ডাক্তার বনাম রোগী: আর কত ঠোকাঠুকি ?

একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখা যায় যে বাংলাদেশের সামষ্টিক জনগোষ্ঠী কেন যেন ‘ডাক্তার’ সমাজের উপর খুব ক্ষেপে আছে। নিজে প্র‍্যাক্টিসিং ডাক্তার না হলেও গায়ে লাগে বটে, যেহেতু আমিও সার্টিফিকেটগতভাবে ঐ সমাজেরই অংশ। কিন্তু পেছনের কারণটা খুজে বের করতে গলদঘর্ম হই। তারপরেও চিন্তাভাবনা করে যেটা পেলাম, সেটা হচ্ছে: ইগো। একটা ইগোসেন্টার্ড সোসাইটি থেকে যে প্রোডাক্টগুলো ডাক্তার হয়ে বের হচ্ছে, তারাও ইগোয়িস্টিক হয়েই বেরোচ্ছে, যারা পেশেন্ট হয়ে বেরোচ্ছে তারাও ইগোর ঊর্ধ্বে উঠতে পারছেনা। সবাই নিজের দিকটা বোঝে, অন্যের দিক থেকে চিন্তা করেনা। ‘এম্প্যাথি’র বড্ড অভাব….

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ‘পূর্বধারণা’। ডাক্তারদের মাথায় এটা সেট হয়ে গেছে যে, রোগীমাত্রই ‘বেয়াদব’, এদের ঝাড়ির উপর রাখতে হবে, নইলে মাথায় উঠবে। আর রোগীদের মাথায় সেট হয়ে আছে যে, ডাক্তারমাত্রই ‘কসাই’, এদের খেয়েপরে চলার টাকা নেই, রোগী মেরে টাকাওয়ালা হওয়াই এদের ব্যবসা।

অথচ আমার এক বছরের ইন্টার্ন লাইফে আমি প্রচুর ভালো ডাক্তার দেখেছি, যারা মন থেকে রোগীর ভালো চান, রোগী চূড়ান্ত বিরক্ত করলেও তারা ধৈর্য্য রাখতে চেষ্টা করেন। আবার ইয়াং ডাক্তার বিশেষ করে ইন্টার্নদের মধ্যে বিপরীতটাও প্রচুর দেখেছি, সামান্য বিরক্তিতেই রোগীকে ‘বেয়াদব’ ট্যাগ দিয়ে দুটো বেশি কথা শুনায়ে দিতে তৎপর, এমন ডাক্তারও প্রচুর। তবে সিনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে এই পার্সেন্টেজ অনেক কম। বিপরীতে ভালো পেশেন্টও প্রচুর দেখেছি, যারা নিজেদের কষ্ট সত্ত্বেও ডাক্তারের উপর অভিযোগ করে না, ডাক্তারও যে একটা মানুষ, তারও ক্লান্তি বলতে কিছু আছে, এমন বুঝদার রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আবার সত্যিকারে বেয়াদব রোগীও আছে প্রচুর, এরা হসপিটালের করিডোরে প্রবেশ করেই ‘কসাই’ শায়েস্তা করার মানস নিয়ে, কোনভাবে ডাক্তারকে দুইটা গালি দিয়ে নিজের ঠাট-বাট একটু দেখিয়ে আসতে পারাই এদের উদ্দেশ্য।

ঐ যে বললাম, কারণটা কিন্তু ‘ইগো’, আমরা কেউই এর ঊর্ধ্বে উঠতে পারছিনা, সবাই ‘আমি ঠিক’ মতবাদে বিশ্বাসী। অন্যের কষ্ট, অনুভূতির প্রতি সামান্য এম্প্যাথি কারো নেই। সমাজ বদলাবে কীভাবে? আমরা ডাক্তারেরা বেয়াদব রোগীকে গালায়ে ঠিক করবো, রোগীরা কসাই ডাক্তারের গুষ্টি উদ্ধার করবো। অথচ রোগীরাও ভাবছিনা যে, যত গালিই দিই না কেন, রোগে পড়লে ঐ ডাক্তারের ধর্নাই দেয়া লাগবে। ডাক্তারেরাও ভাবছিনা, রোগীকে ঝাড়ি দিয়ে কী লাভ? আমার নিজের মা, নিজের বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তারাও তো ‘রোগী’, অনুভূতিটা সবারই সমান….

ক্যাম্নে সমাজ বদলাবেন? ‘ইগো’র উপরে উঠতে পারবেন? কেউ পারবেন না। গাল দিতে পারবেন, সেটাতো পারছেন। লাভ কী হচ্ছে? ডাক্তার-রোগীর মাঝে ফারাকগুলো দিন দিন বেড়েই চলছে। চলুক তবে এভাবেই…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *