✪ আমার এক আত্মীয়া, বিবাহিত জীবনের ছয় বছর পার করছেন, সন্তান হচ্ছেনা। হেন উপায় নেই যেভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেননি, কিন্তু কাজ হয়নি৷ আসলে তাকদীরে না থাকলে সেটা তো আর জোর করে আদায় করা যায়না। বেচারীর দুঃখের শেষ নেই, ফোন দিলেই এই অপ্রাপ্তি নিয়ে কান্নাকাটি। আসলেই সন্তান না থাকার মত কষ্ট জগতে দ্বিতীয়টি নেই। এই কষ্ট তাকে এতটাই ঘিরে ধরেছে যে, এখন সারাক্ষণ তার নিজেকে, নিজের জীবনকে ব্যর্থ মনে হয়। কান্নাকাটি আর আফসোস! এই আফসোস তাদের দাম্পত্যজীবনের প্রশান্তিটুকুও কেড়ে নিচ্ছে প্রতিদিন….
আরেক জুটির গল্প বলি, যারা বিয়ের পর সন্তানের বাবা-মা হতে চাইলেন, কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে সাড়া পাচ্ছিলেন না। পরিবারের সবাই চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছিলো, বাচ্চা-কাচ্চা না হলে ওরা কী নিয়ে বাচবে? তবে সেই জুটির নিজেদের চিন্তা ছিলো ঠিক বিপরীত, তারা সন্তানের জন্য দু’আ করে যাচ্ছিলেন, আর সেই সাথে কন্টিঞ্জেন্সি প্ল্যানিং (প্ল্যান A এর সাথে প্ল্যান B, প্ল্যান C রেডি করে রাখা) ও করে রেখেছিলেন। স্বামী যখন স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলো,
– আচ্ছা, আমাদেরকে আল্লাহ যদি বাবু না দেন, তাহলে তুমি কষ্ট পাবে?
– কষ্ট তো পাবোই, তবে বুঝে নেবো, আল্লাহর সিদ্ধান্ত আমাদের সিদ্ধান্তের চেয়ে উত্তম। হয়তো আমরা সাদাক্বায়ে যারিয়া হিসেবে সন্তান চাইছি, সেটা হয়তো গুনাহ জারিয়া হতো, তাই আল্লাহ তা চাননি৷ অথবা ভেবে নেবো, যে সময়টুকু সন্তান প্রতিপালনে ব্যয় করতাম, সে সময়টুকু আল্লাহ আমার জন্য আরও উত্তম কোন কাজে লাগাবেন। আয়িশা রা. কেই দেখোনা, উনার নিজের সন্তান ছিলোনা, অথচ উনি গোটা উম্মতের ‘মা’, আর উনি এত বড় স্কলার ছিলেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুম এর মত এত বড় বড় সাহাবীরাও হাদীসের মর্ম বুঝতে না পারলে তার দ্বারস্থ হতেন।
– এক্স্যাক্টলি৷ শুধু কি সে যুগেই? এইতো সেদিনই একটা আর্টিকেল পড়লাম, এক ভদ্রমহিলার নিজের সন্তান ছিলোনা, উনি পড়াশোনা করে এত বড় একটা ইসলামী ইনস্টিটিউশান দিয়েছেন, যেখানে শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে আলেম হচ্ছে। নিজে মা হতে পারেনি, তাই জাতির মা এর খেদমত আঞ্জাম দিচ্ছেন….
✪ আমার খুব কাছের দুজন দ্বীনি মানুষ, তাব্লীগী হলেও দুজনই দ্বীন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। কিন্তু দ্বীন সম্পর্কে নতুন কিছু শুনলেই প্রথম জন বেকে বসেন:
– আমাদের আকাবিররা এমন বলে যায়নি, এরা নতুন নতুন আলেম, দ্বীন সম্পর্কে এরা কতটুকু জানে?
দ্বিতীয়জন ঠিক বিপরীত। তিনি আকাবিরদের মতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলেন- কিছু আমি নতুন শুনছি মানেই তা ভুল নয়, যাচাই করেই দেখি না কেন? ইসলাম যখন আরবে নতুন আসে, তখন আরবরাও তো এমনটাই ভেবেছিলো।
✪ পরিচিত এক বাবা-মা আছেন, বেয়াড়া সন্তানকে কিছুতেই বশ করতে পারছেন না। সন্তানের কোন কথা মনপুত না হলেই তারা বলে ওঠেন-
এ যুগের বাচ্চারা এত বেয়াদব! আমাদের যুগে আমরা বাবা-মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও ভয় পেতাম, আর এরা মুখে মুখে কথা বলে? মাইরের উপর ওষুধ নাই।
তেমনি সন্তানের কথাতেও চূড়ান্ত বিরক্তির ছাপ- সব কিছুতে তুলনা! নিজেরা কত ভালো ছিলো, তা টাইম মেশিনে অতীত ঘুরে আসতে পারলে বোঝা যেতো…
আরেক বাবা-মায়ের গল্প, তারা সন্তানের মাঝে তাদের অনেক চিন্তার প্রতিফলন দেখতে পেয়ে খুশি হন, আবার অনেক বৈপরীত্যও দেখতে পান, কিছু ভুল শুধরে দেন, সন্তানদের চিন্তার আলোকে নিজেদের ভুলগুলোও শুধরে নেন। চোখ-কান খোলা রেখে যুগের পরিবর্তন, প্রজন্মের পরিবর্তন, বদলে যাওয়া পরিবেশ-পরিস্থিতি অবলোকন করেন। সময়ের সাথে সবকিছু একরকম থাকেনা, বদলে যায় পরিবেশ, বদল আসে মানুষের চিন্তায়-আচরনে। অতীতকে আকড়ে রেখে লাভ নেই, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার নামই জীবন। আমাদের বাবা-মায়েরা আমাদের যেভাবে বড় করেছেন, এই সময়ে তা খাটবেনা, সন্তানদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, ওরা বদলে যাচ্ছে তাই আমাদের চিন্তাভাবনাও বদলাতে হবে। এই কাপলের সন্তানেরা বড় হয় আর তারাও সন্তানদের ডেভলপমেন্ট, সাইকোলজি জানার চেষ্টা করেন। সন্তানদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়, তর্ক হয়, তারপর আবারও তারা সমঝোতার নতুন নতুন পথ খুজতে থাকেন। মতের কিছু ভিন্নতা সত্ত্বেও এই পরিবারের সন্তানেরা বাবা-মায়ের সাথে অন্যরকম একটা ‘বণ্ডিং’ অনুভব করে….
✪ পরিচিত এক দ্বীনি সংগঠন, যুগ যুগ ধরে এক সংবিধান মেনে চলে আসছে৷ সময়ের চাহিদা মেটাতে অনেক নিয়মই ব্যর্থ হচ্ছে। চিন্তাশীল ব্যক্তিরা বলছেন, পরিবর্তনের কথা। বাধ সাধছে বড়রা- ‘এতদিনের চলে আসা নিয়মে পরিবর্তন চায়? এই-তো ফিত্না। চলবে না এসব!’ ব্যস, শুরু হলো ভাঙনের খেলা, সংস্কারপন্থী চিন্তাশীলেরা দল থেকে বের হয়ে গেলেন। পুরণোকে আকড়ে ধরা অতীত নিয়েই পড়ে রইলেন, হারালেন কিছু মেধাবী, চিন্তাশীল তরুনকে, যারা হয়তো দলকে আরও একশ’ বছর সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতো! এই দলের যিনি শুরু করেছিলেন, তিনিও তো সমাজকে সংস্কারই করতে চেয়েছিলেন, তা না হলে এত বড় একটা জিনিস তিনি সেই চিন্তাহীনতার সময়ে কিভাবে গড়েছিলেন? পজিটিভ পরিবর্তনমাত্রই যদি ফিতনা হয়, তবে আরব সমাজের প্রচলিত অন্ধকার ভেঙে আলোকিত করা মানুষটিকেও তো সেই প্রথাগত ফিত্নার মুখেই পড়তে হয়েছিলো, এ কথা কে বোঝাবে!
আরেকটি ইসলামী দল, দলের এক মুরুব্বি ভুল করে ফেলেছেন, চিন্তাশীল ব্যক্তিরা পরিবর্তনে এগিয়ে এলেন- ভুলগুলো ঠিক করে ফেলা দরকার। বাধ সাধলো আবারো ভুল আকড়ে থাকা সমাজ- এত বড় মুরুব্বির ভুল ধরা! উনি ভুল করতেই পারেন না! সব ফিত্নাবাজ!
দিন যায় মাস যায় বছর যায়, ভুলের পরিমাণ অপ্রতিরোধ্যভাবে বাড়তে থাকে, চিন্তাশীলদের চিন্তাকে কটাক্ষ করে ছুড়ে ফেলা হয়। কিন্তু আসলে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনকে গ্রহণ করা না হলে একসময় ভাঙন অনিবার্য হয়ে পড়ে। হলোও তাই- সংস্কারপন্থীরা বিদ্রোহ করে আলাদা হয়ে গেলো! অথচ সেই পরিবর্তনটুকু শুরুতেই মেনে নিলে আজ এই দ্বিধাবিভক্ত দল হতে হতোনা। উম্মাহর কেন্দ্রীভূত শক্তিগুলো এভাবেই ভেঙে টুকরো টুকরো হতে লাগলো….
✪ দুই ভাইয়ের গল্প, বড় ভাই চরম উদ্যোগী মানুষ। কোন একটা কাজের পরিকল্পনা মাথায় আসলেই অল্পবিস্তর চিন্তা করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লেগে যান। ছোট ভাই সতর্ক মানুষ, মাথাভর্তি পরিকল্পনা, কিন্তু সফল হবে কিনা এই সাত পাচ ভাবতে ভাবতেই কাজে হাত দিতেই পারছেন না। বড় ভাই কিছু কাজে বিফল কিছু কাজে সফল হয়ে আজ অনেক বড় একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা, ছোট ভাই অনেক বেশি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তেমন ভালো কোন অর্জন করতে পারেন নি।
✪ দুই বন্ধুর গল্প- রাশেদ ও অয়ন। রাশেদ ভাবছিলো, দেশে আছি কত শান্তিতে। বিদেশ বিভুইয়ে স্ত্রী, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে পড়াশোনা করতে যাবো, এত ঝামেলা কি করে সামলাবো? ভাবতে ভাবতেই পাচটি বছর কেটে গেলো চাকরির ঘানি টেনে। বন্ধু অয়ন এরই মধ্যে বাইরে গিয়ে একটা খ্যাতনামা ভার্সিটি থেকে পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরে নামকরা একটা ভার্সিটিতে ঢুকেছে। অয়নের অবশ্য সেসব ভাবতে ভালো লাগে না, দুনিয়াবি চাহিদা আগের মত এখন আর নেই তার, কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিজেকে অনেকটা ব্যর্থ মনে হয়। স্ত্রী অবশ্য ভালো একটা বুদ্ধি দিয়েছে- এক দিকে যখন কিছু হলোই না, অন্য দিকেই দেখোনা, ভালো কিছু করা যায় কিনা! বুদ্ধিটা মনে ধরেছে তার, দুনিয়াবি দিকে যেহেতু আগে বাড়তে পারেনি, অন্তত সেই স্কিলটা কাজে লাগিয়ে আখিরাতের জন্য কিছু করা উচিৎ। তার মত বাংলাশিক্ষিত মানুষদের দ্বীনের কথা শোনানোর জন্য তার মত শিক্ষিত কিছু স্কিলড মানুষেরই এগিয়ে আসা দরকার। আরবি শেখাটা একদমই হয়নি, সেই ছোট্টবেলা হুজুরের কাছে কায়দা পড়েছিলো ওটুকুই। আজাদ হুজুরের নৈশ মাদ্রাসায় খোজ নিতে হবে, সুযোগ আছে কিনা। একটা দরজা বন্ধ হয়েছে তো কি, আল্লাহর দুনিয়ায় খোলা দরজা তো অনেক….
________________________
উদাহরণগুলো লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো- অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্ত্বিত্বের ছবি ফুটে উঠেছে। অনলাইন ইউনিভার্সিটিতে ‘ইসলামিক ম্যানেজমেন্ট’ নিয়ে পড়ার সময় নিজ আগ্রহে একটা সাজেস্টেড বই পড়েছিলাম, ডক্টর স্পেন্সার জনসনের লেখা “Who Moved My Cheese”। বইটিতে আমাদের ব্যক্তিত্বের এই ভিন্ন ভিন্ন দিকগুলো একটি গল্পের চারটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গল্পটাই বলি তবে….

এক গ্রামে স্নিফ (Sniff) ও স্কারি (Scurry) নামে দুটো ইদুর এবং হেম (Hem) ও হ (Haw) নামে দুটো ক্ষুদ্রমানব থাকতো। প্রতিদিন সকালে ওরা খাবারের সন্ধানে একটা পনির ফ্যাক্টরিতে (Cheese Station) যেত, সেখানে অনেকগুলো গোলকধাঁধা পেরিয়ে পনিরের গুদাম, পনির খুজে পাওয়াই তাদের প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ। হেম ও হ প্রতিদিন নিশ্চিন্তে পনির খায় আর তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, ওদিকে স্নিফ ও স্কারি খাওয়া-দাওয়ার সাথে চোখ-কান খোলা রেখে চলে। একদিন স্নিফ খেয়াল করে যে গুদামের পনিরগুলো আকারে ক্রমশ ছোট হচ্ছে, পরিমাণেও কমে আসছে, যেকোন সময় জায়গা পরিবর্তন করতে হতে পারে ভেবে জুতাগুলো হাতের কাছে রেখে দেয়। পরদিন এসে দেখে গুদামের সব পনির উধাও। স্কারি খুব চটপট সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ওরা বেশি সাত পাচ না ভেবেই নতুন কোন গুদামের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। হেম আর হ এর নিশ্চিন্ত দিন শেষ, এতদিনে তাদের টনক নড়ে। হঠাৎ করেই এতগুলো পনির লাপাত্তা হয়ে যাবে, এতদিনে এমনটা ওদের কল্পনায়ও আসেনি। ওরা হারানো পনির খুজে পেতে বই পড়া শুরু করে দেয়। হেম একরোখা ও অনঢ় স্বভাবের, সে এবার গুদামের দেয়াল ভাঙতে শুরু করে দেয় পনিরের খোজে- বের করতেই হবে, কে নিলো আমার পনির? হ কিছুটা খোলামনে চিন্তা করতে পারে, সে হেমকে পরামর্শ দেয় এভাবে এক জায়গায় বসে না থেকে বাইরে বের হয়ে খোজা শুরু করতে। হেম অনড়, বাইরের জগতে নানা ভয়, নানা শঙ্কা, সে এতদিন এই গুদামে থেকেছে, এটা নিয়েই স্বপ্ন বুনেছে, এখানেই তার সব স্বপ্ন-কল্পনা, সব আশা-ভরসা; এখান থেকে বের হলে আরো বড় বিপদে পড়ার ভয়। হ বাইরে যেতে চায়, যাক। ওদিকে স্নিফ- স্কারি টইটই করে খুজতে খুজতেই আবিস্কার করে ফেলে নতুন আরেক গুদাম- আকারে আগেরটার চেয়েও অনেক বড়, বাহারি রঙের, বাহারি স্বাদের কত কত পনির! ওদের সমস্ত পেরেশানি দূর হয়ে যায় নিমিষেই। হেমকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে হ একাই পথ ধরে। সে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে- আমি যদি কেবল অনিশ্চয়তার ‘ভয়’কে জয় করতে পারতাম, তবে কোন উদ্যোগটি নিতাম? অবশ্যই নতুন গুদাম খুজতে বের হতাম। খুজে পাই আর না পাই, পনিরহীন অবস্থায় পড়ে থাকার চেয়ে অন্তত পনিরের খোজে বের হওয়া উত্তম। নিজেই দেয়ালে লিখে দেয়- What would you do if you weren’t afraid?

গোলকধাঁধার নতুন পথ ধরে পনিরের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। কিছুদূর গিয়ে কয়েক টুকরা পনির পায়, তা দিয়ে ক্ষুধা মিটিয়ে আবার এগোতে থাকে। খুজতে খুজতে সহসাই নতুন গুদামের কাছে এসে পড়ে, অবাক হয়ে সে দেখে, স্নিফ ও স্কারি আগেই এসে বসে আছে। সে যার পর নাই খুশি হয়, আর হেম এর কথা ভাবতে থাকে – যে কিনা এখনো পুরনো গুদামেই ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়ে আছে। হ তার এই যাত্রাপথে কী কী শিখেছে, তা নতুন গুদামের দেয়ালে দেয়ালে লিখে রাখে৷ স্নিফ ও স্কারির কাছ থেকে সে চোখ কান খোলা রেখে চলার শিক্ষা নিয়েছে- প্রতিদিন সে পনির খায় আর পনিরের ঘ্রাণ নিয়ে, আকার মেপে দেখে, নতুন আবার কোন পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যায় কিনা।

গল্পটা এখানেই শেষ। এই গল্পে ‘পনির (cheese)’ হলো মানুষের জীবনের সুখ-শান্তি, সফলতা, অর্থ, সমৃদ্ধি, ভালো চাকুরী, স্ট্যাটাস ইত্যাদির প্রতীক। আর ৪ টি ক্যারেক্টার হলো ৪ জন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব অথবা আমাদের একই ব্যক্তির ৪ টি ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার প্রতিচ্ছবি-
‘হেম’ – পুরনোকে আকড়ে ধরে থাকা মানসিকতার প্রতিবিম্ব, যা পরিবর্তন সহ্য করতে পারেনা।
‘হ’ – চিন্তা-ভাবনা ও পর্যবেক্ষণের পর পরিবর্তনকে গ্রহণ করার মানসিকতা।
‘স্নিফ’ – চারপাশের পরিবেশ, পরিস্থিতি, পরিবর্তন আচ করে চলতে পারার মানসিকতা।
‘স্কারি’ – প্রয়োজনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারার মানসিকতা, ‘যেই ভাবা সেই কাজ’ এমনটা।
গল্প থেকে যে শিক্ষাগুলো লেখক তুলে এনেছেন সেগুলো হল-
১. জীবনের ‘চীজ’ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না হয়ে তা অর্জনে লেগে যাও – মানুষ জটিল চিন্তার অধিকারী জীব, তার মানে এই নয় যে সবকিছু কে অনাবশ্যকভাবেই কঠিন করে ফেলতে হবে।
২. এমনক সবচে বড় ‘চীজ’ও চিরস্থায়ী হয়না, তাই পরিবর্তনকে আসতে দিন – পরিবর্তনকে গ্রহণের জন্য চোখ-কান খোলা রেখে চলুন।
৩. দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই, একটি ‘চীজ’ বন্ধ হলেও নতুন ‘চীজ’ ঠিকই অপেক্ষা করছে – আপনি অগ্রসর হোন, পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করবে।
৪. পরিবর্তনকে মেনে না নিলে আপনি নিজেই অপাংক্তেয় হয়ে পড়বেন।
৫. জীবন থেমে থাকেনা, তাই আমাদেরকেও ছুটে চলতে হয়।
চমৎকার এই গল্পটি থেকে পাওয়া ইসলামিক শিক্ষাগুলো কী কী?
– আল্লাহ যখন আমাদের জন্য সম্ভাবনার একটি দরজা বন্ধ করে দেন, তখন অবশ্যই অন্য দরজা খুলে দেন, সেটি আমাদেরকেই খুজে নিতে হয়।
– ইতিবাচক পরিবর্তন গ্রহণে আমাদের প্রস্তুত থাকা উচিৎ, যতক্ষণ তা শর’ঈ নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। সাংঘর্ষিক হলে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
– সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শরয়ী সীমারেখার মধ্যে আমাদের চিন্তা-চেতনায়ও পরিবর্তন আনা জরুরী।
– সবসময় অনিশ্চয়তার ভয় না পেয়ে ভেবেচিন্তে কঠিন পদক্ষেপ নিয়ে তার উপর তাওয়াক্কুল করতে হয়, বাকিটা আল্লাহই সহজ করে দেবেন।
– প্রয়োজনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতেও জানতে হয়।
– অপ্রাপ্তি নিয়ে আক্ষেপ না করে প্রাপ্তির জন্য শুকরগুজার হতে হয়। বিনিময়ে আল্লাহ প্রাপ্তি আরও বাড়িয়ে দেন।
আসুন আমরা সেই প্রথম উদাহরণগুলোতে আবার ফিরে যাই, আরেকবার চোখ বুলাই। খুজে দেখি, উদাহরণগুলোতে কার ব্যক্তিত্ব কেমন, কোনটা ইতিবাচক কোনটা নেতিবাচক। আমাদের নিজেদের মাঝেও এমন কোন নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য আছে কিনা, যেটি বদলে ফেলা দরকার। একটু সচেতনভাবে চিন্তা করলে আমরা নিজেরাই বেছে নিতে পারি- আমরা আফসোস আর হতাশায় জীবন কাটিয়ে দেবো, নাকি ছোট ছোট সুখগুলো খুজে নিয়ে সুখী হবো; নিজের অবস্থানে গো ধরে পড়ে থাকবো, নাকি পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো। এই মিলিয়ে নেয়ার দায়িত্বটুকু আমার, আপনার……