জীবন বাংলা সিনেমা নয় বলেই আমাদেরকে জীবনে অনেক কঠিন বাস্তবতা দাঁত চিপে স্বীকার করতে হয়। সিনেমায় দেখা যায় ব্রোকেন ফ্যামিলির বস্তির ছেলেটা ধীরে ধীরে যুলুমের ত্রাস আর গরীবের বন্ধু হয়ে উঠে। কিন্তু বাস্তবতা হল সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ আর মাস্তানদের বেশিরভাগই ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তান, এদের অনেকের ঠিকানাই বস্তি। এদের যুলুমের হাত বস্তির রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে কোটি কোটি অবৈধ টাকার মালিক পর্যন্ত বিস্তৃত। এরা বাস্তবে পাড়ার গরীব লোকটিকে বড়লোকের মেয়ের যুলুম থেকে রক্ষা করে না এবং পারলে ঐ বড়লোকের মেয়েকে লাঞ্চিত করে ছাড়ে। এদের উৎপাতেই অসংখ্য মেয়ে গলায় দড়ি দেয়।
আমি কলেজে যে স্যারের কাছে ফিজিক্স প্রাইভেট পড়তাম তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর লৌহমানব। সততা এবং নিষ্ঠায় পুরো রাজশাহীতে তাঁকে এক নামে চেনে সবাই। স্যার কেন জানি আমাকে খুবই পছন্দ করতেন। একদিন বলেছিলেন, “বুঝলি, মানুষ যত গরীব হয় তার মন তত ছোট হয়।” স্যার নিজেও মধ্যবিত্তের সামান্য উপরে ছিলেন এবং স্যারের এই কথায় শ্রেণীবৈষম্যের যে প্রছন্ন ভাব আছে তা খুবই খারাপ লেগেছিল। কিন্তু পরে দেখেছি কথাটা অনেকাংশে মিথ্যা না বরং সত্য এবং এই সত্যতার এমন সব নমুনা দেখেছি যে অনেক সময় চিন্তার ধাঁধাঁয় পড়ে যেতাম। তবে বড়লোক হলেই যে মন বড় তা না বরং বাস্তবের চৌধুরী সাহেবরা ক্ষেত্রবিশেষে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। তাই মন বড় না ছোট তার মাপকাঠি ধনী/ গরিব হতে পারে না। বাংলা সিনেমা এবং ঐ স্যারের কথা কোনটাই সত্য না।
তারপরও দুঃখবিলাসী কিছু মানুষ জীবনকে সিনেমা ভেবে নিজের উপর সবচেয়ে বড় যুলুমটা করে ফেলে। নিজের জীবনের মূল্যটা এরা বোঝে না, আফসোস !
১৩ জুন, ২০১৫
তিতুমীর হল, বুয়েট, ঢাকা।