একটি জাতীয় দৈনিকে আজ একটি কলাম পড়ে মনে হল লিখতে গিয়ে ভয়ে লেখকের ডাইরিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। পুরো লিখাতে বারবার ঘুরেফিরে যেসব শব্দ নিয়ে এসেছে সেগুলো হল- “উগ্রপন্থী”, “ইসলামপন্থী”, “সন্ত্রাসী”, “জঙ্গি”, “ডানপন্থী”, “প্যান ইসলামিজম”, “চিহ্নিত” … … তবে এসব সো কলড বুদ্ধিজীবিরা দাড়ি-টুপি দেখে যতই আতঙ্কিত থাকুক, এদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ কিন্তু দাড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ দেখলে যথেষ্ট সমাদর করে, মন থেকেই আগ বাড়িয়ে এসে সালাম দেয়, সম্মান করেই ‘হুজুর’ বলে। নিজের কিছু অভিজ্ঞতা বলি-
(১) তরমুজ কিনতে গিয়েছি দোকানে। আমি তরমুজ বাছাই করছি এমন সময় এক মহিলা হাতে একটা কাটা তরমুজ নিয়ে এসে বেশ হম্বিতম্বি শুরু করে দিলেন দোকানদারের সাথে। ব্যাপার হল, তিনি কিছুক্ষণ আগে ওই তরমুজটা কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কাটার পর দেখা গেল একদম মিষ্টি নাই। তার ধারণা হয়েছে দোকানদার জানার পরও তাকে বলেনি। তিনি সেই কাটা তরমুজ ঘুরিয়ে নতুন তরমুজ নিতে চান, আর দোকানদারের এক কথা- কাটা তরমুজ ঘুরানো যাবে না। বিশাল ক্যাচাল লেগে গেল চোখের সামনে। শেষে মহিলা আমাকে বললেন- “বাবা, তুমিতো ভাল মানুষ। তুমি বিচার কর।” ওদিকে দোকানদারের সাথে আমার ভাল খাতির আর বিষয়টাও এমন যে এখানে ‘বিচার’ করার কিছু নাই। বাধ্য হয়ে দ্রুত আমার টাকাটা দিয়ে পালিয়ে বাঁচলাম।
(২) এটাও কেনার অভিজ্ঞতা। বাসার সামনে ভ্যানে করে বরই বিক্রি করছিল। গেলাম কিনতে। বাছাবাছি করছি দেখে বরইওয়ালা বলল, “মামা, আমি নিজে বেছে দিচ্ছি আপনাকে। আপনি আল্লাহওয়ালা মানুষ। আপনারে ঠগাইলে ব্যাবসা চলত না।” [কথাটা শুনে খুশি হতে পারিনি। এতে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে অন্য কাউরে ঠগাইলেও সমস্যা নাই। অথচ যে কাউকে ঠগানোই হারাম] অবশ্য তিনি সত্যিই সবচেয়ে ভাল বরইগুলোই দিয়েছিলেন।
ঘটনা দুটি থেকে ‘হুজুর’দের জন্য কিছু শিক্ষা-
(১) আমাদের লিবাস দেখে যে যাই বলুক, আমাদের উচিত সাধারণ মানুষের সাথে সবচেয়ে সুন্দর আর ইনসাফের আচরণ করা। এটাই অনেক বড় দাওয়াহ।
(২) আমরা প্রতিদিন অজস্র পাপ করার পরও আল্লাহ সেগুলো গোপন রেখে মানুষের কাছে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। এজন্য আমাদের উচিত আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে ঘনঘন তাওবাহ করা।
(৩) আল্লাহর কাছে এই বলে দূয়া করা উচিত যে, আল্লাহ আমাদের বাহ্যিক রূপ যেমন সুন্দর করেছেন, আমাদের ভিতরটাও যেন এমন সুন্দর করেন।
আল্লাহু মুস্তা’আন।
১২ নভেম্বর, ২০১৪