আলোকিত নারী: সাইয়িদ ইবনুল মুসায়্যিব তনয়া

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে চেনেন না এমন মুসলিম পাওয়া বোধহয় কঠিন হবে। হাদীস বর্ণনায় তার পারদর্শিতা ছিলো সবাইকে ছাড়িয়ে। তারই সুযোগ্য মেয়েকে বিয়ে করে তার জ্ঞানসাম্রাজ্যের ওয়ারিশ হতে চেয়েছিলেন তাবে’ঈ সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহ। জ্ঞানরাজ্যে এই মহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন অত্যন্ত প্রসিদ্ধ, অসংখ্য ছাত্র তার দারসে নিয়মিত হাজির হতো তার জ্ঞানের মণিমুক্তো কুড়োতে। আর এই মহান দম্পতির কোলজুড়ে যে মেয়ে আসে, পরবর্তীতে  তিনিও হয়ে ওঠেন ইতিহাসে আরেক অনন্যা নারীর দৃষ্টান্ত।

সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. এর খুব ঘনিষ্ঠ ও মেধাবী ছাত্র ছিলেন আব্দুল্লাহ। বিয়ের বয়সে উপনীত হলে যোগ্য পিতা তার হাতেই তুলে দেন আদরের কন্যাকে।

বিয়ের পরদিন সকাল, সদ্যবিবাহিত আবদুল্লাহ রওনা হয়েছেন উস্তাদ ও শ্বশুরের দারসে হাজির হতে৷ বিয়ে করেছেন বলেই তো আর ইল্মের দরজা বন্ধ করে দেয়া যায়না, ইল্মের এমন বাতিঘরে তার পদার্পণই তো জ্ঞানসাগরে অবগাহনের নেশায়। প্রিয়তমা স্ত্রী এগিয়ে এলেন,

– আপনি কোথায় বেরোচ্ছেন?
– এইতো, আপনার বাবার দারসে।
– বসুন, আমিই আপনাকে আব্বাজীর দারস পড়িয়ে দিচ্ছি। যেতে হবেনা।

এরপর টানা একমাস আব্দুল্লাহ রহ. উস্তাদের দারসে অনুপস্থিত থাকেন, কারণ স্ত্রীর দারসই তার জন্য যথেষ্ট ছিলো। কি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ভাগ্যবতী সেই নারী, যে বিবাহের আগেই তার স্বামীকে পড়ানোর যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছিলো! যারা কটাক্ষ করে বলে, ইসলাম নারীকে জ্ঞানার্জনের সু্যোগ দেয়না, এই মহীয়সীই তাদের জন্য জবাব। ইসলামের ইতিহাসে নারীরা শুধু ইল্ম অর্জনই করেনি, ইল্ম শিক্ষাদানেও ছিলো অগ্রণী। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে শুরু করে ইমাম বুখারি, ইমাম আয-যাহাবী, ইমাম সুবুক্বী, ইমাম ইবন হাজার আল-আসক্বালানী, ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহিমাহুমুল্লাহদের উস্তাদ পর্যন্ত নারী ছিলেন।

এই আব্দুল্লাহ রহিমাহুল্লাহই পরবর্তীতে স্বীয় স্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন:

“সে ছিলো একজন সুন্দরতম মানুষ। কুরআনকে যারা হৃদয়ে ধারণ করে, তাদের মাঝে সবচে অভিজ্ঞ। আর স্বামীর হক্বের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতী আদর্শের সর্বোত্তম বুঝনেওয়ালা অনুসারী।”

এমন পুন্যবতী, বিদূষী ও সাহসী নারীরাই ছিলেন আমাদের আদর্শ। আমরা ভুলে যাই; তবে ইতিহাস আমাদের দরজায় কড়া নেড়ে যায়- নারী তুমি আজ কাদের অনুসারী হতে চাও? যারা তোমার নারীত্বকে ভুলিয়ে পশ্চিমাদের পুরুষালি ছাঁচে গড়তে চায়, তাদের? না ওয়াহীর আলোয় আলোকিত নারীদের, যারা অন্দর থেকেই আলোকিত করেছিলো আরব থেকে রোম, পারস্য, বাগদাদ নগরী কিংবা সুদূর গ্রানাডার অন্ধকার জনপদ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *