ভালো শাশুড়িদের গল্প…

কর্তা কহিলো: আম্মা, তোমার বউমার তো ইন্টার্নি ৪ মাস হয়ে গেলো, আর ৮ মাস পরেই ঢাকা ফিরে যাবে, অনুভূতি কি??
– ও চলে গেলে আমরা খুব কষ্ট পাবোরে বাবা, বাসাটাই ফাকা হয়ে যাবে। কিন্তু ও তো কষ্ট পাবেনা, ও তো যাচ্ছে আসল মানুষের কাছে…

কহিলেম: মা, ‘আসল মানুষ’ বলতে কি আসলেই কিছু আছে? যে যেখানে থেকে ধাতস্থ হয়ে যায়, সেটাই তার ঠিকানা হয়ে যায়। এই রাজশাহীতে আমার বয়স ছ’বছর, এখন তো ঢাকারচে এটাই আমার আপন মনে হয়, শ্বশুরবাড়ি আছি দু’বছর, সত্যি বলতে এটাকে নিজের বাবার বাসা থেকেও কাছের মনে হয়…

কথাগুলো মা ও তার ছেলে বিশ্বাস করলেন কিনা জানা নেই। ভালো শাশুড়িদের গল্প লিখেছিলেন রেহনুমা বিনতে আনিস আপু, সেই অবিবাহিত অবস্থায় পড়ে পড়ে ভাবতাম: আহা! এমনও হয়! আলহামদুলিল্লাহ, আমারও লিখতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। কোন বউয়ের কাছেই তার শাশুড়ি ভালো নয়, নয় কোন শাশুড়ির কাছেই তার বউ। ১০০% ভালো তো কোন রক্তমাংসের মানুষই হয়না, তবে আমার শাশুড়িকে ভালোমন্দের গোণাগুনতি শেষেই ‘ভালো শাশুড়ি’র কাতারে ফেলতে আমার দ্বিধা নেই, এটা সত্যই: এই অযোগ্যের জীবনে অনেক পাওয়ার মধ্যে এটিও একটি। এ বাড়ির কেউ গরুর বট(ভুড়ি) খায়না, শুটকি খায়না: পারিবারিকভাবেই এটা আমার বেশ পছন্দ। মা বাবা ঈদের আগে থেকেই এটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন: বট রান্না করতে হবে, ছোট বউ খায় যে। ডিউটি থেকে এসে হয়তো কোনদিন দেখবো, মা না জানিয়েই পোলাও গোশত রান্না করে রেখেছেন: তুমি কদিন খেতে পারছোনা তাই রান্না করলাম। রোযা রাখলেই হয়েছে, আমি কাউকে না জানালেও মা ঠিক আন্দাজ করেই দুনিয়ার ইফতার কিনে আনবেন, লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়: কি দরকার ছিলো, মা! ছুটিতে বাসায় বেড়াতে গেলে ফিরে এসেই দেখবো ওয়াশরুমের পুরনো হ্যান্ডওয়াশটা বদলে নতুন আরেকটা দেওয়া হয়েছে, বদলে গেছে বিছানার চাদরটাও….
আর শ্বশুর বাবা? মানুষটা অনেকের কাছে বেজায় রাগি হলেও এই বউমার কাছে মাটির মানুষ: এত ভালো বাবাও হয়! আর ডাক্তারি কোন পড়া জিজ্ঞেস করলে তো হয়েছেই: বিদ্যের ঝুলি খুলে পড়ানো শুরু করবেন….

দোষ ধরলে অনেক ধরা যায়, তা নিয়ে খিস্তিখেউড় বেশ রচনা করা যায়, আবার গুণ ধরলেও ধরা যায়। আমি নিজে এক বাড়ির বউ, আরেক বাড়ির ননদ: আমি নিজেও জানি, ছেলে কিংবা ছেলেবউ নিয়ে মায়েদের সেন্টিমেন্ট কেমন, নিজের মা-কেই অনেক কিছু পজিটিভিলি বুঝাতে গিয়ে গলদঘর্ম হই, সেখানে শাশুড়ি মা ফেরেশতা হবেন, এমনটা ভাবাই তো অপরাধ! অন্তত আমার মত অকর্মা বাউন্ডুলে টাইপ বউমার জন্য আমার শাশুড়ি কিংবা শ্বশুরবাড়িটাও আল্লাহর দেয়া একটা বড় ব্লেসিং। নিজের মাবাবার স্থানে অন্য কাউকে রিপ্লেস করা যায়না, তবু বলবো মাবাবার পরের স্থানটুকু এই মাবাবাকে দিতে কুণ্ঠা নেই….

এই রাজশাহীর মাটি, এত্ত এত্ত কাছের মানুষ, আমার এত স্বপ্নের মেডিকেল ক্যাম্পাস, টিবি রোডের শুরুটা, শ্বশুরবাড়ির প্রতিটি জায়গা, বিকেলের ছাদ কিংবা আমার খুপড়ি রুমটা… খুব মিস করবো একসময়। আসলে মানুষের জীবনটাই যে এমন: গ্রীষ্মের দুপুরে ছুটে চলা পথিকের গাছের ছায়ায় নেয়া সামান্য বিশ্রামের অবসর…. এটুকুই, তাইনা?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *