আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখুক…

সালাফদের জীবনী পড়তে গেলেই এরকম একেকটা লাইন চোখে পড়ে:
‘তিনি ১৫ বছর বয়সে হাদীস শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশভ্রমণে বের হন’,
‘তিনি ৮ বছর বয়সে কুরআন হিফয করে ১২ বছর বয়সে ফিক্বহের উপর অমুক অমুক বই শেষ করে ফিক্বহের দারস দেয়া শুরু করেন’,
‘তিনি ২০ বছর বয়সে হাদীস ও ফিক্বহ বিশারদ হয়ে অমুক দেশের চীফ জাস্টিস পদে নিয়োগ পান’….

এসব পড়লেই একবার করে ঢোক গিলি: বলে কি! মানুষ না অন্যকিছু! কি করে সম্ভব এই বয়সে? একবিংশ শতাব্দির ডিজিটাল যুগে এসে আমরা একশ বছর এগিয়েছি, না আসলে কয়েকশ বছর পিছিয়ে গেছি??

দেখুন, এই যুগে আমরা নিজেদের যতই অত্যাধুনিক মনে করি না কেন, আমাদের নিজেদের কিংবা বাচ্চাদের দৌড় কতদূর চিন্তা করলেই মিলিয়ে নিতে পারবেন। ১০, ১২, ১৪ বছরের একটা বাচ্চার ডেইলি রুটিন হচ্ছে: সকালে স্কুল, বিকেলে প্রাইভেট, রাতে ডেস্কটপে বসে গেমিং, কিঞ্চিৎ পড়াশোনা কিংবা টীচারের পাশে বসে হারমোনিয়ামে সারেগামার সুর তোলা…. আহা! তাতেই আমরা আহ্লাদে গদগদ: আমার বাচ্চার মত হয়না! এই বয়সের বাচ্চাদের ক্ষমতা হচ্ছে, এক গ্লাস দুধ এনে দিলে তা গিলে খাওয়ার শক্তিটুকুও নেই, কোন কোন বাবা মা তো কুড়ি পেরুনো সন্তানকেও মুখে তুলে খাওয়ান, কেউ কেউ আরেক ধাপ এগিয়ে যৌবনে পদার্পণ করা সন্তানটিকেও ‘বাবু’ নামে সম্বোধন করেন: আমার বাবু রাস্তাটিও পার হতে পারেনা…আহা!

আর ২২ কিংবা তদোর্ধ বয়সের ভার্সিটি পড়ুয়া জোয়ানদের কাজ কী? সকাল ৮ টায় চোখ মুছতে মুছতে ঘুম থেকে উঠে লেকচার, বিকেলে ডেটিং, কিংবা বড়জোর ক্রিকেট ফুটবলের ম্যাচ দেখে হৈ হুল্লোড়, দলবেধে রেস্টুরেন্টে ফুডিং & ফেবুতে আপলোডিং কিংবা রাজনৈতিক নেতা সেজে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মৌজ মাস্তি, ব্যস এইটুকুই …. what a severe unproductive paralysed style of life!

চিন্তা করুন, সময়ের অগ্রসরমানতার সাথে যন্ত্রকৌশলের দৌরাত্ম্য বেড়েছে ঠিক, কিন্তু আমাদের মানসিক উন্নতির বদলে কতখানি পিছিয়ে মানসিক বৈকল্যের পর্যায়ে এসে গেছি, ভাবা যায়? এই যুগের মা বাবারা কল্পনাও করতে পারেন না যে ১৫ বছরের একটা বাচ্চা হাদীসের সন্ধানে দেশান্তরী হতে পারে, ১৩ বছর বয়সে মুহাদ্দিস, মুফাক্কিহ হতে পারে; অথচ এগুলো হাজার বছর আগে কল্পনা নয় বাস্তব ছিলো, এমেইজিং!

মানসিক বৈকল্য যে বাড়ছে, সেটা এই এক যুগের জেনারেশন গ্যাপেই আমি দেখতে পাই। আমি নিজেই ক্লাস এইট, নাইনে থাকতে ভাবতাম: দুনিয়াজোড়া কবি হবো, পৃথিবীর চেহারা বদলে দেবো, মনীষী হবো, মানবতার জন্য কাজ করবো, আমি আর ভাইয়া একটা ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশান করবো, একটা হেল্পিং ইন্সটিটিউট দেবো…..
ঠিকাছে, সব অলীক কল্পনা, জানি। কিন্তু তবু এটাও বাক্সের বাইরে একটা স্বপ্ন তো!! আমি অবাক হয়ে এই লেটেস্ট যুগের বাচ্চাদের দেখি, ওদের লাইফের এইম, জীবন নিয়ে চিন্তাভাবনা শুনে অবাক হয়ে যাই: ওরা অনলাইনে বিশ্ব ঘোরে কিন্তু ওদের স্বপ্ন ঘর থেকে স্কুল এটুকুই, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবো কিংবা শাকিব আল হাসানের মত খেলোয়াড় হবো, অমুক গেমস খেলে হাইয়েস্ট র‍্যাংকে যাবো….এটুকুই ওদের স্বপ্নকল্পনার দৌড়। আর দুচারটা ডিজুস বাক্য ছেড়ে ভাবে: মুই কি হনুরে! আদিকাইল্লারা কি খ্যাত!!
যদি বলিও ওদের চিন্তার width আছে, কিন্তু depth খুবই কম….

বলি, সন্তানদেরকে ‘বাবু’ ডেকে দোলনায় তুলে না দিয়ে পৃথিবীর বিচিত্র জগতে বিচরণ করতে শেখান, এই বয়সে শাকিব আল হাসানের স্কোর কাউন্ট না করে ঐ বয়সে ইতিহাসে কে কোন যুদ্ধে সেনাপতি হয়েছিলো, কে মুফাক্কিহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজাদ্দিদ হয়েছিলো, কে কয়টা দেশ জয় করেছিলো, সেইসব গল্প শোনান। জন্মলগ্ন থেকে এসিবাসের শীতলতা না শিখিয়ে মরুভূমির তপ্ত রোদে ঘোড়ার পিঠে ছুটে চলা আরব বেদুঈনদের কল্পনা করতে শেখান, জমিনে বসে আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখান: হয়তো সেই প্রজন্ম মানসিক বৈকল্যের হাত থেকে রক্ষা পাবে আল্লাহ চাইলে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *