হৃদয়ে কা’বাঃ একটি না বলা গল্প (দ্বিতীয় পর্ব)

২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের কথা। বাইতুল্লাহ কা’বা ও হাজ্জের উপর National Geographic চ্যানেলের বানানো একটি ডকুমেন্টরি দেখেছিলাম ইউটিউবে। নাম Inside Mecca। সেই ডকুমেন্টরিতে “ফিদেলমা” নামের এক রিভার্টেড বোনকে দেখি; জীবনে প্রথমবারের মতো বাইতুল্লাহ কা’বা নিজের চোখে দেখে কিভাবে চোখের পানি ফেলেন তিনি। তুমুল আলোড়িত হলাম আমি, এই পাপী বান্দা। ইচ্ছে করছিলো – মুহুর্তেই ছুটে চলে যাই বাইতুল্লাহর ছায়ায়।

.

সেই রাতেই নিজের মনের গভীর আকুতি, অনুভূতি শব্দবন্দী করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। স্ট্যাটাসের শেষে অনেকটা এরকম লিখেছিলাম – “বাইতুল্লাহ কা’বা নিজের চোখে দেখে আমিও কোনো একদিন বোন ফিদেলমার মতো অঝোরে কাঁদতে চাই।

.

রাত ১১টার মতো বাজে। ইনবক্সে ম্যাসেজ আসলো একটি। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক ভাই নক করে আমার নাম্বার চাইলেন। কথা বলবেন। অপরিচিত মানুষ। নাম্বার দেবো কিনা – ভাবছিলাম। শেষ পর্যন্ত দিলাম। মিনিট খানেকের মধ্যে দেশের বাইরে থেকে একটি কল এলো মোবাইলে। বয়সে আমার চেয়ে বড় তিনি। খুব বেশি সময় নিলেন না। সরাসরি যেই কথাটি আমাকে বললেন সেই ভাই, তার সারমর্ম মোটামুটি এরকম – “জাভেদ ভাই, আমি আপনাকে অনেক বছর থেকে ফলো করি। আজকে আপনার লেখা স্ট্যাটাসটি পড়লাম। আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তবে আমি আপনাকে কিছু টাকা হাদিয়া দিতে চাই – যেই টাকা দিয়ে আপনি আগামী বছর (২০১৫ সালে) হাজ্জে যাবেন ইনশা আল্লাহ।”

.

আমার মনে হচ্ছিলো – আমার হৃদপিণ্ডের চলাচল মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। একবার মনে হলো, কেউ বোধহয় দুষ্টুমি করছেন। কিন্তু ভাইয়ের গলায় এমন কিছু ছিল, সেই ধারণাকে মনে জেঁকে বসতে দেয় নি। আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম – “আপনার টাকায় হাজ্জে গেলে আমার কি হাজ্জ হবে?” তিনি উত্তর দিলেন – “জ্বী, হবে। আপনি খবর নিয়ে দেখেন কোন ‘আলিমের কাছে।”

.

আমি ফোন কেটে দিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো পরিচিত ২ জন মুফতীর সাথে কথা বললাম। অভিন্ন উত্তর – “হ্যাঁ, হবে।” কেউ যদি আমাকে হাজ্জের জন্য অথবা অন্য যে কোন কারণে হাদিয়া হিসেবে এতটুকু পরিমান টাকা দেন, যেই টাকা আমার কাছে থাকলে হাজ্জ আমার জন্য ফরজ হবে, তবে সেই টাকা ব্যয় করে আমার হাজ্জে যাওয়া ফরজ।

.

ইনবক্সে নক করার পর সেই ভাই আবার কল করে বললেন – “আপনার একাউন্ট নাম্বার দেন ভাই। আমি চাই যে, মক্কা ও মদীনাহতে আপনি ফাইভ ষ্টার হোটেলে থাকবেন এবং নিশ্চিন্তে ‘ইবাদাত করবেন। আমি যতদূর জানি – এমন প্যাকেজে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা লাগে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে আপনার একাউন্টে ৮ লক্ষ টাকা জমা হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।”

.

ফোন কেটে দিলেন সেই ভাই। আমি সম্পূর্ণ ঘোরের মধ্যে, সম্পূর্ণ অপরিচিত একজনকে “১০/১২ মিনিটের কথার ফলাফল” হিসেবে আমার একাউন্ট নাম্বার ইনবক্স করে আবার ঘোরের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

.

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আগের রাতের কথা নিতান্তই স্বপ্ন মনে হচ্ছিলো। মনের ভেতর সামান্য যে আশার আলো জ্বলছিলো, সকালের বাস্তবতার উজ্জ্বল আলোতে গত রাতের সেই সামান্য আলো উবে গেলো রীতিমতো। গত রাতের পুরো ঘটনাকে পুরোপুরি অবিশ্বাস্য মনে হলো এক পর্যায়ে। আমি দুনিয়ার বাস্তবতার নিরিখে বিচার করে বেমালুম ভুলে গেলাম ঘটনাটি। ভুলে যাওয়া ঘটনাটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো সপ্তাহ খানেক পর, যেদিন মোবাইলে ম্যাসেজ পেলাম – “আপনার একাউন্টে ৮ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে!”

.

সেই ঘোরলাগা রাতে বাসায় ফিরে স্ত্রীকে পুরো ঘটনাটুকু জানালাম, প্রথমবারের মতো। একাউন্টে টাকা জমা হওয়ার খবরও দিলাম। অবিশ্বাস্য চেহারায় পুরো ঘটনা শুনে স্ত্রী ততোধিক অবিশ্বাস্য গলায় আমাকে জানালো – সে নিজেও আমার সাথে হাজ্জে যেতে চায়, এমনকি সাথে আমাদের ৫ বছর বয়সের ছেলেকে নিয়ে!

.

আমি চুপ করে গেলাম। অসম্ভব বিষয় নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আমাদের বাহ্যত কোন সঞ্চয়ই ছিল না। আসলে স্ত্রীর সাথে কথা বলার পর আমি আরো ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। বেচারি স্বামীর সাথে হাজ্জ করতে চাইছেন, কিন্তু আমার সামর্থ্য নেই তার ইচ্ছে পূরণ করার। পরদিন মায়ের সাথে বসে পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা বললাম এবং পুরোপুরি ঘাবড়ে গেলাম। আমার মা কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, তিনিও আমার সাথে ২০১৫ সালে হাজ্জে যেতে চাচ্ছেন! ১৯৯০ সালে বাবা মারা যাবার পরে আমার মা কোনদিন এইভাবে কোন কিছুর দাবি করেন নি আমার কাছে।

.

মোটামুটি গভীর সমুদ্রে পড়ে গেলাম আমরা পুরো পরিবার। মা ও স্ত্রীকে রেখে কিভাবে যাবো – এটা যেমন ভাবছি, একই সাথে এটাও ভাবছি – তাঁদেরকে নিয়েও বা যাবো কিভাবে! পরিচিতদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম – ৪ জন (আমি, মা, স্ত্রী ও ছেলে) মোটামুটিভাবে হাজ্জে যেতে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। আমাদের সম্বল ব্যাংকের ৮ লক্ষ। ৬ লক্ষ টাকার কমতি ছোটোখাটো বিষয় না আমাদের মতো পরিবারের কাছে।

.

আমরা একসাথে বসলাম সবাই। আমার মায়ের কিছু জমানো টাকা ছিল। বাবা মারা যাবার পরে সরকার থেকে এককালীন যে টাকাটা পেয়েছিলেন তিনি, সেটি একটি হালাল ব্যবসাতে বিনিয়োগ করা ছিল। সেখান থেকে সামান্য ২/৩ হাজার টাকা পেতেন তিনি প্রতি মাসে। মা সিদ্ধান্ত নিলেন, এককালীন টাকাটা তুলে দিবেন। তাতে ঘাটতি কিছুটা কমলো। এবার স্ত্রীর পালা। তিনি জানালেন, সংসারের খরচ থেকে অনেক কষ্টে বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে ছিলেন তিনি। সেটিও যুক্ত করা হলো আমাদের “যৌথ হাজ্জ ফান্ডে।” শেষে হাত দিতে হলো স্ত্রীর সামান্য যেই স্বর্ণালংকার ছিলো – সেটিতে। তারপরেও প্রায় ২ লক্ষ টাকার ঘাটতি রয়েই গেলো।

.

আমরা ঠিক করলাম, আমরা এখন থেকেই জমানো শুরু করবো। এবং অপ্রয়োজনীয় যাবতীয় খরচ এড়িয়ে চলবো। যেহেতু হাজ্জের আগে আরো ৫/৬ মাস সময় আছে, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সহজ করে দিয়েছিলেন অনেক কিছু।

.

এখন সমস্যায় পড়লাম সেই ভাইকে নিয়ে যিনি শুধু আমার জন্য ফাইভ ষ্টার হোটেলে থেকে হাজ্জ করার জন্য ৮ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। এক রাতে দুরু দুরু বুকে নক করলাম তাঁকে। কিছুক্ষণ পর কল করলেন তিনি। আমি তাঁকে বুঝিয়ে বললাম – “ভাই, আমি যদি ভিআইপি প্যাকেজে না গিয়ে আপনার দেয়া টাকার সাথে আমাদের নিজেদের জমানো টাকা মিলিয়ে আমার সাথে আমার মা, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে হাজ্জে যাই, আপনার কোনো আপত্তি আছে কি?” আমি আসলেই ভয়ে ছিলাম যে, তিনি বিষয়টি কিভাবে নেবেন। কারণ তাঁর সাথে আমার কথা খুব কম সময়ের জন্যই কথা হয়েছিলো। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি অত্যন্ত খুশি মনে আমাদের অনুমতি দিলেন। তিনি জানালেন, ১ জনের টাকায় যদি ২ জন হাজ্জ করতে পারে – তবে সেটি তো আরো উত্তম।

.

পরবর্তী ৫/৬ মাসের প্রায় প্রতিটি দিন মনের ভেতর একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করেছে। সামান্য খরচগুলো থেকেও টাকা জমাতে কার্পণ্য করি নি আমরা। সিএনজির বদলে রিক্সা, সফট ড্রিংকসের বদলে পানি, গরুর গোশতের বদলে মাছ – এগুলো সামান্য কিছু উদাহরণ। মক্কায় ৪ বেডের বদলে ৩ বেডের একটি রুম নেয়ার প্ল্যান করলাম যেখানে ২টি বেড একত্র করে আমরা স্বামী-স্ত্রী-সন্তান ৩ জন থাকবো। অন্য বেডে মা। তাতেও কিছু টাকার সাশ্রয় হলো। আবার মা’কে মামারা যাবার আগে কিছু টাকা হাদিয়া দেন হাতখরচ হিসেবে। মোদ্দা কথা, প্রতিটি খরচ থেকে কিভাবে কিছু বাঁচিয়ে ঘাটতি পূর্ণ করা যায়, সেই চিন্তাতেই কেটেছে সময়। এবং আল’হামদুলিল্লাহি তা’আলা, আমাদের বাকী টাকার ঘাটতি আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) পূর্ণ করে দিয়েছিলেন।

.

২৯শে আগষ্ট ২০১৫ সালের রাতে আমরা যখন হাজ্জের সফর শুরু করেছিলাম – সেই দিন, সেই মুহূর্তে “জাগতিক” হিসেবে আমি ও আমার পরিবার “পুরোপুরি নিঃস্ব অবস্থায়”। টাকাপয়সার ব্যালেন্স আক্ষরিক অর্থে “শূন্যের কোঠায়” রেখে আমরা বায়তুল্লাহর মুসাফির হলাম। কিন্তু আখিরাতের হিসেবে নিজেদেরকে সবচেয়ে বেশী ধনবান, সবচেয়ে পরিতৃপ্ত মনে হচ্ছিলো আমাদের সেদিন।

আর আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) যদি আমাদের হাজ্জ কবুল করে থাকেন, তবে তো তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দুগ্ধপোষ্য শিশুর মতো ফিরে এসেছিলাম দেশে!

আল’হামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন।

_________________

.

পাদটীকাঃ

———-

.

(১) আমি নিজ জীবনের ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমান পেলাম – যদি আমার নিয়াত সহীহ হয়, তবে আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) এমন মাধ্যম থেকে আমাকে সাহায্য করবেন, যা অচিন্তনীয়।

.

“…আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।”

[সূরাহ আত-ত্বালাক্ব, আয়াত ২ ও ৩]

.

(২) এটি ছিল সেই বছরের হাজ্জ, যেবার মাতাফে ক্রেন ভেঙ্গে পড়ে এবং মীনায় পদদলিত হয়ে অসংখ্য হুজ্জাজ শহীদ হন। খুব কাছ থেকে দেখা সেই স্মৃতি নিজের তাক্বওয়া বাড়াতে এখনো সাহায্য করে।

.

(৩) আমার সেই “অপরিচিত” ভাই! তিনি হাজ্জে যাবার আগে শুধু একটি কথাই বলেছেন – “দয়া করে আমার জন্য কোন দু’আ করবেন না। এই সম্পূর্ণ বিষয়ের প্রতিদান আমি শুধু মহান আল্লাহর কাছেই চাইবো”। তাঁর কথা রেখেছিলাম আমি। মুখ ফুটে যদিও দু’আ করি নি, কিন্তু অন্তরের পরিপূর্ণতা ও কৃতজ্ঞতার কথা তো রাব্বে কা’বা সবটুকুই জানেন।

.

আমার সাথে তাঁর কালেভদ্রে কথা হয়। ২০১৫ সালে ঢাকার একটি নাম্বার থেকে তাঁর কল পাই। তিনি জানান, ক’দিনের জন্য দেশে এসেছেন। আমি রীতিমতো কাকুতি-মিনতি করি একবার তাঁকে সামনাসামনি দেখার জন্য, প্রয়োজনে ৫ মিনিটের জন্য। তিনি সরাসরি “না” বলে দেন। তিনি বলেন – “ভাই, এখান থেকে অনেক উত্তম কোন জায়গায় আমরা দেখা করবো একদিন ইন-শা-আল্লাহ; হয়তো জান্নাতে।”

.

আল’হামদুলিল্লাহ, আমার এই ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছে দুনিয়াতেই। এবং অবশ্যই সেটি ঢাকা শহর থেকে অতি উত্তম স্থান ছিলো। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর শহরে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এঁর মাসজিদ, মাসজিদ আন-নববীতে! ২০১৬ সালের হাজ্জে।

.

দুনিয়ার বুকে যদি আর দেখা না হয়, তবে আমাদের পরবর্তী সাক্ষাত যেন হয় জান্নাতুল ফিরদাউসে – সেই দু’আ করি।

,

(৪) সেই প্রথবারের হাজ্জের মাধ্যমেই আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) পরবর্তীতে আমাকে আরো ৩ বার বাইতুল্লাহর মুসাফির হিসেবে কবুল করেছেন। প্রতিবারই মহান আল্লাহ কোনো না কোনো মাধ্যম বের করে দিয়েছেন আমাকে। কিছু আল্লাহর বান্দা বিভিন্ন টাইপের সাহায্য (অর্থনৈতিক নয় শুধু) করেছেন। নামগুলো গোপন থাক। তাঁদের পুরষ্কার তো নিজ রবের কাছেই রয়েছে।

.

(৫) কিছু কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলোর পুরষ্কার পৌনঃপূনিক হারে বাড়তে থাকে। প্রথম হাজ্জের পরে আমার ও আমার পরিবারের ‘ইলম ও ‘আমলের দিক দিয়ে যদি কোন উত্তম পরিবর্তন এসে থাকে, তবে সেই অপরিচিত ভাই নিশ্চয়ই আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) এঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের সমান সওয়াব পেয়েই যাচ্ছেন। একটি পরিবারের যাবতীয় উত্তম ‘আমলের সমান সওয়াব তিনি পেতেই থাকবেন। চেষ্টা করলেও তাঁকে ছোঁয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের। ‘ইবাদত-আখলাক্ব-দাওয়াত, যেদিক দিয়েই আমরা যতো চেষ্টা করবো তাঁকে ছোঁয়ার, তিনি ততো এগিয়ে যেতে থাকবেন; সুব’হানাল্লাহ!

.

(৬) আমার ও আমার পরিবারের মধ্যে এখনও সেই অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। এখনো যে কোন খরচের থেকে চেষ্টা করি টাকা বাঁচানোর, সেটি যতো নগন্যই হোক না কেনো। উদ্দেশ্য একটাই – সপরিবারে আবার বাইতুল্লাহর মুসাফির হওয়া, বিইযনিল্লাহি তা’আলা। পৃথিবীর কোথাও ঘুরতে যাবার কোন ইচ্ছে আমাদের নেই। শুধু মনে হয়, ওই ঘুরতে যাবার টাকা তো বাইতুল্লাহতে যাবার জন্য জমা করতে পারি আমরা। আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের আশা পূর্ণ করুক।

.

মূল স্ট্যাটাসের চেয়ে পাদটীকা বড় হয়ে যাচ্ছে। শেষ করবো একটি কথা বলে।

.

আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) এঁর অনুগ্রহ থেকে দয়া করে নিরাশ হবেন না। নিয়্যাত সহীহ রাখুন ও চেষ্টা করতে থাকুন। অকল্পনীয় জায়গা থেকে নুসরাহ পাঠাবেন আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা)।

.

২০১৭ সালের হাজ্জে গিয়েছেন, এমন এক ভাইকে আমি চিনি যাকে ঠিক আমার সেই অপরিচিত ভাইয়ের মতো অন্য কিছু ভাই সাহায্য করেছেন বাইতুল্লাহর মুসাফির হতে। শুধুই আল্লাহ (সুব’হানাহু ওয়া তা’আলা) এঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে।

.

অবাক হচ্ছেন?

আমি এমন এক বোনের সম্পর্কে জানি, যিনি একজন ভিক্ষুককে হাজ্জে পাঠিয়েছেন। বৃদ্ধ ভিক্ষুক চাচা গুলশান ২ নাম্বার মোড়ে ভিক্ষা করছিলেন। সেই বোন গাড়ি থামিয়ে বৃদ্ধ ভিক্ষুক ভাইটিকে বলেন – “চাচা, আপনি হাজ্জে যাবেন? আপনার চেহারা অবিকল আমার মৃত বাবার মতো। আপনি রাজী থাকলে আপনাকে আমি এবার হাজ্জে পাঠাতে চাই।”

.

চিন্তা করতে পারেন সেই বৃদ্ধ ভিক্ষুক চাচার রিযিক্ব সম্পর্কে? ভাবতে পারছেন তাঁর মুখে খুশীর আতিশয্যের কথা? কিংবা সফরের উদ্দেশ্যে বিদায় দেবার সময় সেই বাবাহারা বোনের তৃপ্তির কথা?

.

আল্লাহু আকবার, ফালিল্লাহিল ‘হামদ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *