ইসলামী সংস্কৃতি এবং আজকের তথাকথিত সংস্কৃতিবানরা

প্রত্যেক জাতির স্বকীয়তা ফুটে উঠে তাদের সংস্কৃতি এবং তাদের তৈরি সভ্যতার ইমারতের মাধ্যমে। যে কোন সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত শক্তি প্রকাশ পায় সে সংস্কৃতি একজন ব্যক্তি তথা সমাজের পরিবর্তন সাধনে কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছে তার মধ্য দিয়ে। সংস্কৃতি,সভ্যতার দুটি দিক আছে নৈতিক দিক এবং পার্থিব দিক। বিশ্বের বুকে যে সকল গোষ্ঠী তাদের সংস্কৃতি নিয়ে উঁচু গলায় কথা বলার প্রেরনা পায় তাদের বস্তুগত উন্নতি চোখ ধাঁধানো হলেও নৈতিক অবস্থা থেকে ছিল অন্তসারশুন্য। ইসলাম একটি সর্বব্যাপী জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনের প্রতিটি দিককে পরিপূর্নতা দেয়ার জন্য ইসলামের আবির্ভাব।ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এমন একটি সংস্কৃতির প্রেরনা দেয় যা তার মূলতত্ত্ব তাওহীদের তথা আল্লাহর একত্ববাদের সাথে সংগতিপূর্ন। যদি বলা হয় ইসলামের সংস্কৃতির মূল কি এক কথায় বলুন? তা হচ্ছে-

“মানুষকে আল্লাহর রঙ্গে রঞ্জিত করে চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করা”

তাওহীদের বীজ এমনভাবে তার অন্তরে প্রোথিত করে দেয়া হয় যেন তার আচার আচরন,চিন্তা চেতনা,কাজ কারবার,সামাজিক ক্রিয়াকর্ম সবকিছু থেকে তাওহীদের সুগন্ধ বের হয় এবং আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে চক্ষু শীতল করে। মানবতার কল্যান,মানুষের প্রতি ভালবাসা সর্বোপরি নৈতিকতার অগ্রাধিকার দানের মাধ্যমেই ইসলামী সংস্কৃতির পূর্ন বিকাশ সাধিত হয়। সত্য,ন্যায় এবং বিবেকের ছোঁয়ায় ইসলামী সংস্কৃতি হয়েছে অনুপ্রেরনাদায়ক এবং সৌন্দর্যমন্ডিত। ইসলামী যখনই মানুষের মধ্যে এই ধারনা উত্তমরুপে দিতে সমর্থ হয়েছে “ এই দুনিয়াই শেষ না” “তুমিই এই দুনিয়াকে সাজাবে” তখনই মানবিক ভাবাবেগে এক নতুন জোয়ার বইতে শুরু করেছে। এই চিন্তা থেকেই গড়ে উঠল এক সাড়াজাগানো সংস্কৃতির আর বিশাল সভ্যতার ইমারত। এর পর তার সংস্কৃতির উত্থান পতন হলেও তার অন্তরাত্মা ইসলামের ডাকে সবসময়ই সাড়া দিত। এক মুসলিম বাদশাহ  জাঁকজমকের সাথে এক বিশাল ইমারত তৈরি করলেও তার সবচেয়ে চোখ জুঁড়ানো মধ্যে খোদাই করা ছিল-

“তোমার পায়ে বন্ধন,তোমার দিল তালাবদ্ধ।

চক্ষুযুগল অগ্নিদগ্ধ আর পদযুগল কন্টকে ক্ষতবিক্ষত;

ইচ্ছা তোমার পশ্চিমে সফর করার অথচ চলছ পূর্বমুখী হয়ে;

পশ্চাতে মঞ্জিল রেখে কে তুমি চলছো

এখনো সতর্ক হও”

এই মহা হুঁশিয়ারীর উৎপত্তিস্থল তো ইসলামই।

ইসলাম শুধু কথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে কেটে পড়ার নাম নয়। এগুলো বাস্তব জীবনে পরিপূর্নভাবে তার প্রচারক রাসূল (সঃ) এবং তাঁর সাহাবারা  দেখিয়ে গেছেন।চিন্তা করা যায়, বিলালের মত একজন হাবশী দাস ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। এ কোন আধ্যাত্মিক শক্তি যা খলিফাকে রাতে অলিতে গলিতে হাঁটতে বাধ্য করে।খলিফা ওমরের স্ত্রী আজকের যুগে যাকে ফার্স্টলেডী বলা হয় কোন সে তাড়নায় সামান্য বেদুঈনের ঘরে ছুটে গিয়েছিলেন? কোন সেই শক্তি যা একজন সাধারন মানুষকে রাষ্ট্রকর্তার সামনে তলোয়ার দিয়ে শাসানোর প্রেরনা জোগায়?

আল্লাহু আকবার!

হ্যাঁ! আমার সংস্কৃতির ইতিহাস সবার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যকে কঠিন  হলেও মেনে নিতে হবে। কিন্তু আজ এ কোন ছাগলের তৃতীয় ছানা সম মানুষগুলো আমাকে সংকৃতিবান হওয়ার সবক দেয়। ওরা কারা যারা আমাকে অসাম্প্রদায়িকতা শেখাতে আসে? কি তাদের সংস্কৃতি ছিল? চুল,দাঁড়ি,গোঁফ রাখলে কি সংস্কৃতিবান হওয়া যায়? হত্যার সংস্কৃতির প্রায় একচ্ছত্র অধিকারী এ মানুষগুলো  নাট্যকলা,চিত্রকলার রঙ্গে কি তাদের কালো অধ্যায়কে মুছতে সমর্থ হবে?

এ মানুষগুলো তো লেলিন নামক সে লোকটির উত্তরসূরী যে পবিত্রগ্রন্থ কোরানকে ‘বাজে কথা দিয়ে ভর্তি’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। যারা মহানবী (সঃ) ঐতিহাসিক অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আজ তারা রামুর ঘটনায় গনসংযোগ করছে।মিছিল, মিটিং মানববন্ধন করে জনগনকে অসাম্প্রদায়িকতার কর্ণ জুড়ানো সবক দিচ্ছে। ভাগ্যিস! বিজ্ঞান এখনো সেভাবে মানুষের মনের কথা বুঝার পর্যায়ে যেতে পারেনি। না হয় তাদের মানুষের সামনে তাদের মেকী দরদের বস্ত্র খুলে যেত।

এ মানুষগুলোর সামনে কখনোই ধর্ম নিরাপদ ছিলনা।আমি শুধু ইসলামের কথা বলছিনা বরং পুরো ধর্ম ব্যবস্থাকে উচ্ছেদে তাদের একাগ্রতার সাক্ষী ‘ইতিহাস’।ধর্মের অনুসারীদের কচুকাটা করে আজ সাধু সেজে বিপ্লবের বানী শুনানো এ মানুষগুলো সম্পর্কে মুসলমানদের সজাগ হতেই হবে। ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মানুসারীদের জন্য নিরাপদ পৃথিবী গড়ার এ গুরু দায়িত্ব মুসলমানদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। ৩৫ বছরে রাশিয়ার ৫,৬৮৮ টি মসজিদ বিনষ্ট ও বন্ধ করে দিয়েছে এ বিপ্লবীরা (?) । আজো বাংলার মাটিতে হাজার হাজার মসজিদের মিনারের আজানের সুর এ মানুষগুলোর সামনে হুমকী তাই এ বাংলায় তারা নূন্যতম নেতৃত্ব পেলে হয়ত মিনার ভাঙ্গার মধ্য দিয়েই সেই প্রতিশোধ নিতে চাইবে।

রাশিয়ায় যখন এসকল কমিউনিস্ট,প্রগতিবাদীরা ক্ষমতায় ছিল তখন তারা মুসলমানদেরকে হজ্বে যেতে বাধা দিত। ’৫৭ সালে ১৮ জন এবং ’৫৮ সালে মাত্র ২০ জন লোক হজ্ব করতে যায়। যেখানে তখন সোভিয়েত রাশিয়ার মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৫০ লক্ষ। তারা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের প্রধান শক্তির উৎস কোরআন। তাই ১৯২৯ সালে সোভিয়েত সরকার নির্দেশ দেয় কেবলমাত্র ৪০ বছরের অধিক বয়স্ক লোক আরবী কোরআন শরীফ পড়তে পারবে। তারা ভাল করেই জানত মুসলমানরা পুষ্টি আহরন করে এই কোরআন থেকেই তাই মুসলমানদের দমিয়ে রাখার জন্য কোরআন থেকে দূরে রাখার কোন বিকল্প নেই।ঠিক যেমন বৃটিশ পার্লামেন্টে সেক্রেটারী ফর কলোনীজ মিঃ গ্ল্যাডস্টোন বলেছিলেন-

“যতক্ষন পর্যন্ত মুসলিমদের মাঝে কোরআন থাকবে,আমরা তাদের উপর কর্তৃত্ব করতে পারবনা।হয় এটা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে হবে অথবা এটার প্রতি তাদের ভালবাসা কমিয়ে দিতে হবে”।

কমিউনিস্টরা এ সত্যটা ভালভাবেই উপলব্ধি করে কোরআন থেকে মানুষকে দূরে রাখার ফন্দিটা ভালই করেছিল।

তারা পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে মুসলমানদের শূকর পালনে উৎসাহিত করে। এতে মুসলমানদের হারামের দিকে ধাবিত করে জাহিলিয়্যাতের কৃষ্ণগহবরে ফেলে দেয়ার নীল নকশা করেছিল। তাছাড়া বিভিন্ন নাস্তিক্যবাদী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ নাস্তিক্যবাদী বইয়ের ব্যাপক প্রসারে তাদের ছিল সুচিন্তিত কার্যক্রম। লেলিন বলেছিলেন ‘নাস্তিক্যবাদ মার্ক্সবাদের অবিচ্ছেদ্য অংগ’। ‘ইয়ং বলশেভিক’ পত্রিকায় বলা হয়েছে ‘মার্ক্সবাদ লেলিনবাদ ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ধর্মের কোন সংগতি নেই’। আজ তারা মিষ্টি কথা আর বিপ্লবের(?) চেতনায় মানুষকে ভুলিয়ে  এমন একটা ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় যেখানে আল্লাহ বিশ্বাসের কোন অস্তিত্ব থাকবেনা,ধর্মকে কচুকাটা করা হবে এবং ধর্মানুসারীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। ঠিক এ কথাটিই ‘জেন মিন জিহ পাও’ শীর্ষক পুস্তিকায় বলা হয়েছে-

‘আমরা ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাস নস্যাৎ করে দেবার নীতিও সমর্থন করি’

আজ যারা এ বাংলাদেশে নিজেদের মুসলমানদের দাবী করে তাদের সর্বোচ্ছ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দুধ কলা দিয়ে কি পুষছি? সময় এবং সুযোগে এরা কোন কামড় দিতে যাচ্ছে? রাশিয়াতে যেমন করেছিল আজও সুযোগ পেলেই ইসলামী আদর্শ ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে জোর প্রচারনা চালিয়ে তা সমূলে বিনাশে তৎপর হবে। কমিউনিস্টরা তাদের শাসনামলে ছিটেফোঁটা কিছু সুযোগ সুবিধা দিলেও এটা তাদের সাধারন নীতি ছিলনা। তাদের নীতি ছিল দমনের নীতি। তাদের নীতিদর্শন ছিল বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের হত্যা। কিন্তু সেই দুচারটা সুযোগ সুবিধার ব্যাপক প্রচারনার কৃতিত্ব তাদের দিতে আমি কৃপনতা করতে চাইনা। এক্ষেত্রে তারা সফল,বাহবা পাওয়ার যোগ্য।

তারা যতই কৌশল করে ভাল মানুষীর লেবাস পরে লোকজনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করুকনা কেন আল্লাহর “কৌশল আরো মহান আরো বড়”। আল্লাহই তো শ্রেষ্ঠ কৌশলী।তিনি তার নূরকে বিকশিত করবেন। তাদের ফুৎকার একে তার জায়গা থেকে নূন্যতম সরাতে পারবেনা। আল্লাহ এমন মানুষ তৈরি করে নিবেন যারা তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিবেন।প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি সে সোনার মানুষ হতে প্রস্তুত আছি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *