রিক্সাচালক

গতকাল পুরান ঢাকার মিটফোর্ড যাচ্ছিলাম। আসার পথে একটা ভিন্ন ধরণের অভিজ্ঞতা হল। আসার সময় এক মাজারের সামনে দিয়ে রিক্সা আসছিল। ভাবলাম রিক্সাচালক মামার সাথে কিছু কথা বলি-

আমিঃ কী মামা, মাজার-টাজারে আসেন নাকি ?
মামাঃ শুনেন, মাজার হইল গিয়া ফার্সি শব্দ, এগুলা পুরাই শির্ক। আরে এ্যারা কয় নাকি ‘পীরে কামেল’, আবূ বকর, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুম এদের টাইটেল কী ছিল ? এ্যারা কি ওদের চাইতে বড় হয়ে গেছে নাকি ? কয়, যেই আল্লাহ সেই নবী। সব দুই নম্বরি, একেবারে শির্ক।
আমিঃ (স্তম্ভিত) ঠিক মামা। তা আপনি কি ঈদ এ মিলাদুন্নাবি করেন নাকি ?
মামাঃ কী যে বলেন ! সাহাবীরা এগুলা করসে নাকি ?
আমিঃ এটা কবে শুরু হইসে জানেন?
মামাঃ পাঁচশ কত হিজরী যেন…
আমিঃ (টাশকিত) জ্বী, ৫৯৭ হিজরী
মামাঃ রাসূল এর জামানায় যে ইবাদাত ছিল না সেটা করাই বিদয়াত, বুঝলেন মামা ? এগুলারে বিদয়াত কয়। এই জিনিষটাও বিদয়াত।
আমিঃ (বাকরুদ্ধ) জ্বী মামা বুঝলাম।
এই পর্যায়ে এসে মামা কিছু উর্দু কিতাব থেকে কী যেন এক ‘ফরিদপুরী’ আলেমের কিছু ফতোয়া উর্দুতে শোনাল যার কিছুই বুঝলাম না। একটু পরেই আবার তিনি রুমি-র (সূফীবাদের উপর যারা পড়াশোনা করেছেন তারা চিনবেন হয়ত) কিছু কথা ফার্সিতে মুখস্থ শোনালেন। এরপর-
মামাঃ এই যে সব দেখেন না, পাগলের মত ‘হু’ ‘হু’ যিকির করে অথচ আল্লাহ-র রাসূল বলছেন- তোমরা মনে মনে যিকির কর। এরা কি আল্লাহ-র রাসূল এর চাইতে বেশি বুঝে?

এই পর্যায়ে আমি তার পরিবারের প্রতি দায়িত্বের ব্যাপারে কথা বলতে শুরু করলে-
মামাঃ আল্লাহ কুরআনে বলছেন- ‘তোমরা নিজে বাঁচ, পরিবারকে বাঁচাও'(আরবী সহ), ওইটা আমি দেখি মামা, আর আমার রুজি নিয়ে কোন আফসোস নাই, হালাল রুজি। রিক্সা নিয়ে বের হওয়ার সময় বলি-‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’, রিক্সা থামালে বলি-‘আলহামদুলিল্লাহ’, আমার রিক্সা চালানোটাই ইবাদাত হয়ে যায়।

আমিঃ মামা। আপনি এই জীবনে রিক্সা চালাচ্ছেন এটা একটা পরীক্ষা, আমরা সবাই কোন না কোন পরীক্ষা দিচ্ছি। ইনশা আল্লাহ ঐ জীবনে আমরা একসাথে থাকব, সেখানে কোন পরীক্ষা নাই।
মামঃ ইনশা আল্লাহ।
(সংক্ষেপিত)

পুরান ঢাকা,

২৮ ডিসেম্বর, ২০১২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *