বিবাহের দিন তারিখ ধার্য হইবার পর ভাইয়া জিজ্ঞাসা করলো: কি রে, মাহর কত নিবি, ঠিকঠাক করেছিস? আব্বু & পাত্রের বাবা এই বিষয়টা তোদের দুজনের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমিতো বিয়ে করেছিলাম ফাতেমী মাহর এ, যার বর্তমান মূল্য দেড় লাখ টাকার মত। তোর কী ইচ্ছে?
– ভাইয়া, আমার তো পুরোটাই মাফ করে দেয়ার ইচ্ছা। বেচারা কেবল নতুন চাকরি পেয়েছে। ফেইসবুকে একটা গল্প পড়েছিলাম সূরা মাহর নিয়ে, এক গরীব সাহাবীর ঘটনা অনুসরণে। সেই থেকে এমন একটা প্ল্যান ছিলো: আমার খুব প্রিয় একটা সূরা, সূরাহ ইব্রাহীম দিয়েই মাহর ফিক্স করি। কি বলো??
– আচ্ছা, ঠিকাছে, আলেমদের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখ উনারা কি বলেন।
অতঃপর আলোচনা শেষে যা জানা গেলো: অল্প কিছু সালাফী আলেম বিষয়টাকে অনুমোদন দিয়েছেন, তবে হানাফী আলেমরা একেবারেই এটা মানতে নারাজ। যে সাহাবীর কথা উল্লেখ করা হয়, উনি ছিলেন একেবারেই নিঃস্ব, কিন্তু যে ছেলের সামর্থ্য আছে, রাসূলের সুন্নাহ অনুযায়ী অর্থ দিয়ে মাহর দেয়াটাই বেশি যৌক্তিক। সূরাহ দিতে চাইলে হাদিয়া হিসেবে দেয়া যেতে পারে। অতঃপর….
– তো কত টাকা নিবি? ফাতেমী?
– নাহ, দেড় লাখ টাকা, বেশিই হয়ে যায়। দেখি, কম কিছু পাই কিনা।(islamqa.info & আরো কিছু লিংক ঘাটাঘাটির পর) ভাইয়া, উম্মুল মুমিনীনদের অধিকাংশের বিয়ে হয়েছে ৫০০ দিরহামে। আয়িশা রা: এর বিয়ের মাহরও ৫০০ দিরহাম, এটার বর্তমান মূল্য ৩২ হাজার টাকার কাছাকাছি। এটাই আমার সিদ্ধান্ত+ সূরাহ ইব্রাহীম দিতে চাইলে উনি হাদিয়া দিবেন, আমিও তাকে আরেকটি সূরাহ হাদিয়া দিতে চাই: সূরা দাহর/ইনসান।
– আচ্ছা, আলহামদুলিল্লাহ, এটাই ফাইনাল।
অতঃপর আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হইলো এবং তাহারা যথারীতি: একটা ডাক্তার মেয়ের বিয়ে কীভাবে ৩২ হাজার টাকায় হতে পারে? যেখানে নরমাল বিয়েই ৫/৭ লাখের নিচে হয়না। এ হতে পারেনা, আমাদের মান-ইজ্জতের ব্যাপার।
অন্দর থেকে বিতণ্ডা শুনছিলাম, নিজের বিয়ে, নিজে কথা বলা অশোভন। ভাইয়াকে ডেকে বললাম: তুমি একটু গিয়ে বুঝিয়ে বলো, ৩২ হাজারে যদি মান ইজ্জত না টিকে, তবে ৫/৭ লাখেও টিকবেনা। আমরা অন্যের কাছ থেকে জোর করে সাধ্যাতিরিক্ত টাকা যুলুম করে আদায় করে ইজ্জত বাড়ানোর পক্ষিপাতি না, বরং অন্যের উপর রহম করেই ইজ্জত বাড়াতে চাই। সম্মান দেয়ার মালিক আল্লাহ, আমরা অল্পে তুষ্ট থাকলে তাতেই আল্লাহ সম্মান দেবেন, লোকের কাছে টাকায় বড় হয়ে সম্মানী হতে চাইনা। বিয়েটা আমার, মাহর আমার, এই বিষয়ে অন্তত ছাড় দিতে আমি পারবোনা।
ভাগ্য সাহসীদের পক্ষে, কথাটা ভুল নয়। কিংবা যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহই তার পথ বাতলে দেন। ভাইয়া বুঝিয়ে বলাতে ঐ আত্মীয়রা মেনে নিলেন, আর দুই কথা হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।
বিয়ের আগের দিন পাত্র এসে ভাইয়ার কাছে ৫০০ দিরহামের চেক বুঝে দিয়ে গেলেন। এবং বিয়ে……
বিঃদ্রঃ আমার এই পোস্টের উদ্দেশ্য, মাহর সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে অনেকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু ইনফো দিয়ে সাহায্য করা। আর অভিভাবক লেভেলের কেউ যদি থাকেন, তারাও হয়তো উৎসাহ পাবেন, তাদের সন্তানদেরকে দ্বীনী বিষয়ে সাহায্য করতে। আর হ্যা, মোটাদাগে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা: মাহর কম নিতেই হবে, এমন নয়। পাত্রের সংগতির মধ্যে যদি কেউ বেশি এমাউন্ট নিতে অথবা দিতে চায়, সেটাও অনুমোদিত। তবে সমস্যা কেবল সাধ্যের অতিরিক্ত চাপিয়ে নাম জশের জন্য অন্যের উপর যুলুম করে বিয়ের মত সহজ বিষয়টাকে কঠিন বানানোতে। কামিয়াবী দ্বীনের মধ্যেই, আল্লাহ আমাদেরকে বোঝার সামর্থ্য দিন, আমাদের সবার জন্য সহজ করুন।
info source: (https://islamqa.info/en/3119)