একজন মুসলিম যখন কোন কাজ করতে উদ্যত হয় তখন তার প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হচ্ছে এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি সে বিষয়ে জেনে নেয়া। কাফির মুশরিকদের দেশে যাওয়া নিয়ে স্কলারদের ফতোয়া যতটুকু পড়েছি তাতে বুঝেছি সাধারন মানুষ যাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান খুব সীমিত তাদের অমুসলিমদের দেশে বসবাস করতে যাওয়া একদম হারাম নাহলেও পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যদি শুধু তোমরা সেদেশে পাড়ি দিতে তাহলে হয়ত তোমাদের আমি নিষেধই করতাম কিন্তু যেহেতু তোমাদের পুরো পরিবার চলে যাচ্ছে তাই আমার নিষেধ করা কতটুকু সমীচিন সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। সাথে সাথে এ বয়সে তোমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কঠিন স্নায়বিক চাপে তোমাদের ফেলেও দিতে চাইনা।বিবেক বলছে তোমাদের কিছু বিষয় বলে দেয়া আমার একান্ত জরুরী। তোমাদের দুজনকেই আমি পড়িয়েছি,তানজীদ তোমাকে হয়ত খুব একটা বেশি পড়ানোর সুযোগ হয়ে উঠেনি তবে আমার যতটুকু মনে পড়ে তারেককে অনেকদিন পড়িয়েছি।তোমাদের মানসিক অবস্থান এবং চিন্তাচেতনার প্রতি আমি খুব ভালভাবেই পরিচিত।
আজ তোমাদের স্মরন করিয়ে দিতে চাই ওস্তাদ সাইয়েদ কুতুবের কথা যিনি আমেরিকায় গিয়ে দেখলেন এসকল বস্তুবাদ, individualism, ভোগবাদ,মানবরচিত মতবাদ ও অর্থনৈতিক সিস্টেমে মানবতার মুক্তি নেই। ইসলাম কেবলমাত্র ইসলামই মানুষকে এনে দিতে পারে বহুপ্রতিক্ষিত শান্তি ও নিরাপত্তা। তাই তিনি দেশে ফিরেই ব্রাদারহুডে যোগ দেন।
তোমরা এমন এক দেশে যাচ্ছ যে দেশ আজ কাফিরদের স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত। আদর্শিক দিক দিয়ে সে দেশের মানুষদের সাথে আমাদের মুসলিমদের অবস্থান সুমেরু কুমেরু সম। তাদের সংস্কৃতির সাথে মুসলিমদের সংস্কৃতির সংঘর্ষ বুঝতে তোমাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবেনা।
বস্তুবাদ,ভোগবাদ আর অশ্লীলতা হাতছানি হতে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য যে জিনিসটি ভেলার মত কাজ করবে তা হচ্ছে তোমাদের ঈমান।তাই নিয়মিত ঈমানকে আপডেট করার চেষ্টা করবে। মহানবী (সঃ) এর বলেছিলেন এমন এক সময় আসবে যখন ঈমান ধরে রাখা জলন্ত কয়লা হাতে ধরে রাখার মত কঠিন হবে। আমার মনে হয় আজ আমরা সে সময় অতিক্রম করছি আর অমুসলিম দেশে বিশেষ করে আমেরিকার মত ভোগবাদী কুফফারদের দেশে এ কয়লার তীব্রতা কয়েকগুন বেশি সেটা বুঝার জন্য খুব বেশি গবেষনার প্রয়োজন নেই। তোমাদের ঈমানে দৃঢ়তার জন্য নিয়মিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। মনে রাখবে মুসলিমরা একটা মিশন নিয়ে এ পৃথিবীতে এসেছে,একজন ঈমানদার আল্লাহর রাজত্ব পুরো বিশ্বে কায়েম করার জন্য সবসময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়,তাই ঈমানের বীজই যদি পরিপুষ্ট না থাকে তাহলে সেখান থেকে ফলদায়ী সুবিশাল মহীরুহ জন্মাবে না সেটা নিশ্চিত।
ঈমানকে আপডেট করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কোন বিকল্প নেই। যেই অবস্থায় যেখানেই থাকনা কেন এটা যেন মিস নাহয়।
সেখানে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তোমাদের খুব বেশি সতর্ক হতে হবে। আতর বিক্রেতার সাথে থাকলে আতর নাপেলেও আতরের গন্ধ হলেও পাবে এবং তোমার গায়ে লেগে যাবে অপরদিকে কামারের সাথে থাকলে কাপড় পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে,কাপড় না পুড়লেও পোড়া গন্ধ গায়ে লেগে যাবে।এমন মানুষদের বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করবে যারা তোমদেরর ঈমান এবং আমলকে আরেকটু উঁচুতে নিতে সহায়তা করবে।আমার জানামতে আমেরিকায় অনেক ভাল ভাল ইসলামী সংস্থা গড়ে উঠেছে যারা সহীহ ইসলামকে প্র্যাকটিস করতে চায়।সে সকল সংস্থার সাথে যোগাযোগ রাখবে।আর মনে রাখবে সবচেয়ে বড় বন্ধু আল্লাহর কিতাব আর রাসূল (সঃ) এর আদর্শ। রাসূল সঃ এর ঘোষনা অনুযায়ী এ দুটোকে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট হবনা।
মুসলিমরা স্রোতের বিপরীতে চলাকে ভয় করেনা।বরং অত্যন্ত সাহসিকতার সাথেই চ্যালেঞ্জটি গ্রহন করে।কারন তারা সেই নবীর উম্মত যিনি নবুওয়াত আসার আগে চল্লিশটা বছর সমাজের জাহিলিয়্যাতের স্রোতের বিপরীতে চলেছেন।যে সময় মক্কায় মুর্তিপূজার জোয়াড় ছিল সেই সময়ই তিনি তারা উঁচু শিরটা নির্জীব মূর্তির সামনে নত করেননি।যেসময় আশেপাশে মদ,জুয়া,যিনা ব্যবিচারের সয়লাব ছিল সে সময় তিনি নিজেকে কখনো মদ আর জুয়ার কাছাকাছিও নিয়ে যাননি।নিজের চরিত্রকে রেখেছিলেন নির্মল পুতঃপবিত্র।যে সমাজ ঠকবাজি , মিথ্যা, প্রতিহিংসা অনাচার অবিচারের সমাজ ছিল সে সমাজে তিনি নিজেকে আমানতদার,পরম সত্যবাদী,ভাল ব্যবহারকারী এবং ন্যায়বিচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।সমাজের দুর্গন্ধযুক্ত স্রোতে নিজের গা ভাসিয়ে দেননি বরং নিজে সে স্রোতকে পরিবর্তন করে মিশকে আম্বারের গন্ধে সুভাসিত করেছিলেন।
আল্লাহু আকবার! আমরা সেই নবীর উম্মত। আমরা সেই নবীর প্রত্যেকটি পদক্ষেপ অনুসরন করি।
তোমরা লবন নয়,পানি হওয়ার চেষ্টা করবে। পানি লবনকে দ্রবীভূত করে,লবন পানিকে নয়। তোমরা তাদেরকে ইসলামাইজ করার চেষ্টা করবে,তারা যেন তোমাদের ওয়েস্টার্নাইজ না করতে পারে।
তোমাদের ছোট ভাই তন্ময় এর পুরো দায়দায়িত্ব তোমাদের উপর।তার মনমানসিকতা ইসলামের ছাঁচে গড়ে তোলার কঠিন অথচ অবশ্যকরনীয় দায়িত্বটি তোমাদেরই নিতে হবে।
ছোটবেলা থেকে শুনে আসা “বাবা মার কথা মেনে চল” কথাটি তোমাদের স্মরন করিয়ে দিতে চাই।
যে দেশ এবং যে সমাজে তোমাদের জন্ম এবং বেড়ে উঠা সে দেশ ও সমাজের জন্য তোমাদের মনে কর্তব্যবোধ সদা জাগরুক থাকবে এ কামনা করি। আমার পরামর্শ (দেয়ার জন্য দেয়া) নিজের মেধা ও শ্রম নিজের দেশ ও মানুষের জন্যই খরচের নিমিত্তে আশা করি তোমরা যে মুহুর্তে মনে করবে দেশকে কিছু দিতে পারব সে মুহুর্তেই সে দেশ ছেড়ে চলে আসবে।