নিক্বাব কি ম্যান্ডেটরী ?

নিক্বাব সমাচার- ১

মেডিকেলে ভর্তি হওয়া এক ছোটবোন ইনবক্সে উপদেশ চাইলো: আপু, ক্লাসে আমি একমাত্র নিক্বাবী, ম্যাডাম খুব বকাবকি করছে, কোনরকমেই নিক্বাব দেয়া যাবেনা…. কী করবো, আপু?

শুনে এত্ত কষ্ট লাগলো! আমাদের মেডিকেলে নিক্বাব কেন, হাত মোজা পা মোজা পরে দিব্যি কোন সমস্যা হচ্ছেনা, আর ওরা নিক্বাব করতেই দিতে চায়না? এমেইজিং! বোনটির জন্য দু’আ করা ছাড়া আর কোন উপায় পাচ্ছিনা। অনেকেই হয়তো ভাববেন: নিক্বাব কি ওয়াজিব নাকি? এটা নিয়ে এত মাথাব্যথার কী আছে? আসলে মাথাব্যথার বিষয়টা দু’জায়গায়:

প্রথমত: যারা বলে থাকেন, নিক্বাব ম্যান্ডেটরী না, তারা আমাকে জিজ্ঞেস না করে www.islamqa.info/en তে একটু ঢু মেরে দেখুন, ফাতওয়ার জন্য এই সাইটটা আমরা-আপনারাই সবচে বেশি ইউজ করি, অন্যদের রেফারেন্স দিচ্ছিনা, সহীহ আক্বীদার রেফারেন্সই দিলাম। নিজের হিসেব নিজেই মিলিয়ে নিন।

দ্বিতীয়ত: যে বা যারা এখনও নিক্বাব করেনা, তাদেরকে আমি জোর করে নিক্বাবী হতে বলবোনা। তবে আমার দেখা অনুযায়ী, যে বোনেরা জীবনে একবার নিক্বাব ছেড়ে হিজাব শুরু করেছে, ওয়াল্লাহি, তাদের অধিকাংশকেই আমি ধীরে ধীরে নিচেই নামতে দেখেছি(আমি জাজমেন্ট করার মত কেউ না, তবুও হাদীসেই তো আছে, মানুষের বাহ্যিক দেখেই আন্দাজ করা উচিৎ, ভেতরের খবর জানা তো সম্ভব না), খুব কম মানুষকেই বিপরীত পেয়েছি, কারণ দ্বীন হচ্ছে আকড়ে থাকার বিষয়, প্রতিমুহূর্তে নবায়ন করার বিষয়, প্রতিযোগিতা করে উপরে ওঠার বিষয়: কিন্তু যে বা যারাই একবার দ্বীনের সাথে কম্প্রোমাইজ করা শুরু করেছে, দ্বীনের বিষয়ে একটু একটু ছাড় দেওয়া শুরু করেছে, তারা আর কমই উঠে দাঁড়াতে পেরেছে….. বিবর্তনটা কেমন?

আচ্ছা প্রয়োজনের স্বার্থে নিক্বাব দু একদিন না-ই বা করলাম  নিক্বাব না করলেই কী? এটা তো ফরজ না  হিজাব যখন করছি, একটু কালারফুল হিজাব হোক না  আচ্ছা, আবায়ার কি দরকার? ঢিলেঢালা পোশাক পরলেই তো আবায়ার কাজ চলে যায়  শুধু কামিজ কেন, লংস্কার্ট পরে কি পর্দা হয়না?  ফুল স্লীভ কী দরকার? কাজের সুবিধার জন্য থ্রী-কোয়ার্টার স্লীভেই পর্দা হয় বিভিন্ন অকেশানে ঠোঁটে একটু লিপস্টিক, চোখে একটু কাজল দেওয়াই যায়  ওহো!এত সুন্দর একটা ফটো এসেছে, ফেবুতে আপলোড দিলেই বা কী?  (চলবে)……

আর ছেলেদের ক্ষেত্রে?
পাঞ্জাবী পাজামা টুপির কী জরুরত? ঢীলেঢালা যেকোন পোশাক হলেই তো হয়  টুপি পরার কি দরকার? এটা তো সুন্নাতে আদত  দাড়ি টা একটু কমিয়ে রাখলেও হয়  আরেকটু ছেটে ঘাসের স্তর বানালেও হয়, সুন্নাত তো হলোই  টাখনুর উপরে কাপড় কী দরকার? আমি তো অহংকার করছিনা  আত্মগোপনের জন্য মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে দাড়ি আপাতত না রাখলেও চলে, পরে ইসলামী হুকুমাত কায়েম হলে শুরু করা যাবে  (চলবে)…..

আল্লাহ এই বিবর্তনবাদ থেকে আমাদের রক্ষা করুন। এজন্য সামান্য বিবর্তনকেও খুব ভয় পাই, বিয়ের পরে হাজব্যান্ডের সাথে ঘোরার জন্য কালো আবায়া থেকে কালারফুল আবায়া পরার অনেক উপদেশ পেয়েছি নিকটজনের কাছ থেকে, কয়েকটা বানিয়েছিলাম একটু ভিন্ন কালারের, তারপর আবারও কালোতে ফিরে এসেছি।
– কেন, সাহাবিয়ারা কি কালোই পরতেন? কুরআনে কি এসেছে?
– না, আসেনি। উনারা কালো পরতেন বলে একটা হাদীসে পেয়েছি তবে কালো ভিন্ন অন্য পরেননি এমন কোন প্রমাণ আছে বলে জানা নেই। আমার নিজেরও ভিন্ন কালারের আবায়া আছে, আমার নিকটজনেরাও অনেকেই পরে কালারফুল হিজাব, কক্ষণো বাধা দিইনি, তবে এটা ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি এই কারণে যে: একটু একটু মডার্ন হতে হতে আবারও যেন সেই ‘শর্ট & কালারফুল ডাজলিং আবায়া’র যুগে ফিরে না যাই। কখনোই পরিনা, পরবোনা, তা নয়, তবে প্রিফার করি কালোটাই…..

শেষ জামানায় উম্মাতকে সুন্নাত ‘দাত দিয়ে আঁকড়ে ধরতে’ বলা হয়েছে; একটু একটু ছাড় দিলেই একসময় বিপর্যয় নেমে আসবে এই ভয়েই। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন।

নিক্বাব সমাচার- ২

ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে কেউ যখন জানতে চান: আপু, মুখ না ঢাকলে পর্দা হবে কিনা? উত্তরে আমি এটাই বলি: বিউটিফাই না করে মুখ খুলে রাখলে পর্দা হবে, ইনশাআল্লাহ, যেহেতু এটা নিয়ে ইখতিলাফ আছে। তবে মেজরিটি অপিনিয়ন/শক্তিশালী দালীল মুখ ঢাকার পক্ষে, আমিসহ আমরা অনেকেই যে islamqa ফলো করি, তারা তো এ বিষয়ে আরো কঠিন। এজন্য সেফসাইডে থাকতে চাইলে মুখ ঢাকাটাই উত্তম। আপনি মুখ খুলেই পর্দা করেন, আর উত্তমটার আশা রাখেন, চেষ্টা করেন, আল্লাহর কাছে চাইলে তিনিই সহজ করে দেবেন।

এর বাইরে আমি কখনো কাউকে কিছু বলিনি, বিশ্বাসও করিনা, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, যখন দেখি,

🔰 দ্বীনি বুঝওয়ালা কোন বোন ক্ষেপে গিয়ে তর্ক শুরু করে দেন: মুখ ঢাকা উত্তম, এই কথার ভিত্তি কী?

🔰 কিছু দ্বীনি ভাইবোন তর্ক জুড়ে দেন: মুখ খুলে ফেইসে মেকাপ করা যাবেনা, চোখে লাইনার, ঠোটে লিপস্টিক দেয়া যাবেনা, এই কথা কোথায় আছে?

🔰 কিছু দ্বীনি ভাইবোন সবসময় হিজাব মেনে চললেও বিশেষ অকেশানে(স্পেশ্যালি বিয়ে) গিয়ে মেকাপ করে হিজাব করেন এবং সগর্বে সেই ছবি ফেবুতে আপ্লোডান। কমেন্ট সেকশানে দ্বীনি ভাইবোনদের সুবহানাল্লাহ, মাশাআল্লাহর বন্যা বয়ে যায়। অথচ বিশেষ দিনে পর্দার শর্ত খেলাফ করার অনুমতি নেই, এই কথা বললে এক ধাক্কায় আমাদের ‘পুলিশ’ বানিয়ে দেন।

🔰 আমার চেয়ে বেশি দ্বীনি বুঝ রাখেন, এমন কিছু দ্বীনি ভাই স্ত্রীকে টাইটফিট প্যান্ট, টপস পরিয়ে মাথায় হিজাব লাগিয়ে দেদারসে ছবি দিচ্ছেন, আর প্রমাণ করতে চাইছেন যে, এতেও নিষেধ নেই। তারমানে পর্দা বলতে ইসলাম মাথার একটুকরো কাপড়কেই বুঝিয়েছেন?

🔰 রিসেন্টলি এক দ্বীনি ভাইয়ের কথা শুনলাম, তিনি দ্বীনি সার্কেলের হয়েও তাদের আয়োজিত বিশেষ ট্রেনিং সেশানগুলোতে সগর্বে প্রচার করে বেড়াচ্ছেন, পর্দার জন্য মুখ ঢাকার কোন প্রয়োজন নেই, কামিজ, শাড়ি যাই পরুন, মাথাটা ঢাকলেই পর্দা পরিপূর্ণ, মুখ ঢাকা এক্সট্রিমিজম। আমি তাদের পোশাককে অসম্মান করিনা, কিন্তু তারা যে বাণী প্রচার করছেন, তার দালীল কী? আর হ্যা, পর্দার জন্য আবায়া/জিলবাব যদি না-ই প্রয়োজন হবে, তবে কুরান/হাদীসে এক্স্যাক্ট এই শব্দগুলোই কেন এসেছে?

তর্কাতর্কি খুব ভয় পাই, প্লিজ তর্কে জড়াবেন না। তবে এখনো যেসব দ্বীনি ভাইবোন জেনে- না জেনে এ বিষয়গুলো নিয়ে অযথা তর্ক করে চলছেন, অনুগ্রহ করে শাইখের ৬ মিনিটের ভিডিওটি দেখবেন। আশা করছি, উনার মত ইলমওয়ালা, ব্যালেন্সড একজন শাইখের (যিনি মদীনা ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স, মাস্টার্স, তারপর উসূলুল ফিক্বহের উপর পিএইচডি) উত্তরকে অবমূল্যায়ন করার যোগ্যতা আমার- আপনার কারো হবেনা।

ভিডিও লিংকঃ https://www.facebook.com/uvbdtv/videos/2927629410587317/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *