মনমানসিকতার কেমন পরিবর্তন কাম্য?

ইয়ামামার স্বৈরাচারী বাদশাহ ছুমামা ইবনে উছাল (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহনের কাহিনী অতীব চমকপ্রদ। যারা ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা ব্যাপারটি জানেন। ইসলামের সৌন্দর্য,মহানবী (সঃ) এর দয়া ও দূরদর্শিতা তাঁর এ ইসলামের গ্রহনের কাহিনীর মাধ্যমে অনেকটুকুই উপলব্ধি করা যায়। ইসলাম গ্রহনের পর রাসুল (সঃ) কে উদ্দেশ্য করে যে কথাটি তিনি বলেছেন কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিমদের জন্য তা একান্ত অনুসরনীয় শিক্ষা হয়ে থাকবে। তিনি বলেছিলেন-

“ইয়া রাসুলাল্লাহ!ইসলাম গ্রহনের পূর্বে এই পৃথিবীতে আপনার চেয়ে অধিক ঘৃণিত আর কোন ব্যক্তি ছিলনা। আর এখন পৃথিবীর সমস্ত লোকের চেয়ে আপনিই আমার নিকট অধিক প্রিয়। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি “তখন ইসলামের চেয়ে ঘৃনিত কোন ধর্ম ছিলনা; কিন্তু ইসলামই এখন আমার কাছে সর্বোৎকৃষ্ট জীবনব্যবস্থা। আপনার এই মদীনার চেয়ে তুচ্ছ কোন শহর আমার কাছে ছিলনা;কিন্তু এখন এই পূন্যভূমি মদীনাই আমার সর্বোত্তম প্রিয় ভূমি”।

লক্ষ্য করুন!! ইসলাম গ্রহনের পর চিন্তা চেতনা কিভাবে ১৮০ ডিগ্রী কোণে ঘুরে গেছে। এটাই ইসলাম আপনাকে শিখাচ্ছে। ইসলামী প্রানশক্তি এমন চেতনার জন্ম দেয়ার জন্যই আল্লাহ তৈরি করছেন। যদি এমন চেতনা আপনার চিন্তায় ও চরিত্রে প্রস্ফুটিত না হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মধ্যে ইসলামের প্রানশক্তির অভাব আছে।

২।

যে আরবজাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে মদ,জুয়া,সুদ ঢুকেছিল সে আরবজাতির মধ্যে কি বৈপ্লবিক পরিবর্তন  মুহাম্মদ (সঃ) কোরআনের মাধ্যমে নিয়ে এসেছিলেন তা ইতিহাস পাঠমাত্রই আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে। মদ হারাম হওয়ার আয়াত নাজিলের সাথে মদিনার রাস্তায় রাস্তায় মদের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। যাদের মুখের কাছেই  মদের গ্লাস ছিল সে গ্লাসও তারা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল। কেবলা পরিবর্তনের আয়াত শোনার সাথে সাথে নামাযের মধ্যেই কেবলার পরিবর্তন করার মাধ্যমে জানান দিয়েছিল আল্লাহর আদেশের প্রতি,রাসুল (সঃ) এর নির্দেশের প্রতি মুসলিমদের কেমন মনোভাব পোষন করা উচিত। আল্লাহ কোরআনে আল্লাহর আদেশ, নবীর আদেশের প্রতি মুসলিমদের মনোভাবের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন-

“মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম”। (সূরা নুর-৫১)

সোনার যুগের সোনার মানুষ রাসুল (সঃ) এর সাহাবীরা আল্লাহ ও রাসুল থেকে কিছু শুনলেই বলত “সামি’না ওয়া আতা’না” অর্থ্যাৎ আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম।

আর ইহূদিরা আল্লাহর কথা নবীরা কথাবার্তা শুনে জিহবাকে একটু বাঁকিয়ে বলত “সামি’না ওয়া আসাইনা” অর্থাৎ “আমরা শুনলাম ও অমান্য করার সংকল্প নিলাম”।

আজকে যখন আমাদের তথাকথিত নামধারী মুসলিমদের আল্লাহর আদেশ শুনানো হয়। তখন তারা নির্বিকার।আল্লাহর ফয়সালাকে তারা পাশ কাটিয়ে চলছে। নবী কোন বিষয়ে যে ফয়সালা দিয়েছেন তা তাদের পছন্দ না।অনেকে দৌঁড়ানো শুরু করে খাজা বাবা,গাঞ্জা বাবা,ল্যাংটা বাবার কাছে।আর অনেকে তাদের আলেম তাদের মুরুব্বী কি বলেছে তা নিয়েই পড়ে আছে। কোরআনের আয়াত শুনতে তারা প্রস্তুত নয়। আল্লাহ যে বিচার যে নীতি,যে আইনের কথা বলেছেন সেটা তারা কানে নিতেও রাজি নয়। আপনি তাকে বুখারী, মুসলিম থেকে কিছু বললে সে সেখান থেকে কেটে পড়বে। আমাদের মন মানসিকতার আজ একি হল? আল্লাহর হুঁশিয়ারীর দিকে একটু লক্ষ্য করুন। আল্লাহ বলছেন-

“আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়”। (সূরা আহযাব-৩৬)

আপনি আমি হরদম আল্লাহর আদেশ,নবীর আদেশ ভংগ করছি। আমাদের আল্লাহ মুমিনের ক্যাটাগরীতে ফেলবেন নাকি কাফিরের ক্যাটাগরিতে ফেলবেন একটু হিসাবটা করে নিন।ইহুদিদের চরিত্র যে আমাদের মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে তা কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি?

এখনো সময় আছে। আসুন! ছুমামা ইবনে উসাল (রাঃ) এর মতো ইসলামের জীবন ব্যবস্থাকেই সর্বোচ্চ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ঘোষনা দিয়ে ইসলামে একনিষ্ঠভাবে আদিষ্ট হই। এ ছাড়া আজ বিংশ শতাব্দীর মানবতার মুক্তির অন্য কোন পথা খোলা নেই। এ পথে কেবল মাত্র সাফল্য অবশম্ভাবী। হোক সে দুনিয়ার সাফল্য কিংবা আখিরাতের মহাসাফল্য। এ ঘোষনাই আল্লাহ দিচ্ছেন- “যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে”। (সূরা আহযাব-৭১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *