এক কাপ চা…. শেষ বিকেলে জানালার পাশে বসে একাকী চুমুক, ইসোফেগাস থেকে ইন্টেস্টাইন পর্যন্ত একটা কুসুম গরম অনুভূতি…. ভাবছিলাম: আহারে, কত কত রোগী ইসোফেজিয়াল আলসার, গ্যাস্ট্রিক আলসার, ক্যান্সারে ভুগছে, কতজনের ইন্টেসটিনাল অবস্ট্রাকশন হয়ে মুখ দিয়ে খেতেই পারছেনা, স্যালাইনের উপর রেখে সার্জারি ওয়ার্ডে রেফার করে দিচ্ছি প্রতিদিন। কত মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে খাবার দেখেও কতকিছু খেতে পারছেনা। আর এই আমি! দিব্যি যা ইচ্ছে তাই মুখে চালান করে দিচ্ছি, একটিবারও ভাবতে হচ্ছেনা। কত বড় নি’আমাত, আলহামদুলিল্লাহ!
এইসব অগণিত নি’আমাতের যেন নাশোকর হয়ে না যাই কোনদিন, প্রভু! এইসব নি’আমাতের হিসেব নিয়েন না, প্রভু, মিলিয়ে দিতে পারবোনা। এই নি’আমাতগুলো কোনদিন কেড়ে নিয়েন না, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন। আপনার দেয়া সবকিছু, আপনি চাইলেই ফিরিয়ে নিতে পারেন, কিন্তু আমরা যে বড় দুর্বল, সামান্যতেই অস্থির হয়ে যাই…
সেদিন জন্ম থেকে বধির এক পেশেন্টের ক্যান্সার ডায়াগনোজ হলো, তা আবার শরীরে ছড়িয়ে গেছে, এক স্যার বলে উঠলেন:
এই মানুষটার আল্লাহ কী হিসাব নেবে? আল্লাহ তো ওকে কিছুই দেয়নি।
আমি ভাবছিলাম: শ্রবণশক্তি দেয়নি, কিন্তু চোখে দেখছে, কানে শুনছে, হাত দিয়ে কাজ করছে, পা দিয়ে হাটছে, ব্রেইন দিয়ে চিন্তা করছে…. ক্যান্সার হয়েছে, কিন্তু শরীরের আরও অসংখ্য সিস্টেম এখনো চালু আছে, এগুলো কিছুই না?? চোখে ভাসছিলো সেই প্রাচীন দৃশ্য: জনহীন মরুভূমির মাঝে ছোট্ট একটি কুড়ে, তার মাঝে হাত পা বিহীন, সন্তান সন্ততি বিহীন একাকী এক বৃদ্ধ জপছে: আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ।
– আপনি কী কারণে আল্লাহর শুকরিয়া করছেন?
– আল্লাহ যে নিঃশ্বাসটুকু নেয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন, আমাকে এই দুর্গম স্থানেও বাঁচিয়ে রেখেছেন, এর নাশোকর আমি কি করে হই??