ডাকাডাকি

কয়েকমাস থেকে প্রতিদিন ফজরের সময় উঠলেই একজন মধ্যবয়স্ক মানুষের ডাকাডাকি শুনতে পেতাম। লোকটা একসুরে বলতে থাকে- “আযান দিয়েছে ভাই, উঠেন ভাই। নামাযে চলেন ভাই। ভাইয়েরা আযান দিয়ে দিয়েছে, নামাযে যেতে হবে ভাই”। বেশ কিছুক্ষণ এমন বলার পর আস্তে আস্তে সুরটা মিলিয়ে যেত। এমনও হয়েছে কয়েকদিন উনার ডাকাডাকিতেই ঘুম ভেঙ্গেছে। এইরকম কাজ একদিন-দুইদিন হলে সেটা হয়ত স্বাভাবিক ছিল কিন্তু দেখলাম দিনের পর দিন চলতেই থাকে একই ঘটনা। একটা দিনও ভুলেও বাদ যায় না। খুব অবাক লাগত। কাহিনী কী তা জানার জন্য একদিন ভোরে বেশ আগে আগেই মাসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম। দেখি দূর থেকে এক লোক দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। দাঁড়িয়ে গেলাম-দেখা যাক কী হয়। লোকটা কাছে আসতেই দেখলাম একটা বস্তির ভিতর ঢুকে পড়ল তারপর যথারীতি সেই চিৎকার- “আযান দিয়েছে ভাই, উঠেন ভাই। নামাযে চলেন ভাই। ভাইয়েরা আযান দিয়ে দিয়েছে, নামাযে যেতে হবে ভাই”। পুরাই তাজ্জব! বেশ কিছুক্ষণ চিল্লানোর পর দেখি বস্তি থেকে বের হয়ে আবার এদিকে দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে। রাস্তার পাশে একটা ট্রাক দাঁড়ানো ছিল। কিছু শ্রমিক বালু না কি জানি নামাচ্ছিল। লোকটা এসে থমকে দাঁড়াল ওদের সামনে। তারপর সেই একই কথা- “ভাইয়েরা আযান দিয়ে দিয়েছে, নামাযে যেতে হবে ভাই…”। বলেই কোনরকম উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার দৌড়। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছি এরপর কী হয়! লোকটা কিছুদূর সামনে যেয়ে একটা কিসের জানি দোকানের ঝাঁপি খোলা ছিল সেখানে একেবারে দৌড়ে ঢুকে গেল। তারপর আবার সেই-“আযান দিয়েছে ভাই, উঠেন ভাই। নামাযে চলেন ভাই। ভাইয়েরা আযান দিয়ে দিয়েছে, নামাযে যেতে হবে ভাই”। বলেই সে দোকান থেকে বের হয়ে আবার সামনে দৌড়াতে লাগল এবং এক সময় চোখের আড়ালে চলে গেল। অদ্ভূত এক অভিজ্ঞতা নিয়ে সেদিন মাসজিদে ঢুকলাম!


পুনশ্চঃ এখনো প্রতিদিন একই সময়ে ঐ একই কথাগুলো শুনতে পাই। ভাইয়ার কাছে জানলাম লোকটা নাকি বিগত কয়েকবছর ধরে টানা এই কাজ করে আসছে। আল্লাহ তাকে এর প্রতিদানে সেই জান্নাতে দাখিল করুক যার ছাদ স্বয়ং আল্লাহর আরশ। আমিন।

হোসেনী দালান,

৪ ডিসেম্বর, ২০১৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *