প্যারেন্টিং ও ‘Roleplay’

আমরা বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে অনেকসময় কারো বাসায় বেড়াতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যাই, তাইনা? অন্যের বাসায় গিয়ে এটা ধরছে, ওটা ধরছে, জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলছে, ভাঙচুর করছে, অনেক বাচ্চাতো রীতিমতো তাণ্ডব লাগিয়ে দেয়। এই সমস্যার সমাধান কী?

সুন্দর একটা সমাধান আছে, মা হিসেবে আমি এখনো এপ্লাই করার সুযোগ পাইনি, তবে অন্য মায়েদের উপকারে লাগতে পারে, এজন্যই বলা। এই জাতীয় সমস্যাগুলো সমাধানের একটা উপায় হচ্ছে- Role Play করা। মানে ‘অভিনয় করে’ বাচ্চাকে শেখানো। তা কেমন?

বাচ্চাদের সাথে নিয়ে বাবা-মায়েরা মেহমান-মেহমান খেলতে পারেন। প্রথমে আমরা (বাবা-মায়েরা) বাচ্চার বাসায় বেড়াতে যাবো, আমরা গেস্ট, বাচ্চারা হোস্ট। তো হোস্টের বাসায় গিয়ে আমরা যেটা করবো, ওদেরকে একটা শিক্ষামূলক মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করবো। যেমন-
আমরা কোন জিনিস ধরতে চাইলে তখন এরকম বলতে পারি:
– আমরা যখন কারো বাসায় বেড়াতে যাই, আমরা জিনিসপত্র ধরার আগে অনুমতি নিয়ে নিই৷ যদি হোস্ট অনুমতি দেয়, তবেই একটু নেড়েচেড়ে দেখবো।
আচ্ছা, বাবা, আমি কি তোমার খেলনাটা একটু ধরে দেখতে পারি?

খাবার খেতে দিলে এভাবে বলতে পারি:
– খাবার খেতে দিলে আমরা খাবারের দোষ ধরবোনা। আমরা নিজেরাই সবার খাবার খেয়ে নিবোনা। বাবা, তোমার খাবার খুব মজা হয়েছে। আসো, তুমি আর আমরা ভাগাভাগি করে খাই।

একজন চিৎকার – চেচামেচি শুরু করতে পারেন, তখন আরেকজন তাকে এভাবে শেখালেন:
মানুষের বাসায় বেড়াতে গিয়ে এরকম করতে হয়না। চলো আমরা শান্ত হয়ে বসি।

তো অভিনয়ের এই পর্যায়ে এক্টরদের ভূমিকা পরিবর্তন হয়ে যাবে। এবার বাচ্চারা হবে গেস্ট, আর আমরা হোস্ট। বাচ্চারা আমাদের বাসায় বেড়াতে আসবে, আর আশা করা যায়, আমরা যা শিখিয়েছি তার কিছুটা হলেও ফীডব্যাক দেবে। কোনকিছু ভুল মনে হলে আমরা আবার শিখিয়ে দেবো। এভাবে চেষ্টা করতে থাকলে আশা করা যায়, সত্যি সত্যিই যখন অন্যের বাসায় যাবে, এই ম্যানারগুলো আস্তে আস্তে আয়ত্ত্বে নিয়ে আসবে (ইনশাআল্লাহ)।

তবে এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, আমরা যেন একদম অবুঝ বাচ্চার উপর এই লেভেলের টীচিং এপ্লাই করতে না যাই। আমার মনে হয়, মিনিমাম আড়াই-তিন বছরের আগে বাচ্চাদের মিনিমাম কার্টিসি বোঝার মত বুদ্ধি হয়না। আমরা ছোট থেকেই চর্চা করতে পারি, কিন্তু ওদের উপর ওভার-এক্সপেক্ট করে আবার যেন যুলুম না করে ফেলি।

আর হ্যা, আমরা যারা হোস্ট কিংবা আমাদের যাদের আত্মীয়দের চঞ্চল বাচ্চা আছে, তাদের প্রতি একটু এমপ্যাথেটিক হই। একবার এক মেয়ের কাছে (ওর এখনো বাচ্চা হয়নি) শুনেছিলাম, সে বলছিলো তার এক আত্মীয়ের এক বছর বয়সী বাচ্চা কথা শোনেনা তাই সে মাইর দিয়ে কথা শুনিয়েছে এবং তা গর্বের সাথে গল্পও করছিলো। আমি শুনে তব্দা খেয়ে গিয়েছিলাম- ১+ বছরের বাচ্চার তো ‘ম্যানারিজম’ বোঝার বয়সই হয়নি। কথা না শুনলে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করা যেতে পারে, কিন্তু গায়ে হাত তুলতে হবে? এটাতো ওর বয়সের তুলনায় জুলুম হয়ে যাবে। বেশিরভাগক্ষেত্রে যাদের নিজেদের বাচ্চা নেই, এরাই এই ভুল আন্দাজগুলো করে থাকে, কারণ বাচ্চাদের ডেভেলপমেন্টাল ফেইজের সাথে তারা একেবারেই পরিচিত নয়। তো আমরা যারা হোস্ট, যারা এখনও বাচ্চার বাবা-মা হইনি, তারাও যেন অন্যের বাচ্চার প্রতি, তাদের বাবা-মায়েদের প্রতি আরেকটু সহনশীল হই।

আমি এমন মা-ও দেখেছি, তার নিজের সামনে অন্য আরেক মায়ের বাচ্চা এসে তার বাচ্চাকে মারা শুরু করলো, তারপরেও সেই মা অন্য মা কিংবা বাচ্চাটির প্রতি তেমন কোন অভিযোগ করেনি। এই ঘটনাটা আমার নিজের জন্যেও শিক্ষা ছিলো।

[ ফুটনোট : মূল তথ্য জামীলা হো’র বই থেকে নেয়া। ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *