দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু পাল্টানো যায়না?

১।

মুহাম্মদ (সঃ) যখন  হেরা গুহায় অহী প্রাপ্ত হয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন মক্কার লোকজন বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে শুরু করল। যেমন,একজন মানুষ কিভাবে রসুল হয়? তিনি এতদিন আমাদের মাঝে ছিলেন আমাদের মতই একজন মানুষ তিনি কিভাবে আল্লাহর প্রেরিত দূত হবেন? আল্লাহ কোন ফেরেশতাকে রাসুল নাবানিয়ে মানুষকেই কেন বানালেন? ইত্যাদি ইত্যাদি। আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতাআলা কুরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এসকল প্রশ্নের জবাব দিতে থাকেন। পূর্ববর্তী সকল নবীই মানুষ ছিলেন।ঈসা(আঃ) মুসা(আঃ) এর কাছেরও হঠাৎই আল্লাহর অহী এসেছে,মানুষকে বুঝানোর জন্য মানুষের জন্য আদর্শ হিসেবে একজন মানুষকেই রাসুল হিসেবে পাঠানো যৌক্তিক ইত্যাদি বিভিন্ন রকম যুক্তি প্রমানের মাধ্যমে তাদের এসকল দৃষ্টিভংগীকে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতাআলা খন্ডন করেন।পরে যখন এসব কিছুর যৌক্তিক উত্তর দিয়ে দিলেন তখন তারা নতুন দৃষ্টিভংগী প্রচার করা শুরু করল,নতুন নতুন প্রশ্ন তোলা শুরু করল।এ যেমন আল্লাহ কি এ দুই শহর (মক্কা ও তায়েফ) এর ধনী কাউকে পেলেননা?আল্লাহ এমন কাউকে  রাসুল করে কেন পাঠালেননা যিনি পাহাড়কে চোখের পলকে সোনার পাহাড়ে পরিনত করে দিতে পারেন?তাদের এমন দৃষ্টিভংগী সঠিক কারন কি হতে পারে?সত্যকে অস্বীকার করে জাহিলিয়্যাতকে ঠিকিয়ে রেখে তাদের   ধর্ম ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখায় তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।এ উদ্দেশ্য থেকেই শয়তান তাদের উপর অহী নাজিল করে এমন দৃষ্টিভংগীর জন্ম দিয়েছে।

২।

হাদীসে আছে, কাহিনীটা অনেকটা এরকম একবার আয়েশা (রাঃ) এক বকরী জবাই করে সব দান করে দেন শুধু একটিমাত্র পা রসুল (সঃ) এর জন্য রেখে দেন।রাসূল (সঃ) বাড়িতে আসা মাত্রই তিনি সেটা তাকে পরিবেশন করে বলেন সব দিয়ে দিয়েছি শুধুমাত্র একটা পা আপনার জন্য আছে।রাসুল (সঃ) বলেন হে আয়েশা, বল সব আছে শুধু একটা পা নেই।

অর্থাৎ যা দান করা হল সব তো থেকে যাবে, বিচার দিবসে আল্লাহ তার প্রতিদান দেবেন আর যা খেয়ে ফেলেছি তা তো শেষই হয়ে গেল।আল্লাহর নবী (সঃ) এরকম দৃষ্টিভংগীর শিক্ষাই তার উম্মতকে শিখিয়ে গিয়েছেন।দুনিয়া কেন্দ্রিকতা নয় বরং আখিরাত কেন্দ্রিকতাই  ছিল তাঁর শিক্ষার প্রধান অংশ।।বস্তুবাদী সমাজে বা আজকের পশ্চিমা সমাজে যখন তাদের মিডিয়া শক্তি, অস্ত্র শক্তি সব আছে তখনই তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করছে অথচ মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল তখনই যখনআল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট ছিল।আজকে হোয়াইট হাউজে থাকা আমেরিকা প্রেসিডেন্ট ও পশ্চিমা মানুষরা এটাকে হয়ত তাদের শ্রেষ্ট সময় মনে করছে কিন্তু মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল তখনই যখন তার খলিফা খেজুর গাছের নিচে চাটাইয়ে শুয়ে ছিল।এ হচ্ছে ইসলাম ও আজকের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।

৩।

বস্তুবাদী চিন্তাচেতনায় একজন লোক মানুষকে ঠকিয়ে যতই টাকা উপার্জন করুক নাকেন,মানুষকে শোষনের ফর্মূলা সুদের আধুনিক কন্সেপ্ট দিয়ে সে দুনিয়াতে বাহবা কুড়িয়ে নোবেল পাক নাকেন,বস্তুবাদী চিন্তাজগতের মানুষরা তাকে যতই উচ্চস্থানে নিয়ে যাকনাকেন,ইসলামের দৃষ্টিতে তার মূল্য এক চতুষ্পদী প্রানীর চেয়েও কম।ফোঁড়া বড় হলে শরীরের মাংস বেড়ে গেছে এই খুশিতে কেউ লাফায়না।তেমনি আবর্জনা স্তুপ যতই বড় হোকনাকেন তা আবর্জনাই,কখনো দূর্গ হবেনা।সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞানী স্রষ্টা তাঁর নিজস্ব স্কেলেই মানুষকে বিচার করবেন মানুষের বানানো কৃত্রিম বায়বীয় কোন স্কেলে তিনি মানুষের বিচার করবেননা।

৪।

দিন এবং রাত স্রষ্টার সৃষ্টির এক অপূর্ব নিদর্শন।প্রত্যেকেই স্ব স্ব সৌন্দর্যে মানুষকে আকৃষ্ট করে।দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য যেমন দিনের প্রয়োজন আছে তেমনি সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর একটু আরামের খোঁজে,চোখের ক্লান্তিকে দূর করার জন্য মানুষ ভালবাসে রাতকে। এ রাতদিন একটি অপরটির প্রতিদবন্ধী নয় বরং একটি অপরটির পরিপূরক।তেমনি আল্লাহর সৃষ্টির অন্যতম একটি নির্দশন শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাংগ মানুষ।দু ধরনের মানুষ একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি।দু ধরনের মানুষই স্রষ্টার চোখে সমান।কিন্তু আপনি যখন বিবর্তন নামক একটি অপবিজ্ঞানের ধোঁয়া উড়িয়ে বলবেন শ্বেতাঙ্গরা সুপিয়র রেস, অধিকতর উন্নত ধরনের জীব তখনই চলে আসে ভিন্ন একটি প্রশ্ন।চামড়াটাই যদি মানুষের শ্রেষ্টত্বের মাপকাঠি বানানো হয় সমস্যা শুরু হয় তখনই।মাইকেল জ্যাকসনের মত উচ্চমানের গায়করাও তাদের চর্মের জন্য মানসিক অশান্তিতে ভোগা শুরু করে এবং অবশেষে প্লাস্টিক সার্জারী করিয়ে শরীরকে শ্বেতাঙ্গদের মত তৈরি করার অপচেষ্টা চালায়। আমেরিকার মত সভ্য দেশের অনেক রেস্টুরেন্ট ও সিভিচে লেখা  “Dogs and Blacks are not allowed” এখনো আমাদের অনেকের মস্তিষ্কে সতেজ হয়ে আছে হয়ত এখনো অনেক জায়গায় এমন সাইনবোর্ড বর্তমান।সে যাই হোক আমার প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের এমন দৃষ্টিভঙ্গির কারনটা আসলে কি?এর উৎপত্তিই বা কোথা থেকে?আর এমন দৃষ্টিভঙ্গি পরম আদরে লালন করার কারনই বা কি?

ছোট বেলায় ইংরেজি বইতে একটা গল্প পড়েছিলাম।অনেকটা এরকম- হাত, পা,মাথা হৃৎপিন্ড লিভার সবাই একযোগে পাকস্থলির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলল।কারন,সবাই কাজ করলেও পাকস্থলি কোন কাজ করেনা,সে শুধু খায়।তারা পাকস্থলিতে সব রকম খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিল।দেখা গেল দিন যেতেই তারা দুর্বল হয়ে পড়ল,একটা পর্যায়ে তারা বুঝতে পারল পাকস্থলি আসলে তাদের জন্য কি রকম কাজ করে।শরীরের যেমন এক এক অঙ্গ এক এক ধরনের কাজ করে কোনটাই যেমন ফেলে দেয়ার মত নয় প্রত্যেকে যে যার প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে তেমনি একটা সমাজেও নারী পুরুষ যে যার প্রকৃতি অনুযায়ী কাজে অংশ গ্রহন করে।গোলাপ যেমন তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্য সুন্দর, তেমনি বেলী ফুল তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্য সুন্দর।জোর করে গোলাপকে বেলী ফুল বানানো কিংবা বেলী ফুলকে গোলাপ বানানোর চিন্তা যে উর্বর মস্তিষ্কপ্রসূত প্রকৃতিবিরোধী চিন্তা তা সহজেই অনুমেয়।

প্রাকৃতিক ভাবেই পুরুষ এবং নারীর বৈশিষ্ট্য ভিন্ন তার শরীরের গঠন ভিন্ন।তাই ইসলাম বলে দুজনের কর্মক্ষেত্রও ভিন্ন,দুজনের পোশাকও ভিন্ন,দুজনের চালচলন ও ভিন্ন হবে।আবার ইসলামের অনেক মূলনীতিতে নারী ও পুরুষকে সমানভাবে দেখা হয়েছে। কিন্তু আজকাল “নারী পুরুষ সমান” শ্লোগানে যখন দেখি নারী সম্প্রদায় জিন্স টি শার্ট পরে চুলে বব কাট দিয়ে পুরুষ হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে তখন খুঁত খুঁতে মনে প্রশ্ন আসে জিন্স টি শার্ট পরলেই সমান হবে মেয়েদের এমন দৃষ্টিভংগীর মূল কারনটা আসলে কি?পুরুষের সাজে সেজে সমানইবা কেন বলতে হবে?এতে কি পুরুষকে পরোক্ষভাবে সুপিরিয়র মেনে নেওয়া হলনা?যে পুরুষরা রাস্তায় “নারীপুরুষ সমান সমান” বলে গলা ফাটায় তারা চুল বড় করে মেয়ে সেজে রাস্তায় বের হলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতাটা আরো বাড়বে বলে আমার মনে হয়।আমাদের দেশের সহজ সরল মানুষরা বুঝতে পারবে আসলেই নারীপুরুষ সমান হওয়া দরকার। স্বাধীনতার সময় ইন্ডিয়া আমাদের সাহায্য করেছে সত্য,তবে এ সাহায্য কি সাহায্যের নিমিত্তেই করেছে নাকি তাদের স্বার্থে?বিষয়টি ইতিহাস থেকে অনেকটাই স্পষ্ট,সমসাময়িক অবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে।হুমায়ুন আজাদসম যে সকল বুদ্ধিজীবী, (?) চুশীল পুরুষরা নারী স্বাধীনতার কথা বলছে তাদের মনের গহীনে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই তো?রাস্তায় চলার পথে যেন বিনা বাধায়, বিনা পয়সায় চক্ষু শীতল (?) করতে পারে কিংবা টাকার গায়ে যেমন লেখা থাকে “চাহিবামাত্র বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে” এমন কোন ট্যাগ কি তারা নারীর গায়েও এঁটে দিতে চায় কিনা সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন।

বস্তুবাদী এ সমাজে এখন আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী অর্থের উপর ভর করে।

যেথা কোন অর্থ নাই,

সেথা যাওয়া বৃথা তাই।

 এমন দৃষ্টিভঙ্গি্তেই তারা ঘরে নারীদের কাজকে পন্ডশ্রম আখ্যা দিচ্ছে।নারীদের ঘর হতে বের  করে নিয়ে যাচ্ছে অফিস,আদালত, কল কারখানায়।পুরুষদের কাজকেই বড় করে দেখা হয়, কারন সে টাকা উপার্জন করে কিন্তু নারীদের কাজকে কাজই মনে করেনা।তাই আল্লাহ যে কারনে নারীদের সম্মানিত করেছেন সে গর্ভধারনকে হুমায়ুন আজাদের মত লেখক পশুর কাজ বলার সাহস করে।যে কাজে আর্থিক কিছু নেই সেটাকে কোন কাজ বলেই গন্য করা হয়না।এ বিষয়ে বলতে গিয়ে Brainsex বইতে লেখক লিখেছেন-

“বেশিরভাগ নারীর ঘরের কাজ করে আর বেশিরভাগ পুরুষই অফিসে বা ফ্যাক্টরীতে কাজ করে,আর সত্য এটাই যে এক ধরনের কাজ আরেক ধরনের কাজ হতে necessarily better এমন নয়।এক ধরনের কাজকে বিনিময় মূল্য প্রদান করা হয়,কিন্তু তাই বলে এ ধরনের কাজকে বিশেষ সম্মান দেয়া উচিত নয়।একজন বেশ্যাকে বিনিময় মূল্য দেয়া হয়,কিন্তু তাই বলে তার কাজ একজন মায়ের কাজের চেয়ে বেশি ভাল হয়ে যায়না। (১)Brainsex-by Anne moir&David jessel  pg-189 লেখক যথার্থই বলেছেন টাকা কি করে কারো মর্যাদার মাপকাঠি  হতে পারে?মানুষ কেন এমন মত পোষন করে?মক্কার লোকদের মত এরাও কি শয়তানের কাছ থেকে সরাসরি অহী ও ইলহাম প্রাপ্ত?সমাজের বিশৃংখলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এরা এ সকল কৃত্রিম বায়বীয় স্কেল নির্ধারন করেছে এবং মানুষের মাঝেও সে ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *