বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
প্রধান চারটি মাজহাব
পূর্ববর্তী আলোচনায় আমরা দেখেছি আব্বাসীয় খিলাফাতের ৮৫০-৯৫০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে Court Debate এবং Hypothetical Fiqh এর ব্যাপকতার কারণে মাজহাবগুলি পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকে এবং তাদের মাঝে মতপার্থক্য বাড়তে থাকে। একইসাথে যেকোন মূল্যে নিজের মাজহাবকে বিজয়ী করার প্রবণতা থেকে তাদের অনুসারীদের মাঝে Rigidity বাড়তে থাকে যা ৭৫০-৮৫০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যবর্তী মহান ইমামগণের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের পরবর্তী সময়ে এসকল মাজহাব ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে চারটি মাজহাব স্থায়ী রূপ লাভ করে। আমরা এই পর্বে প্রধান চারটি মাজহাবের গঠন এবং মূলনীতি আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ।
হানাফী মাজহাবঃ
এই মাজহাবের নামকরণ করা হয় ইমাম আবূ হানিফা(র.) এর নামে। তাঁর প্রকৃত নাম নু‘মান ইবনু সাবিত। তিনি ৭০৩ খ্রীষ্টাব্দে ইরাকের কুফায় জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক অবস্থায় ‘ইলম আল কালাম দিয়ে হাতেখড়ি হলেও পরবর্তীতে তিনি তা পরিত্যাগ করে ফিক্বহ এর অধ্যায়নে মনোযোগ দেন। তিনি তৎকালীন সমাজের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ হাম্মাদ ইবনু যায়দ(র.)-র কাছে ১৮ বছর অধ্যায়ন করেন। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার-আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি কথা হল আবূ হানিফা(র.) হাদীস শাস্ত্রে দূর্বল ছিলেন এজন্য তাঁর মাযহাবের সাথে হাদীসের এত সংঘর্ষ দেখতে পাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ভুল কথা। আবূ হানিফা(র.)-র প্রধান শিক্ষক হাম্মাদ ইবনু যায়েদ(র.) সহীহ বুখারীর ২৩০ টিরও অধিক এবং সহীহ মুসলিমের ৩৭০ টিরও অধিক হাদীসের রাবী। এথেকেই বুঝা যায়, আবূ হানিফা(র.) হাদীস শাস্ত্রে কত গভীর জ্ঞান রাখতেন।
আবূ হানিফা(র.)-র শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ
তিনি তাঁর ছাত্রদের সাথে শূরার মাধ্যমে কোন সমস্যার সমাধানে আসতেন। এজন্য হানাফী মাজহাব শুধুমাত্র আবূ হানিফা(র.) এরই নয় বরং তাঁর ছাত্রদেরও গবেষণার ফসল। তিনি তাঁর ছাত্রদের জন্য সমস্যা পেশ করতেন এবং তাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে একটি মতে্র উপর সকলে একমত হতেন। এভাবে যে মতের উপর তাঁরা একমত হতেন তা লিখে রাখতেন। তাঁরা সাধারণত কোন ঘটনা ঘটার পূর্বেই তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করতেন (Hypothetical Fiqh) এবং এজন্য তাঁদেরকে বলা হত ‘What Iffers’ এবং ‘আহলুর রায়’।
হানাফী মাজহাবে ইসলামী আইনের উৎসসমূহঃ
(১) কুরআন
(২) সুন্নাহঃ
ইরাকের হাদীস জালকারীদের হাত থেকে ফতোয়া রক্ষার জন্য আবূ হানিফা(র.) হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে মাশহূর(প্রসিদ্ধ) শর্ত দিয়েছিলেন। কোন হাদীসের শুধুমাত্র সহীহ হওয়াই তিনি ফতোয়া দানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনে করতেন না। প্রয়োজনে তিনি ইজতিহাদ করতেন। হানাফী মাজহাবের বেশ কিছু ফতোয়ার সাথে সহীহ হাদীসের সংঘর্ষ দেখতে পাওয়া যায় মূলত দুটি কারণে-
- ঐ বিষয়ে কোন সহীহ হাদীস তাঁর কাছে পৌঁছায়নি
- পৌঁছালেও মাশহূর না হওয়ার কারণে তিনি তা গ্রহণ করেননি।
(৩) সাহাবাগণের ইজমাঃ
হানাফী মাজহাবের ‘উলামাগণ সাহাবাগণের পরবর্তী যে কোন যুগেও মুসলিম উম্মাহর ‘আলিমদের ইজমা-কে উম্মাহর উপর বৈধ এবং আবশ্যিক বলে স্বীকার করে থাকেন।
(৪) সাহাবাগণের ব্যাক্তিগত মতামতঃ
যেসব বিষয়ে একাধিক সাহাবী একাধিক মত দিয়েছেন সেক্ষেত্রে তিনি সীমিত ইজতিহাদ এর মাধ্যমে একটি মত বেছে নিতেন।
(৫) কিয়াসঃ
যেসব বিষয়ে উপরোক্ত কোন উৎসেই সমাধান পাওয়া যেত না সেসব বিষয়ে তাবে‘ঈগণের কিয়াস গ্রহণ করা তিনি বাধ্যতামূলক মনে করতেন না। তিনি নিজেকে তাবে‘ঈগণের সমতূল্য মনে করতেন।
(৬) ইসতিহসান
(৭) ‘উরফ(Custom)
# ৬ ও ৭ নং পয়েন্ট নিয়ে ৩য় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
মালিকি মাজহাবঃ
এই মাজহাবের নামকরণ করা হয় ইমাম মালিক বিন আনাস(র.)-র নামে। তিনি ৭১৭ খ্রীষ্টাব্দে মাদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা ‘আমির ছিলেন মাদীনার একজন প্রখ্যাত সাহাবী। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঐ সময়ের প্রখ্যাত হাদীস বিশেষজ্ঞ ইবনু শিহাব আয যুহরি এবং আব্দুল্লাহ ইবনু উমার(রা.) এর মুক্তকৃত দাস নাফি’। তিনি একমাত্র হাজ্জ্ব ছাড়া আর কোন প্রয়োজনে মাদীনার বাইরে যাননি এবং সুদীর্ঘ ৪০ বছর মাদীনায় হাদীসের দারস দিয়েছেন।
ইমাম মালিক(র.)-র শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ
ইমাম মালিক(র.) তাঁর ছাত্রদেরকে হাদীস এবং আসার বর্ণনা করতেন এবং সেগুলোর প্রয়োগ সম্পর্কে আলোচনা করতেন। এছাড়া কখনো কখনো তিনি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা তাঁর ছাত্রদেরকে বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন এবং সেগুলো সমাধানের জন্য হাদীস ও আসার বর্ণনা করতেন। মুয়াত্তা সংকলন এর পর তিনি সেখান থেকে তাঁর ছাত্রদেরকে বর্ণনা করে পড়াতেন। কোন নতুন তথ্য পেলে তিনি এর সাথে কিছু সংযোজন করতেন কিংবা এথেকে কিছু বাদ দিতেন। তিনি ও তাঁর অনুসারীরা কেবল বাস্তব সমস্যার সমাধানই আলোচনা করতেন এবং কঠিনভাবে Hypothetical Fiqh পরিহার করতেন। কেউ তাঁর কাছে কোন কাল্পনিক সমস্যা(What if so and so…) নিয়ে আসলে তিনি কুফায় আবূ হানিফা(র.)–র সাথে দেখা করার পরামর্শ দিতেন। এজন্য তাঁদেরকে বলা হত ‘আহলুল হাদীস’।
মালিকি মাজহাবে ইসলামী আইনের উৎসসমূহঃ
(১) কুরআনঃ
(২) সুন্নাহঃ
ইমাম মালিক আবূ হানিফা(র.)-র মত হাদীস এর ক্ষেত্রে ‘মাশহূর’ শর্ত দেননি তবে কোন হাদীস মাদীনার প্রচলিত প্রথার সাথে সাংঘর্ষিক হলে তিনি তা গ্রহণ করতেন না। হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে এই ছিল তাঁর শর্ত। এর বাইরে কোন হাদীসের সনদে মিথ্যুক রাবী না থাকলে এবং কোন রাবীর স্মৃতিশক্তি প্রচণ্ড দূর্বল না হলে তিনি ঐ হাদীস গ্রহণ করতেন।
(৩) মাদীনার জনগণের ইজমাঃ
মাদীনার মানুষদের মাঝে সাধারণভাবে প্রচলিত রীতিনীতিগুলিকে ইমাম মালিক(র.) অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সুন্নাহ হিসেবে বিবেচনা করতেন। রাসূল(সা.) তাঁর জীবনের শেষ ১০ বছর মাদীনায় থাকার কারণে এবং মাদীনায় প্রচুর সংখ্যক সাহাবীদের বংশধর থাকার কারণে তিনি এমনটি মনে করতেন। তাঁর মতে, মাদীনার সকল মানুষদের মাঝে সাধারণভাবে প্রচলিত কাজ এক প্রকার সুন্নাহ যা সনদ আকারে নয় বরং কর্মের আকারে বর্ণিত হয়েছে।
(৪) সাহাবাগণের ইজমা
(৫) সাহাবীদের ব্যক্তিগত মতামতঃ
যখন কোন বিষয়ে একাধিক সাহাবী একাধিক মত দিতেন তখন মালিক(র.) প্রত্যেকটি মতকেই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতেন এবং নিজের ইজতিহাদ এর পরিবর্তে প্রতিটি মতকে প্রাধান্য দিতেন।
(৬) কিয়াস
(৭) মাদীনার সংস্কৃতিঃ
মাদীনার মানুষদের মাঝে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচলিত নিয়মকানুন যতক্ষণ পর্যন্ত হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক না হত ততক্ষণ তিনি সেগুলোকে ইসলামী আইনের উৎস হিসেবে বিবেচনা করতেন। তাঁর যুক্তি ছিল, যদিও এসব প্রথা বিক্ষিপ্তভাবে প্রচলিত তবুও সাহাবীদের থেকে বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসার একটা সম্ভাবনা আছে।
(৮) ইসতিসলাহঃ
‘ইসতিসলাহ’ আর ‘ইসতিহসান’ মূলত একই শুধু নাম ভিন্ন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ইসলামী শারী‘আহ অনুসারে যে ব্যক্তি হত্যার সাথে জড়িত শুধু সেই অপরাধী কিন্তু আলী(রা.) আইন করেছিলেন যদি একদল মানুষ কোন এক ব্যাক্তিকে হত্যা করে তবে গোটা দলের উপর হত্যার শাস্তি বর্তাবে। আরেকটি উদাহরণ হল- ইসলামী শারী‘আহ শুধুমাত্র যাকাতকে ফরয করে দিয়েছে এবং শাসক শ্রেণীর কর্তব্য তা আদায় করা। তবে যাকাত এর বাইরেও খলীফা চাইলে ইচ্ছামত ট্যাক্স আরোপ করতে পারে যদিও এই ব্যাপারে শারী‘আহ কিছু বলেনি।
(৯) ‘উরফ(Custom)
শাফিঈ মাজহাবঃ
এই মাজহাবের নামকরণ করা হয় ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইদ্রিস আশ শাফিঈ(র.) এর নামে। তিনি ৭৬৯ খ্রীষ্টাব্দে গাজায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমাম মালিক এর কাছে ফিক্বহ অধ্যায়নের উদ্দেশ্যে মাদীনায় গমন করেন এবং ‘আল মুয়াত্তা’ মুখস্থ করে ইমাম মালিককে প্রতিটি শব্দ হুবহু মুখস্থ বলে শোনান। এরপর ইয়েমেন এ কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর সেখান থেকে ইরাকে গমন করেন। ইরাকে ইমাম মুহাম্মাদ এর কাছে কিছুদিন অধ্যায়নের পর মিশরে ইমাম আল লাইস ইবনু সাদ এর কাছে পড়ার জন্য রওনা দেন। কিন্তু তিনি সেখানে পৌঁছানোর পূর্বেই ইমাম লাইস মারা যান এবং ইমাম শাফিঈ ইমাম লাইস এর ছাত্রদের কাছে অধ্যায়ন করেন।
ইমাম শাফিঈ(র.)-র শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ
ইমাম শাফিঈ(র.) হিজাজ ও ইরাকে অবস্থানকালীন তাঁর ফিক্বহ এর গবেষণাগুলিকে একটি গ্রন্থে সংকলিত করেন এবং এর নাম দেন ‘আল হুজ্জাহ’(The Evidence)। এখান থেকেই তিনি তাঁর ছাত্রদেরকে পড়ে শোনাতেন। মিশর গমনের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর যাবতীয় গবেষণা ও অধ্যায়নের ফলে তাঁর নামে যে মাজহাব গড়ে উঠে তার নাম দেওয়া হয় ‘আল মাজহাব আল কাদিম’(The Old School of Thought)। পরবর্তীতে মিশর গমনের পরে ইমাম আল লাইস এর ছাত্রদের কাছে অধ্যায়নের পর তিনি অনেক বিষয়ে তাঁর মত পরিবর্তন করেন এবং ‘আল উম্ম’(The Essence) নামে নতুন একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি এই বইটি সেখানে তাঁর ছাত্রদেরকে পড়ে শোনাতেন। মিশর গমনের পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর মাজহাবের নামকরণ করা হয় ‘আল মাজহাব আল জাদীদ’(The New School of Thought)। ইমাম শাফিঈ প্রথম ব্যাক্তি যিনি উসূল আল ফিক্বহ এর যাবতীয় মূলনীতি গ্রন্থাকারে সংকলিত করেন এবং এই গ্রন্থের নাম দেন ‘আর রিসালাহ’।
শাফিঈ মাজহাবে ইসলামী আইনের উৎসসমূহঃ
(১) কুরআন
(২) সুন্নাহঃ
হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ-র একমাত্র শর্ত ছিল- ‘সহীহ’।
(৩) সাহাবাগণের ইজমা
(৪) সাহাবীদের ব্যাক্তিগত মতামতঃ
কোন বিষয়ে একাধিক সাহাবীর একাধিক মত থাকলে তিনি আবূ হানিফা(র.)-র মত ইজতিহাদ এর ভিত্তিতে একটি মত বেছে নিতেন।
(৫) কিয়াস
(৬) ইসতিসহাবঃ
ইমাম শাফিঈ ‘ইসতিহসান’ ও ‘ইসতিসলাহ’ উভয়কেই বিদ‘আহ আখ্যা দিয়ে একই পদ্ধতি ‘ইসতিসহাব’ নামে প্রয়োগ করেছেন। এদুটিকে বিদ‘আহ বলার পিছনে তাঁর যুক্তি ছিল যেখানে শারী‘আহ নির্দিষ্ট আইন দিয়েছে সেখানে ইজতিহাদ এর ভিত্তিতে নিজস্ব সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এর উদাহরণে বলা যায়- যদি কোন ব্যক্তি হারিয়ে যায় এবং কেউ নিশ্চিত হতে না পারে যে সে জীবিত আছে না মৃত তবে ঐ ব্যাক্তি জীবিত থাকলে যেসব বিধান প্রযোজ্য হত ইসতিসহাব এর উপর ভিত্তি করে বলা হয় হারানো অবস্থাতেও ঐসব বিধান প্রযোজ্য হবে।
হাম্বলি মাজহাবঃ
এই মাজহাবের নামকরণ করা হয় ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল আশ শায়বানি(র.) এর নামে। তিনি ৭৭৮ খ্রীষ্টাব্দে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশেষজ্ঞ। তিনি কুরআন সৃষ্ট হওয়ার ব্যাপারে মু‘তাযিলাদের আক্বীদা পরিত্যাগ করেন এবং এজন্য খলীফা মামুন তাঁকে জেলবন্দী করে নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে খলীফা আল ওয়াসিক এর সময় পুনরায় তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ফলে পাঁচ বছর তিনি আত্নগোপন করে থাকেন এবং খলীফা মুতাওয়াক্কিল এর শাসনকালে মু‘তাযিলাদের আক্বীদা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রত্যাখান করা হয় এবং তিনি শিক্ষকতায় ফিরে আসেন ৮৫৫ খ্রীষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি শিক্ষকতা করে যান। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের মধ্যে ছিলেন ইমাম আবূ ইউসুফ(র.) ও ইমাম আশ শাফিঈ(র.)।
ইমাম আহমাদ এর শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ
ইমাম আহমাদ এর প্রধান লক্ষ্য ছিল হাদীস সংগ্রহ, বর্ণনা ও বাখ্যায়। তিনি প্রায় ৪০,০০০ হাদীস ও আসার(সাহাবাগণের অভিমত) এর বিশাল সংকলন গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন যার নাম ‘মুসনাদে আহমাদ’। তিনি এই গ্রন্থ থেকে তাঁর ছাত্রদেরকে হাদীস বর্ণনা করে শোনাতেন এবং বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এসব হাদীস ও আসার প্রয়োগ করতেন। তিনি তাঁর ছাত্রদেরকে তাঁর ফতোয়া লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করতেন। এজন্য তাঁর মাজহাবের ফতোয়াগুলি তাঁর ছাত্রদের দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়নি বরং তাঁর ছাত্রদের ছাত্রদের দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়।
হাম্বলী মাজহাবে ইসলামী আইনের উৎসসমূহঃ
(১) কুরআন
(২) সুন্নাহঃ
হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদের শর্ত ছিল- ‘মারফূ’’(Attributed directly to the Prophet)
(৩) সাহাবাগণের ইজমাঃ
ইমাম আহমাদের মতে সাহাবাগণের পরবর্তী যুগে ইজমা সম্ভব নয় এবং তিনি বলতেন-‘যে কেউ সাহাবাগণের পরবর্তী সময়ে ইজমা দাবী করবে সে মিথ্যুক’। যদিও পূর্বের তিন ইমামগণ সাহাবাগণের পরবর্তী যুগেও মুসলিম উম্মাহর ‘উলামাদের ইজমা গ্রহণযোগ্য বলেছেন।
(৪) সাহাবীদের ব্যাক্তিগত মতামতঃ
ইমাম মালিকের মত তিনিও যেসব বিষয়ে একাদিক সাহাবীর একাধিক মত থাকত সেসব মতের প্রত্যেকটিকেই গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতেন। এজন্যই তাঁর মাজহাবে কোন একটি বিষয়ে প্রায়ই একাধিক মত দেখা যায়।
(৫) দা‘ঈফ হাদীসঃ
কিয়াস এর উপর দা‘ঈফ হাদীসের প্রাধান্য হাম্বলী মাজহাবের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। তবে হাদীসের কোন বর্ণনাকারী যদি ফাসিক অথবা মিথ্যুক না হত তবেই ঐ দা‘ঈফ হাদীস তিনি গ্রহণ করতেন।
(৬) কিয়াস