সব বিয়ের দাওয়াত কি গ্রহণযোগ্য ?

ফ্রেন্ড সার্কেলে বিয়ের ধুম চলছে, বিয়ের দাওয়াত পাচ্ছিনা এমন সপ্তাহ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে: দাওয়াত পেয়েও খুব খুব কাছের বান্ধবীদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও উপস্থিত হতে পারছিনা, হয়তো কোন বিশেষ কারণেই অথবা সেসব কারণ ছাড়াও। সত্য কারণটা বলা দরকার মনে করেই এই পোস্টের অবতারণা। একটা বিষয় আমি বেশ দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি, সেটা হচ্ছে: আদর্শ নিয়ে চলা কোন ব্যক্তির অন্তত আদর্শের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়াটা চলেনা, সেটা যে আদর্শই হোক। আর একজন মুসলমানের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের আদর্শ হচ্ছে ইসলাম, তথা কুরআন: যেসব জায়গায় ছাড় দেয়ার সুযোগ আছে, সেখানে দেওয়াই যায়, তবে যে বিষয়গুলো অকাট্য কিংবা সুস্পষ্ট, সেখানে অবস্থানটাও তেমন হওয়া উচিৎ; দুই নায়ের মাঝে দোল খাওয়া যে আদর্শ, তা আসলে নামেমাত্রই। এই বিষয়টায় ছাড় দিতে পারিনা কিংবা চাইনা, সে আমাকে ধর্মান্ধ বলেন আর কট্টরপন্থীই বলেন।

যাহোক, এবার আসি বিয়ের অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ বিষয়ে। এই বিষয়ে ইবনে ক্বুদামাহ আল মাক্বদিসী রহিমাহুল্লাহ এর একটি উক্তি দিয়েই উত্তরটা দিচ্ছি। উনার উত্তরের সারসংক্ষেপ এরকম:

♦♦ যেসব বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনরকম শরিয়তবিরোধী কার্যকলাপ কিংবা প্রোগ্রাম ইনভলভড থাকবে (যেমন: মদ্যপান, নাচ- গান, মিউজিক, বেপর্দা, সাজসজ্জার অশ্লীলতা, বেগানা নারী পুরুষের অবাধ আনাগোনা, পুরুষের জন্য চোখের পর্দা রক্ষা কঠিন এমন পরিবেশ, ইত্যাদি….) সেইসব বিয়েতে নিমন্ত্রণ পেলে, দুইটি বিষয় বিবেচ্য:

♦ ১. যদি আমন্ত্রিত ব্যক্তি এমন প্রভাবসম্পন্ন হয় যে, সে এই পাপকাজগুলোকে বাধা দিয়ে বন্ধ করতে পারবে বলে জানে, তাহলে তার জন্য সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করা জরুরী, এতে দুইটি ফায়দা: মুসলিম ভাইয়ের দাওয়াত গ্রহণ করার সাওয়াব & হারামের প্রতিবাদ করে তা বন্ধ করার কারণে প্রাপ্ত সাওয়াব।

♦ ২. যদি আমন্ত্রিত ব্যক্তি এমন হয় যে, ঐ অনুষ্ঠানের পাপকাজ বন্ধ করার ক্ষমতা তার নেই, তাকে নিরব দর্শক হতে হবে কিংবা তার নিজেকেই গুনাহের কাজে শামিল হতে হবে, চোখের পর্দা কানের পর্দা এসব নষ্ট হবে, তাহলে তার জন্য এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া নিষেধ।

♦ আচ্ছা, যদি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার দরুন আত্মীয়তা কিংবা বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট হয়, তবে কি সে গুনাহগার হবেনা?

ফতোয়া কমিটি এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছে: অনৈসলামিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ না করার কারণে যদি কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট হয়, তবে ঐ ব্যক্তির কোন দোষ নেই বরং দোষ আয়োজক পক্ষের উপরই বর্তাবে। মানুষের সাথে সম্পর্ক রক্ষার জন্য আল্লাহর অবাধ্যতা করার অনুমতি নেই।
♦♦

সবশেষে, প্রীতিভাজনেষু, বন্ধুমহল এবং আত্মীয়-পরিজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি: আমি এবং আমার হাজব্যান্ড উপরোক্ত দুই শ্রেণীর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর পর্যায়ভুক্ত, যেহেতু আমাদের পক্ষে নিরব দর্শক হওয়া ছাড়া উপায় নেই, তাই স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে এসব প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়ার সুযোগটাও আমাদের হাতে নেই। তবে সবার জন্য দু’আ সবসময়: অনুপস্থিত থাকলেও ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য শুভকামনাটুকু যে সবসময়ই থাকে, তা কি আর চেয়ে নিতে হয়? 

আরেকটু বিস্তারিত পড়তে চাইলেঃ https://islamqa.info/en/45789

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *