আমাদের তরুণদের জন্য একটা বড় ট্র্যাজেডি হল ইসলাম বুঝতে শুরু করার সাথে সাথে আমরা আক্বীদা, ফিক্বহ সহ যাবতীয় ইসলামী জ্ঞানের শাখায় “পারদর্শিতা” অর্জন করে ফেলি কিন্তু আব্বা-আম্মার সাথে নম্র-বিনয়ী থাকার ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে যাই। আর তাঁদেরকে দাওয়াহ দেওয়ার সময়তো আরোই। ঘুণাক্ষরেও আমাদের মাথায় আসেনা যে, তাঁদের মানসিকতা আর আমাদের মানসিকতা ভিন্ন আর এটাই স্বাভাবিক; কারণ, পিতামাতা ও সন্তান-এই দুই প্রজন্ম দুটি ভিন্ন সামাজিক পারিপার্শ্বিকতায় বেড়ে উঠেছে।
অনেককে দেখেছি, বাবা-মাকে দাওয়াহ দিতে গিয়ে রাগ করে বলে বসে- “তোমরা কিছুই জান না!” জ্বী, আপনার বাবা-মা আপনার চেয়ে ইসলামী জ্ঞান কম রাখতে পারে কিন্তু দুনিয়াবী জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা আপনার চেয়ে ঢেরগুণে বেশি, আপনার কল্যাণ-অকল্যাণ তাঁরাই আপনার চেয়ে অনেকাংশে ভাল বুঝেন।
আমরা যখন বাড়ি থেকে দীর্ঘদিনের জন্য বাইরে পড়তে চলে যাই তখন কি প্রতিদিন, হ্যাঁ, প্রতিটা দিন কি আমরা বাসায় ফোন দিয়ে আব্বা-আম্মার খোঁজ নিই? এই প্রশ্ন আমার অনেক বন্ধু-জুনিয়রকে জিজ্ঞেস করলে অবলীলায় বলে যে কয়েকদিন পরপর কথা হয় বাসায় কারণ বলার মত কথা নাকি খুঁজে পায় না। আসলেই কি তাই? যে বাবা-মা আমাদেরকে এতদিন ধরে মানুষ করল তাদের সাথে বলার মত কথা আমাদের নাই? আপনাকে তো খোশ গল্প করতে বলছি না, শুধু সকালে একবার ফোন দিয়ে মিষ্টি করে একটা সালাম দিয়ে বলবেন, “আম্মা, নাস্তা করেছ?”, “ওষুধ ঠিকমত খাওয়া হচ্ছে?”, “আব্বা, বাসায় কোন সমস্যা নেইতো?”-এই কথাগুলো বলতে ঠিক কতটুকু পরিশ্রম দরকার? কতটুকু চক্ষুলজ্জা ভাঙ্গার দরকার?
অনেকদিন আগে এক বড় ভাই একটা উপদেশ দিয়েছিলেন আমাকে। খুব মনে ধরেছিল। মাসে অন্তত দুইবার আব্বা-আম্মার কাছে নিজের সকল ভুল আচরণের জন্য মাফ চাওয়া, তাঁদেরকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে নেওয়া-“আপনারা কি আমার উপর সন্তুষ্ট?” খুব হাস্যকর লাগতে পারে আমার কথাগুলো, কিন্তু আপনি একদিন বলেই দেখুন। প্রথমবার হয়ত লজ্জা লাগবে অভ্যাস না থাকায়, কিন্তু বলে ফেলতে পারলে দেখবেন আব্বা-আম্মাই লজ্জায় পড়ে গেছে। মুখে হয়ত “আরে না না” টাইপ কথা বলবে কিন্তু বুকের ভিতর থেকে যে দূয়াটা উঠে আসবে সেটা ফোনে ধরা পড়ে না। যারাই এই লিখাটি পড়বেন, আমার আন্তরিক অনুরোধ প্রতিদিন বাবা-মায়ের খোঁজ নিবেন, দূরে থাকলে ফোন দিবেন-প্রতিদিন কমপক্ষে একবার দিবেন, তাঁদেরকে দাওয়াহ দেওয়ার সময় তাঁদের জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে গলার স্বরটা নিচু করবেন- শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। দাওয়াহ দিতে গিয়ে আল্লাহর ক্রোধ কুড়িয়ে আনবেন না।
২৯ নভেম্বর, ২০১৪