মৃত্যু কি সবাইকে ভাবায় ?

একটা বিষয় আত্নপরিসংখ্যান করে দেখলাম: কর্মস্থলে থাকাকালীন ঈমান যদি থাকে ১০-২০%, বাসায় ফিরে আত্মসমালোচনা ও কিতাবাদি অধ্যয়নের পর ঈমান বেড়ে হয় ৩০-৪০%, কোন দ্বীনি মজলিস কিংবা ঈমানী মুযাকারায় বসলে সেটা বেড়ে গিয়ে ৬০-৭০% পর্যন্ত উঠে যায়, আর দুঃখ কষ্টে আপতিত হয়ে আল্লাহর দিকে নিবিষ্টচিত্তে রুজু হয়ে একাকী কিংবা সিজদায় কান্নাকাটি করার সময় সেটা ৮০-৯০% এও উঠে যায়, আর দ্বীনছাড়া দুনিয়াবি সার্কেলের সাথে আলোচনায় বসলে ঈমান নেমে মাইনাস ২০-৩০% কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে মাইনাস ৪০-৫০% এও চলে আসে….

অতঃপর পরিসংখ্যান শেষে বুঝলাম: আল্লাহর স্মরণ আসলে আল্লাহ ওয়ালাদের সোহবত, দ্বীনি মজলিস, দ্বীনদার সঙ্গী কিংবা দ্বীনি পরিবেশ ছাড়া হয়না।

যেমন: একটা বিষয় মিলিয়ে দেখলাম, হসপিটালে চোখের সামনে যতই মৃত্যু দেখিনা কেন, ডিউটিরত অবস্থায় দৌড়ের উপরে ঐ মৃত্যুগুলো স্রেফ একটা বস্তুগত ব্যাপার ‘জন্মিলে মরিতে হইবে’ এমন ছাড়া আর তেমন কিছুই মনে হয়না, সেটা নিজের জন্য রিমাইন্ডার হিসেবেও কাজ করেনা, যতক্ষণ না আমি একলা বসে কিংবা বাসায় এসে নিজের সাথে হিসেব মেলাই: আমাকেই এইভাবে একদিন চলে যেতে হবে। ব্যাপারটা বস্তুগত দিক থেকে যত সহজ মনে হচ্ছে, তেমন নয়: একটা মৃত্যু মানে স্রেফ মৃত্যু না, ঐ ব্যক্তির জন্য কিয়ামত, কিংবা বারযাখের জগৎ শুরু হয়ে যাওয়া। যে মুহূর্তে আমি আপনি CPR দেয়ার জন্য ছুটোছুটি করছি, বাইরে থেকে ওটা একটা ‘ক্যাডাভার’ ছাড়া আর কিছুই না হলেও আসলে আসমানের জগতে ঐ ব্যক্তির রূহ নিয়ে অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে, মালাকুল মাউতের জান কবজের পর মালাইকারা সেটি নিয়ে ইল্লীয়্যীন কিংবা সিজ্জীনে লিপিবদ্ধ করার জন্য ছুটে যাচ্ছেন, আসমান ও জমীনের মাঝে বিভিন্ন ধাপে আরো অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে, যে বর্ণনা আমরা সহীহ হাদীসে পেয়ে থাকি।

মোদ্দাকথা হচ্ছে, চোখের সামনে মৃত্যু হাজারটা দেখলেও ঈমান একটুও বাড়বেনা, যদি তা নিয়ে নিজের সাথে কিংবা অন্য কারও সাথে ঈমানী মুজাকারা করা হয়। এ কারণেই অনেক দ্বীনদার মানুষ ডাক্তার হলেও সব ডাক্তারই দ্বীনদার হয়ে যান না। ডোম মামারা আজীবন লাশ কাটাকাটি করলেও তাদের ঈমান বেড়ে যায়না।

ঈমান কিংবা তাক্বওয়া একটা আজীবন অনুশীলনের জিনিস, অটো রেগুলেটোরি কোন মেকানিজম এখানে নেই যে সুইচ টিপলেই বেড়ে যাবে….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *