নেতার আনুগত্য

ষাটোর্ধ্ব খলীফা সিদ্দীকে আকবর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু পায়ে হেটে চলেছেন সতের বছরের কিশোর কমান্ডার উসামা বিন যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সওয়ারির সাথে, (তিনি তখন রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে সিরিয়াগামী মুসলিম বাহিনীর চীফ কমান্ডার) আর উপদেশ দিচ্ছেন: খিয়ানত করবেনা, মিথ্যে বলবেনা, শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের হত্যা করবেনা, ফলদার বৃক্ষ কাটবেনা,……

কুরাইশদের মধ্যে কেউ কেউ নড়ে বসলো: উহু, এই বালকের নেতৃত্ব মেনে নেয়া যায়না, নেতা হতে হবে কুরাইশদের মধ্যেকার বয়স্ক কেউ। আনসারেরাও খলিফার কাছে পয়গাম পাঠালো: এই বাহিনীর অধিনায়ক এমন কাউকে করুন, যিনি উসামা থেকে বড় এবং শরীফ বংশের।(উসামা ছিলেন রাসূলুল্লাহর গোলাম যায়েদ ইবনে হারিসার ছেলে)

সিদ্দীকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আনহু আফসোস কর বললেন: এদের অন্তরে এখনও পর্যন্ত গর্ব ও অহঙ্কারের চিহ্ন অবশিষ্ট রয়ে গেছে! এই বাহিনী প্রেরণ করতে গিয়ে যদি সমস্ত শিবির খালি হয়ে যায়, আমি একা থেকে যাই, আমাকে হিংস্র জন্তুরা তুলে নিয়ে যায়, তবুও এই অভিযান মুলতবি হতে পারেনা, কেননা এই বাহিনী শুরু করে দিয়ে গেছেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

চলতে চলতে উসামা লজ্জিত হলেন: আমীরুল মুমিনীন! হয় আপনি সওয়ারিতে আরোহন করুন, নতুবা আমিই নেমে পায়ে হেটে চলি।
– না না, তার প্রয়োজন নেই। আমি যদি কিছুদূর আল্লাহর রাস্তার পথিকদের এগিয়ে দিতে হেটে চলি, তাতে আমার কি ক্ষতি হবে?

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুও উসামার নেতৃত্বে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। খলীফা উসামার কাছে এবার আর্জি করলেন: উসামা, তুমি যদি অনুমতি দাও, আমি আমার সাহায্য ও পরামর্শের জন্য উমারকে আমার সাথে রেখে দিতে পারি।

মুসলিম জাহানের খলীফা, এতটুকু কিশোরের সাথে কি বিনয়! সুবহানাল্লাহ! এই দৃশ্য দেখে উচ্চবাচ্চকারীরা থ হয়ে গেলো, স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন এত সম্মান দিচ্ছেন, আমরা তো কোন ছার!

ইসলামী ইতিহাসের এই এক অভূতপূর্ব শিক্ষা: নেতা বয়সে যত ছোটই হোক, কিংবা হাবশী কৃতদাস হোক, তার সম্মান তার প্রাপ্য। বংশীয় কৌলিন্য কিংবা সম্পদের আভিজাত্য সেই সম্মান প্রদর্শনে কোন বাধ সাধতে পারেনা। সাম্যের বিধান এটাই।

[তথ্যসূত্র: ইসলামের ইতিহাস (১ম খণ্ড)- মাওলানা আকবর শাহ খান নজিবাবাদী]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *