকার দিয়েছে।কিন্তু ইসলাম নারীদের যে অধিকার দিয়েছে সে অধিকার নিয়ে প্রথমে বাংলাদেশে কাজ করা সহজ ও অধিকতর ফলপ্রসূ নয়কি?তারা যখন সে কাজটি করছে না তখন বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন তারা পশ্চিমাদের রোগটি আমাদের মধ্যে সংক্রমনের নীলনকশা এঁকেছে।

 একটি অন্যরকম কন্সেপ্ট যা নারীনির্যাতনের একটি কারন বন্ধ করতে পারেঃ

বাংলাদেশের অনেক স্থানে মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য মহিলাদের নির্যাতন করা হয়।অথচ আজকের বিজ্ঞান আমাদের বলে পুরুষ বহন কর XY  ক্রোমোজোম আর মহিলারা বহন করে XX  ক্রোমোজোম।যদি পুরুষের Y  মহিলার X সাথে মিলিত হয় তাহলে সন্তান ছেলে হয়,আর পুরুষের X  যদি মহিলার X  এর সাথে মিলিত হয় তাহলে সন্তান মেয়ে হয়।দেখা যাচ্ছে সন্তান ছেলে হওয়ার জন্য যে ক্রোমোজোমটি দরকার তা  পুরুষের কাছ থেকেই আসে।সন্তান কি হবে তা পরম করুনাময় আল্লাহই নির্ধারন করেন,এতে নারী বা পুরুষ কারোই হাত নেই।যদি একান্তই দোষী সাব্যস্থ করতে হয় তাহলে পুরুষকে করা উচিত নারীকে নয়।আল্লাহ কোরআনে পুরুষের ক্রোমোজোমের থেকেই যে লিংগ নির্ধারিত হয় সে জিনিসটি তুলে ধরেছেন।

এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী। একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়। (সূরা নজম-৪৬-৪৭)

এ আয়াতে স্ফলিত sperm ই যে পুরুষ ও নারী নির্ধারন করে সেদিকেই ইংগিত করা হয়েছে। আর এ স্পার্ম পুরুষ থেকেই স্ফলিত হয়। তাই কোরআন এখানে পরিষ্কার ভাষায় লিংগ নির্ধারনে কে ভূমিকা রাখে সে জিনিসটা বলে দিয়েছেন।

নারীবাদীরা যদি নারী অধিকার, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদৌ কাজ করতে চান তাহলে কোরআনের এ সকল বিষয়ের উপর মনোযোগ দেবে বলেই আশা করছি। যদি  মনোযোগ না দেয় তাহলে বুঝতে হবে তারা  তাদের দায়িত্ব যথাযথ সততার সাথেই পালন করছেন,তারা তাদের পশ্চিমা প্রভুদের দেয়া নকশা অনুযায়ী ঠিকভাবে এগুচ্ছে।

আর আমাদের নামধারী মুসলিমদেরকে বলি তোমরা আল্লাহ দেয়া অধিকারের কথা না বলে,অধিকার না দিয়ে নিজেদের ধ্বংসের নীলনকশা নিজেরাই তৈরি করছ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *