আমার হোমপেজে প্রায়ই দ্বীনি ভাইদের পোষ্ট দেখি ইসলামিক ফেমিনিজম নিয়ে। এই বিষয়টায় তাদের মহাবিরক্তি ইনিয়ে বিনিয়ে আবার কখনও সরাসরি আক্রমণাত্মক ভাষায় তারা প্রকাশ করেন। বিষয়টা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠে যখন কমেন্টে রীতিমত যুদ্ধ লেগে যায়। একপক্ষ সীরাহ থেকে একটি ঘটনা কোট করে তো আরেকপক্ষ হাদীসের দলিল নিয়ে হাজির। মাঝখান থেকে আমি মহাবিরক্ত বোধ করি।

আচ্ছা, আল্লাহর কাছে একবার আত্মসমর্পণের পর কি আর কোন নারীবাদ কিংবা পুরুষবাদের স্থান আছে, না থাকতে পারে ? আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ মানেইতো আল্লাহর যাবতীয় সৃষ্টিরহস্য, তা আমাদের বুঝে আসুক আর নাই আসুক, যথার্থ বলে সন্তুষ্টচিত্তে স্বীকার করা। এই সৃষ্টিরহস্যের মধ্যে মানুষের ফিতরাতও অন্তর্ভুক্ত। পুরুষ এবং নারীর মাঝে পৃথক কিছু সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো আল্লাহই দিয়েছেন। এগুলো থাকার পেছনে তাদের কোন হাত নেই, এজন্য তাদেরকে দোষারোপ করাও যাবে না। যেমন- পুরুষেরা প্রকৃতিগতভাবেই অপেক্ষাকৃত সেক্সুয়াল ক্রিয়েচার। শায়খ তৌফিক চৌধুরী জান্নাতে পুরুষদের একাধিক স্ত্রী পাওয়ার একটা কারণ হিসেবে তাদের এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। এখন এই কথা বলা হলে কোন ছেলের মনে কিছুটা কষ্ট লাগতেই পারে এই ভেবে যে, “কই, আমিতো এমন নই!” কিন্তু আসলে সে এমনই। এটাই ইন জেনারেল ছেলেদের বৈশিষ্ট্য। একইভাবে, মেয়েদের একটি প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য হল স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা। যেকোন মেয়েরই একথা শুনলে মনে কষ্ট লাগাটাই স্বাভাবিক এবং সেও ঐ ছেলেটার মত ভাবতে পারে- “কই, আমিতো এমন নই!” কিন্তু আসলে সে এমনই। এটাই ইন জেনারেল মেয়েদের বৈশিষ্ট্য।

এখন আমাদেরকে পরস্পরের এই সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য এবং পার্থক্যগুলি নিয়ে দোষারোপ না করে বরং এগুলোকে আল্লাহর নির্ধারণ হিসেবেই সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিতে হবে। নিশ্চয়ই এর পেছনে আল্লাহর কোন হিকমাহ আছে। আমরা কি ভুলে গেছি ‘ঊমার(রা) এর সেই ঘটনা যেখানে একজন লোক “ঊমার(রা) কে তার স্ত্রীর ব্যাপারে অভিযোগ করতে এসে দেখে ‘ঊমার(রা) নিজেই…। তখন ‘ঊমার(রা) কী অসাধারণ মমতা মাখানো কথাই না বলেছিলেন ! তাই বলি, একে অপরকে আঘাত দিয়ে, কটুক্তি করে কী লাভ ? লাভতো কেবল শয়তানের। একপক্ষ যখন আরেকপক্ষকে আঘাত দেয় তখনই অপরপক্ষ জ্বলে ওঠে আর এই সুযোগে প্রথমপক্ষ “ইসলামিক ফেমিনিজম” টাইপের কথাবার্তার উদ্ভব ঘটায়। ধীরে ধীরে তা কমেন্টযুদ্ধে গিয়ে গড়ায়। আমরা প্রত্যেকেই মানুষ। আমাদের প্রত্যেকেরই অনুভূতি আছে। ইসলাম আমাদেরকে একে অপরের অনুভূতিকে আঘাত করতে শেখায় না, শ্রদ্ধা করতে শেখায়। ইসলামের দলীল দিয়ে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের মুসলিম ভাই-বোনদের অপমান করবেন না প্লীজ ! করলে কিন্তু আপনি আল্লাহর বিধানকেই করছেন।

১১ মে, ২০১৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *