সেদিন ফেইসবুক স্ক্রল করতে গিয়ে হঠাৎ মেডিকেলীয় একটা পেইজের একটা পোস্টে চোখ আটকে গেলো- বাংলাদেশে চালু হচ্ছে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক। হয়তো নিউজটা জেনে আমিও অনেকের মতই আনন্দিত হতাম, কিন্তু মেডিক্যাল ফিক্বহ নিয়ে বেশ কিছু বছর ঘাটাঘাটি করায় এই টপিকে প্রাথমিক জ্ঞানটুকু আমার ছিলো, যে এটা ইসলামী শরিয়তে সিদ্ধ নয়। যথারীতি islamqa.info তে ফতোয়াটাও পেয়ে গেলাম। ফেইসবুকে সেটা নিয়ে পোস্ট দেয়ার পর এ নিয়ে দ্বিমুখী মতামত পেলাম। বিষয়টা ফোকাসে আসার পর কিছু মানুষকে এ-ও বলতে শুনছি, ‘হুজুররা সব ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন, সব কিছু না জেনেই ফতোয়া দিয়ে বসেন। মাইকে আজান দেয়াও একসময় নিষিদ্ধ ছিলো, মিল্ক ব্যাংকও সিদ্ধ হয়ে যাবে।’ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত বেশ কিছু রিসার্চ পেপার পড়লাম, পক্ষে-বিপক্ষে একটা তুলনামূলক আলোচনা লেখা দরকার মনে হলো। যারা মনে করছেন, এটাকে না জেনেই নিষিদ্ধ বলা হচ্ছে, মূলত তাদের জন্যই এই লেখাটি- আসলে বিষয়টি কতটুকু ভুল বা কতটুকু ঠিক, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আদৌ তা বৈধ হওয়ার সুযোগ আছে কিনা, আশা করি বোধগম্য হবে।
সবচেয়ে ভয়ংকর যে তথ্য তা হচ্ছে, বর্তমান পৃথিবীতে ৩৫ টি দেশে ৩০০ এর বেশি হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক চালু আছে, তবে কোন মুসলিম দেশে এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত মিল্ক ব্যাংক নেই। তুর্কিতে পরীক্ষামূলক একটি পাইলট প্রোজেক্ট চালু হয়েছিলো, কিন্তু তা ধর্মীয় দিক বিবেচনায় পরবর্তীতে বন্ধ করে দেয়া হয়। শুধুমাত্র মালয়েশিয়া ও কুয়েতে পরীক্ষামূলক ‘মিল্ক এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রাম’ চালু আছে, কিন্তু তা এখনো ব্যাংক হিসেবে চালু করা হয়নি। বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হলেও বাস্তবে তা কতখানি ‘ইসলামী রাষ্ট্র’, আশা করি তা বিজ্ঞ মহলের জানা আছে। এই উদ্যোগটাকে অনেক ইসলামপন্থী ভাই-বোন আশান্বিত হলেও আদতে এটা একটা নতুন ফিত্নার দুয়ার উন্মোচন ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছেনা অন্তত আমার কাছে।
যাহোক পক্ষে-বিপক্কে আলোচনায় যৌক্তিক বিশ্লেষণটা তুলে ধরা দরকার, আশা করছি সংশ্লিষ্ট মহলের কানেও কোনভাবে পৌঁছবে, অন্তত সচেতন মুসলিমদের চিন্তার খোরাক যোগাবে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, আমরা কিন্তু শিশুকে অন্য মায়ের দুধ পান করানো নিষেধ বলছিনা কোনভাবেই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো নিজেই মা-হালিমার দুধ পান করেছেন। কিন্তু সমস্যা যেটা সেটা হচ্ছে, ইসলামে দুধ-মা সম্পর্কটা অনেকটা রক্তসম্পর্কের মতই, এর মাধ্যমে ‘হুরুমাতে রজাআত’ প্রতিষ্ঠিত হয়। দুধ-মা এবং সেই মায়ের ছেলেমেয়েরাও ঐ সন্তানের জন্য মাহরাম, ফলে এই পরিবারের সন্তানদের সাথে বৈবাহিক-সম্পর্ক স্থাপন হারাম। এক্ষেত্রে যেটা হয় যে দুই পরিবারের মধ্যে ছোট থেকেই জানাশোনা থাকে, ফলে বৈবাহিক ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টির অবকাশ আর থাকেনা। অন্যদিকে মিল্ক ব্যাংকিং চালু হলে যেটা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা হলো, এক বাচ্চা ব্যাংক থেকে কোন মায়ের মিল্ক কতবার খেলো, কতজন মহিলার কাছ থেকে খেলো, এগুলো হিসেব রাখা সাধারণ অসচেতন মানুষের জন্য খুব কঠিন হবে, ফলশ্রুতিতে বাচ্চারা জানবেনা, কে কে তার দুধ-মা, কারা কারা তার দুধ-ভাইবোন। ফলে পরিণত বয়সে বিয়ে শাদীর ক্ষেত্রে বিরাট এক হারাম-হালালের সন্দেহ সৃষ্টি হবে, কেউ হয়তো অজান্তেই তার দুধ-ভাইবোনকে বিয়ে করে ফেলবে। সচেতন মুসলিমদের জন্য এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব হলেও বেশিরভাগ জনগোষ্ঠিকে সচেতন ভাবাটা নিতান্তই বোকামি হবে, সেক্ষেত্রে বিরাট একটি জনশক্তি অজান্তেই ফিত্নার মাঝে জড়িয়ে যাবে।
প্রথমেই আসি, কতবার অন্য মায়ের দুধ পান করলে সেই মা দুধ-মা বলে বিবেচিত হবেন?
এ বিষয়ে ৩ টি মতামত পাওয়া যায়।
১। প্রথম মতামতটি হচ্ছে, মাহরাম সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মায়ের দুগ্ধ কতবার পান করেছে, কি পরিমাণ পান করেছে, সেটা বিবেচ্য নয়। সেটা একবার হলেও মাহরাম সম্পর্ক হয়ে যাবে। এই মতের পক্ষে আছে হানাফী ও মালিকি মাযহাবের ইমামগণ, ইমাম আওযায়ী, সুফিয়ান আস-সাওরী রহিমাহুমুল্লাহ। সাহাবীদের মধ্যে ইবনে মাস’উদ, ইবনে আব্বাস, ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম। যে আয়াত অনুসারে এই মত দেয়া হয়, সেটি হলো-
“তোমাদের জন্য অবৈধ করা হল তোমাদের মা,মেয়ে,বোন,ফুফু বা পিতার বোন,খালা বা মায়ের বোন, ভাই এবং বোনের মেয়ে,দুধ মা, দুধ বোন, ……” (সূরা নিসাঃ ২৩)
২। দ্বিতীয় মতটি হচ্ছে, দুধ-মা বিবেচিত হওয়ার জন্য ঐ মায়ের দুধ কমপক্ষে পূর্ণ ৫ বার পান করতে হবে। এর কম হলে হবেনা। এটি শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের মতামত। সাহাবাদের মধ্যে হযরত আয়িশা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা, তাবেঈদের মধ্যে সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব রহিমাহুল্লাহ। হযরত আয়িশা রা। হতে বর্ণিত,
“কুরআনে এসেছে দশবার দুধ পান বিয়ের জন্য হারাম সম্পর্ক তৈরি করে, তবে পরবর্তীতে এই বিধান মানসুখ হয়ে যায় এবং পাঁচবার দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়”।
৩। তৃতীয় মতটি হচ্ছে, দুধ-মা হতে হলে অন্তত ৩ বার খাওয়াতে হবে। এর স্বপক্ষে মত দিয়েছেন আবু সাওর, দাউদ যাহিরী, যাইদ ইবনে সাবিত রা ও হাম্বলী মাযহাবের কিছু আলিম। হাদীসে এসেছে,
“মাত্র এক-দু’বার দুধ-পানে বিবাহ নিষিদ্ধ হয়না”।
যে আলেমগণ ‘মিল্ক-ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছেন, তাদের যুক্তিঃ
এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছেন অল্প সংখ্যাক আলেম, যেমন ইউসুফ আল কারদাওউয়ী। তাদের পক্ষের যুক্তিগুলো নিম্নরূপ,
➤ যে সব নবজাতক শিশু বিশেষ কারণে মাতৃদুগ্ধ বঞ্চিত হয়, তাদের বাঁচাতে কিংবা নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে হলে মিল্ক ব্যাঙ্কের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সামাজিক প্রয়োজনীয়তা তথা মাসলাহাকে গুরুত্ব দেয়াটা জরুরী।
➤ ইবনে হাজম রহ. তার ‘আল-মুহাল্লা’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, দুধ-মা সম্পর্ক তখনই স্থাপিত হবে, যখন শিশু সরাসরি স্তন্যদাত্রী মায়ের স্তন্যপান করবে। মিল্ক ব্যাংক থেকে মিল্ক নিয়ে শিশুকে খাওয়ানো হলে যেহেতু সেই বিষয়টি আর থাকছেনা, তাই বৈবাহিক জটিলতার সম্ভাবনাও থাকেনা।
➤ ১৯৬০ সালে ‘আল আযহার’ এর ফতোয়া কমিটি মিল্ক ব্যাংক তৈরির পক্ষে ইবনে আবিদীন এর ‘দুররুল মুখতার’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কোন শিশুর দুধ-মা এর পরিচয় যদি অজানা থাকে এবং বিবাহের সময় পাত্র-পাত্রী দুধ-ভাই বোন কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত কোন প্রমাণ না থাকে এবং কোন সাক্ষীও না থাকে, সেক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, তারা দুধ-ভাইবোন নয় এবং তাদের মধ্যে বিয়েও জায়েয।
যে আলেমগণ ‘মিল্ক-ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে মত দিয়েছেন, তাদের যুক্তিঃ
এই পক্ষেই মত দিয়েছেন চার মাযহাবের অধিকাংশ আলেম। তাদের মতে, এক্ষেত্রে একটি সম্ভাব্য ক্ষতি প্রতিহত করতে গিয়ে আরেকটি সুস্পষ্ট বড় ক্ষতির দুয়ার উন্মোচিত হবে। কেননা
➤ যে শিশুকে মায়ের দুধ দেয়া সম্ভব না, সেই শিশুর জন্য দুধ-মা ভাড়া করা খুব কঠিন বিষয় নয়। তাছাড়া অনেক মা স্বেচ্ছায়ও নবজাতকদের দুধপান করিয়ে থাকেন। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির যুগে ফর্মুলা দুধ (কৌটার দুধ) সহজলভ্য, এটি দিয়ে সহজেই শিশুকে প্রতিপালন সম্ভব যদিও তা মায়ের দুধের বিকল্প হয়না। যেখানে এতগুলো সুযোগ রয়েছে নবজাতকের সমস্যা সমাধানের জন্য, সেখানে কেবল সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য বড় ও সুস্পষ্ট ক্ষতি বেছে নেয়ার সুযোগ নেই। ইসলামে মানুষের বংশধারা সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়, আর তা মানুষের ৫ টি প্রধান জরুরত সংরক্ষণের অন্তর্ভুক্ত।
➤ ইবনে ক্বুদামাহ রহ বলেন, মায়ের দুধ শিশুকে মুখ অথবা নাক দিয়ে ফোটায় ফোটায় পান করানো হলেও তা শিশুর হাড় ও মাংসে পরিণত হয় (হাড় ও মাংস তৈরিতে সাহায্য করবে)। তাই মিল্ক ব্যাংক থেকে দুধপান করানো হলে তাও শিশুর হাড় ও মাংসে পরিণত হবে। রাসূল সা. বলেছেন, “মাতৃদুগ্ধ পান অবশ্যই শিশুসন্তানের হাড়ের শক্তি বাড়ায় ও মাংস তৈরি করে”। তাই দুধ-সম্পর্ক ইসলামে অনেকটা রক্তের সম্পর্কের মতই, কারণ শরীরের ভেতর উভয়ের ভূমিকা কাছাকাছি। এই মতামতটি শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবের মতামতেরও অনুকূলে। (মায়ের দুধ কেবল বাচ্চার ক্ষুধা মেটায় না, এটা বাচ্চার জেনেটিক কোডেও প্রভাব ফেলে। বিস্তারিত এখানে- https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10221098362224242&id=1099385205)
☞ এই মতের আলোকে ১৯৮৫ সালের ২২-২৮ ডিসেম্বর জেদ্দায় অনুষ্ঠিত OIC এর ধর্মীয় বিধান বিষয়ক বোর্ড ‘মাজমাউল ফিক্বহিল ইসলামী আদ-দুওয়ালি’ এর বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, মিল্ক-ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা নিষিদ্ধ এবং এই ব্যাংক থেকে শিশুকে দুধ খাওয়ানো হারাম। কেননা, যদিও এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বেশ কিছু উপকারী দিক বিদ্যমান (মাসলাহা), তথাপি ক্ষতিকর দিক (মাফসাদা) তাকে ছাড়িয়ে গেছে। আর হালাল ও হারামের দুটোই যেখানে উপস্থিত, সেখানে হারাম বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে।
☞ একইভাবে ২০১১ সালের ১৫-১৭ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার জাতীয় ফতওয়া কমিটির ৯৭ তম বৈঠকেও একই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়- ‘যেহেতু ইসলামে বংশধারা সংরক্ষণ একটি জরুরী বিষয়, আর মিল্ক-ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বংশধারা-সংমিশ্রণ এবং সন্দেহজনক ও হারাম বিষয়ে জড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হবে, তাই মিল্ক ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করা নিষিদ্ধ। আর যেসব অপূরণ বাচ্চা মায়ের দুধ পাচ্ছেনা কিংবা সংক্রমণজনিত রোগের কারণে মায়েরা শিশুদের স্তন্যপান করাতে পারছেন না-অন্য মায়েরা স্বেচ্ছায় এসব বাচ্চাকে দুধপান করাতে পারবেন এবন উভয়ের পরিবারের মাঝে যোগাযোগ থাকতে হবে।
☞ ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি জার্নালে মালয়েশিয়ার একদল গবেষক শাফেয়ী মাযহাবের আলোকে এবং উলামাদের মতামত নিয়ে একটি ‘শরীয়াভিত্তিক মিল্ক ব্যাংক’ চালু করার প্রস্তাবনা দেয়। তাদের মতে, কঠোর আইনের আওতায় ৫ টি শর্ত পূরণ করে মিল্ক ব্যাংক চালু করা হলে তা শরীয়া মোতাবেক হবে-
১। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হবে কেবল সেইসব জরুরী অবস্থার জন্য, যখন নবজাতক মায়ের দুধ না পেয়ে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন এমন।
২। এই ব্যাংক কোন ব্যবসায়ী লাভের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হবেনা।
৩। এখান থেকে যে কেউ ইচ্ছেমতো নিতে পারবে না, কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শে যেসব শিশুর জন্য দুধ পান খুব জরুরী, তাদের জন্যই ব্যাংক থেকে নেয়া যাবে।
৪। ব্যাংকের সকল কার্যক্রম মুসলিমদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যদি অমুসলিম কেউ পরিচালনা পরিষদে থাকে, তাহলে তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইসলামী শরীইয়ার মূলনীতির উপর উপযুক্ত ট্রেনিং দিতে হবে।
৫। কোন শিশুকে একই মায়ের দুধ ৪ বারের বেশি দেওয়া হবেনা।
তবে উপরোক্ত প্রস্তাবনা এখনো জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত হয়নি এবং মালয়েশিয়ায় এখনো মিলব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
সারাবিশ্বের মূলধারার আলেমগণ যেখানে এখন পর্যন্ত ‘হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি, পৃথিবীর প্রতিষ্ঠিত মুসলিম দেশগুলো পর্যন্ত তা প্রতিষ্ঠার সাহস করেনি, সেখানে বাংলাদেশের মত নামেমাত্র মুসলিম দেশে কীভাবে শরয়ী আইন মেনে ‘মিল্ক ব্যাংক’ পরিচালনা করবে, এটি একটি বড় প্রশ্ন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মহল ও আলেম সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরী বলে মনে করছি।
অনেকে বলছেন, একজন সন্তানের জন্য একজন ডোনার হলে সেই সন্তানের জন্য এবং মায়ের জন্যও আইডেন্টিটি ট্রেস করা সম্ভব হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সিঙ্গেল চাইল্ড সিঙ্গেল ডোনার সবসময় মেইনটেইন করা সম্ভব নাও হতে পারে। তখন চলে আসবে সবচেয়ে কমপ্লেক্স ইস্যু সিঙ্গেল চাইল্ড মাল্টিপল ডোনার। সেক্ষেত্রে মাল্টিপল ডোনার মিক্স আপের ক্ষেত্রে খুব স্ট্রিকটলি ডোনার প্যাক আলাদা করে লেবেল করা লাগবে যেন প্রত্যকে ডোনারের আইডেন্টিটি ট্রেস করা যায়। এখানে আবারও প্রশ্ন আসে: স্ট্রিক্টলি মেইন্টেইন করার যে জটিল প্রক্রিয়ার কথা আমরা বলছি, বিড়ালের গলায় সেই ঘণ্টা বাধবে কে? কথাগুলো বলা যতটা সহজ, প্রয়োগ করা ততটাই কঠিন। যেখানে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলো অদ্যাবধি পারেনি এবং কিছু দেশ পাইলট প্রোজেক্ট চালু করেও তা আবার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
তবে এর সঠিক শরয়ী সমাধান কী? একটি উত্তম সমাধান হতে পারে ‘মিল্ক-এক্সচেইঞ্জ প্রোগ্রাম’। মালয়েশিয়ায় এই কাজটি করা হচ্ছে “Human Milk 4 Human Babies – Malaysia” নামে একটি ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে। এখানে আগ্রহী দুধ-মায়েরা ফর্ম ফিলাপ করে রেজিস্ট্রেশন করেন এবং যে মায়েরা শিশুদের স্তন্যপান করাতে পারছেন না, তারা দুধ-শিশুদের নাম রেজিস্ট্রেশন করেন। এভাবে নিজেরাই নিজেদের সন্তানদের জন্য দুধ-মা খুজে নেন। এরকম একটি উদ্যোগ যদি বাংলাদেশেও নেয়া হতো, এই ফিত্নামূলক ব্যাংকের চেয়ে তা অনেক বেশি কার্যকরী ও শরীয়াহসম্মত হবে বলে মনে করি। (কেউ দায়িত্ব নিয়ে এরকম উদ্যোগ নিতে চাইলে জানাতে পারেন, সাথে থাকার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ।)
ওয়ামা তাউফীক্বী ইল্লা বিল্লাহ।