এক আপু বলেছিলেন, Adoption(সন্তান দত্তক নেয়া) এর ইসলামিক বিধান নিয়ে লিখতে। চেষ্টা করছি, ইনশাআল্লাহ।
♦ Adoption কি ইসলামে জায়েয?
– জ্বি, অল্পকিছু শর্তসাপেক্ষে সন্তান দত্তক নেয়া ইসলামে জায়েয। আর যদি কোন ইয়াতিম সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়া হয়, তবে তা কেবল জায়েযই নয়, বরং এই কাজে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং পুরস্কার হিসেবে জান্নাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর রাসূল সা. নিজেই ইয়াতীম ছিলেন এবং আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তাকে তার দাদা এবং পরে চাচাকে দিয়েই লালন পালন করিয়েছেন।
সাহল ইবনু সা‘দ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি ও ইয়াতীমের দেখাশুনাকারী জান্নাতে এভাবে (একত্রে) থাকব।” এ কথা বলার সময় তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিয়ে ইঙ্গিত করে দেখালেন। [বুখারী]
★ শর্তগুলো নিম্নরূপ:
১. পালক সন্তানকে তার নিজ বাবার(biological father) কিংবা নিজ পরিবারের পরিচয়েই পরিচিত হতে দিতে হবে, কেননা হাশরের ময়দানে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নিজের এবং পিতার নাম ধরেই ডাকা হবে(যেমন, আল্লাহর রাসূলের খাদেম যায়েদ প্রথমে জায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ বলে পরিচিত হলেও পরবর্তীতে আল্লাহ এটার নিষিদ্ধতা জানিয়ে দিলেন এবং পরবর্তীতে তাকে জায়েদ ইবনে হারীসাহ নামেই ডাকা হতো)। এমনকি তাকেও জানিয়ে রাখা উচিৎ যে সে অন্য কারও সন্তান কিন্তু তারা তাকে নিজ সন্তানের মতই লালন পালন করার চেষ্টা করবে। এতে করে সেই সন্তান প্রথম থেকে মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, নয়তো পরবর্তীতে বড় হওয়ার পর অন্য কারো কাছে শুনলে ব্যাপারটা নিয়ে সে অনভিপ্রেত ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগতে শুরু করতে পারে। এজন্য ইসলাম সত্যকে সত্য বলে জানানোতেই বিশ্বাসী।
২. যেহেতু এই সন্তান পরিবারের কারো মাহরাম না, তাই বালেগ হওয়ার পর থেকে পরিবারের গাইরে মাহরামদের তার থেকে যথাযথ শরয়ী পর্দা করতে হবে। যেমন: ছেলে হলে মা ও বোনেরা পর্দা করবেন, মেয়ে হলে বাবা ও ভাইদের থেকে পর্দা করবে।
৩. যদি বাচ্চাকে ২ বছর বয়সের মধ্যে ৫ অথবা তার অধিক সংখ্যক বার কোন মহিলা স্তন্যপান করায়, তাহলে বাচ্চাটি সেই মহিলার স্বামী, সন্তান ও ভাইদের জন্যেও মাহরাম হবে। সেক্ষেত্রে বাচ্চা বালেগ হওয়ার পর তার সাথে আর পর্দা করার প্রয়োজন নেই। আবার কোন স্ত্রী যদি নিজ ভাই/বোনের ছেলেকে দত্তক নেয়, কিংবা কোন স্বামী যদি নিজ ভাই/ বোনের মেয়েকে দত্তক নেয়, তবে সেক্ষেত্রেও সম্পর্কটি মাহরাম হওয়ায় শরয়ী পর্দার প্রয়োজন নেই, যদিও ছেলেমেয়েদের সাথে পর্দা বজায় থাকে, কারণ কাজিন মাহরাম নয়।
উপরোক্ত শর্তসাপেক্ষে দত্তক নেয়া জায়েজ। তবে যেহেতু ইসলামী দত্তক পদ্ধতি প্রচলিত দত্তক পদ্ধতির সাথে কিছুটা সাংঘর্ষিক, তাই উলামাদের অনেকে এই বিষয়টিকে Adoption(দত্তক নেয়া) না বলে বরং Sponsoring(দায়িত্বগ্রহণ বা ভরণপোষণ) শব্দটি ব্যবহার করতে অধিক আগ্রহী। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই অনেকে বলে থাকেন যে, Adoption ইসলামে অনুমোদিত নয়। এই কথাটি দিয়ে উনারা এটাই বুঝিয়ে থাকেন যে, প্রচলিত Adoption বলতে যা বোঝায়, তা অনুমোদিত নয়। কিন্তু ইসলামের দেয়া শর্তগুলো পালন করে যে Adoption নেয়া হয়, সেটা অনুমোদিত।
ওয়াল্লা-হু আ’লামু বিসসাওয়াব।
♦ Adoption নিয়ে এক মুসলিম দম্পতির অভিজ্ঞতা: https://youtube.com/watch?v=7CWEPGJutcQ