প্যারেন্টিং বিষয়ে আমাদের আগের জেনারেশন থেকে এই জেনারেশনে কিছু বড় ধরণের পরিবর্তন প্রয়োজন, তার মধ্যে একটি হচ্ছে, বাচ্চাদের কোন নেগেটিভ এটিচিউড নিয়ে নেগেটিভলি কমেন্ট করা, কিংবা প্রিএজাম্পশন করে নেগেটিভ কথা বলা।
উদাহরণ দিই, মনে করুন কোন বাচ্চা খুব চুপচাপ স্বভাবের, তাকে নিয়ে কমেন্ট করা হলো: বাচ্চাটা ঘরকুনো হয়েছে। কোন বাচ্চা একটু চঞ্চল, মুরুব্বিরা বললেন: বাচ্চাটা খুব পাজি। কোন বাচ্চা একটু যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে, তাকে বলা হলো: বেয়াদব কিংবা গলাবাজ। কেউ হয়তো একটু বড়দের মত গোছালো কিংবা কল্পনাবিলাসী স্বভাবের, তাকে বলা হলো: অকালপক্ক। মানে মোটামুটি সবকিছুকে একটা নেগেটিভ ট্যাগ দিয়ে দেয়া, অথচ এটাই সত্য যে প্রতিটা বাচ্চা একরকম নয়, জন্মগতভাবেই কেউ একটু শান্ত স্বভাবের, কেউ একটু চঞ্চল, অস্থিরচিত্ত, কেউ অতি আগ্রহী, কেউ কল্পনাবিলাসী, কেউ ক্রিয়েটিভ, কেউ বাকপটু, কেউ চুপচাপ, কেউ ইমোশনাল- এগুলোর প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই পজিটিভ কিছু দিক আছে এবং এগুলো পজিটিভলি হ্যান্ডেল করারও নিয়ম আছে। কোন একটা বৈশিষ্ট্যকেই ডেফিনিটলি ভালো কিংবা খারাপ বলে ফেলা যায়না…..
আবার এমনটাও হয়, কোন বাচ্চার বাবা কিংবা মায়ের মধ্যে হয়তো কোন একটা নেগেটিভ এটিচিউড আছে, ঐ বাচ্চাটার কোন আচরনে একটু অন্যরকম দেখলেই কেউ বলে উঠবে: অমন মুখপোড়া মায়ের মেয়ে এমন তো হবেই! কিংবা, বাপের মতই একগুয়ে হয়েছে ছেলেটা….’মর্নিং শোজ দ্য ডেজ’, এই বয়সেই এমন ত্যাড়া, বড় হয়ে না জানি কী হয়!
আচ্ছা, আমার একদম নিজের অভিজ্ঞতার কথাই বলি, বাচ্চাকাল থেকেই আমি একটু যুক্তিবাদী ধাচের ছিলাম। তো মুরুব্বিরা কোন কথা না বুঝিয়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে খুব খারাপ লাগতো, মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করে বসতাম। যথারীতি মুরুব্বিদের কাছে ট্যাগ খেয়ে গেলাম: এখনই এমন গলাবাজ, বড় হয়ে যে কী হবে! খুব কষ্ট লাগতো এগুলো শুনে, কোন বিষয়ে লজিক্যাল রিজনিং দেয়াও কি বেয়াদবি? গলাবাজি? যাহোক, শৈশব পেরিয়ে কৈশোর এবং তারপর…. এখন সেই মুরুব্বিরাই ‘শান্ত-ভদ্রের’ তালিকায় সেই মেয়েটির নাম প্রথমে রাখে (আদতে অত শান্তও না , বাইরে থেকে মনে হয় আরকি)। আমার এক কাজিন ছোটবেলায় এত্ত আহ্লাদী ছিলো, কারও সাথে সামান্য কিছু হলেই বাপ-মায়ের কাছে গিয়ে বিচার দিয়ে দিতো, আমার নিজেরই মনে হতো, মেয়েটা বড় হয়ে খুব কুটনা হবে, যদিও মুখে বলিনি। সেই মেয়ে বড় হয়ে এতই আলাভোলা, শান্তশিষ্ট হয়ে গেলো, এখন কল্পনাই করা যাবেনা ছোটবেলার কথা।
এজন্য বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ‘মর্নিং শোজ দ্য ডেজ’ কথাটি সবসময় সত্য নয়। মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য জন্মগত কিংবা জেনেটিক হলেও বেশিরভাগই ‘অর্জিত’, আর এই অর্জনের পর্যায়ে গিয়ে অবুঝ বয়সের বেশিরভাগ অসংগত আচরনই বদলে যায়। এজন্য বাচ্চাদের সম্পর্কে প্রিএজাম্পশন করে নেগেটিভ কিছু ট্যাগ যুক্ত করে দেয়া খুব ক্ষতিকর, এগুলো শিশুদের মনে একবার ইম্প্রিন্ট হয়ে গেলে আজীবন থেকে যায়।
চাইল্ড সাইকোলজির একটা রুলিং হচ্ছে, কোন বাচ্চার একটা এটিচিউড নেগেটিভ মনে হলে সেই এটিচিউডটাকে দোষ দেয়া যেতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিকে না। যেমন:
– তুমি এমন জেদী কেন? তুমি এত বেয়াদব কেন?
এভাবে বাচ্চাটাকে ‘জেদী’ কিংবা ‘বেয়াদব’ ট্যাগ দিলে এটা ওর সাইকোলজিতে নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলবে, যা তাকে সত্যি সত্যিই আরো অনুরূপ আচরনে উদ্বুদ্ধ করবে। বিপরীতভাবে তাকে যদি এভাবে বলা যায়:
– তুমি তো ভালো মেয়ে, কিন্তু এমন জেদ করছো কেন বাবা?
এই কথাটিতে বাচ্চা বুঝতে পারে যে, সে আসলে ভালো কিন্তু সে যে আচরণটি করছে এটা ভালো নয়। কনশাসলি চিন্তা করলে হয়তো সে আস্তে আস্তে এটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। শুধু বাচ্চাই নয়, বড়দের ক্ষেত্রেও একটা মানুষকে পজিটিভাইজ করার মূলমন্ত্র হচ্ছে তার ব্যাপারে পজিটিভ কমেন্ট। একটা ছোট্ট নেগেটিভ কমেন্ট যেমন একটা বাচ্চাকে আরও খারাপ করে ফেলতে পারে, একটা ছোট্ট পজিটিভ কমেন্টও বাচ্চাটার জন্য অনেক বড় মোটিভেশন হতে পারে।
প্রয়োজন একটুখানি সচেতনতা…..