CBT ও তাওয়াক্কুল

‘থিঙ্ক পজিটিভ, বি পজিটিভ’ স্লোগান নিয়ে যে লেখাগুলো লিখি, মেডিকেল সাইকিয়াট্রিতে তার একটা সুন্দর নাম আছে, সেটা হচ্ছে CBT (Cognitive Behavioral Therapy)। এর মূল কথা হচ্ছে: “It’s not events themselves that upset us, but the meanings we give them.” অর্থাৎ আমাদের জীবনে যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলোই আমাদের বিপর্যস্ত করেনা, বরং আমরা নিজেরা ঘটনাগুলোর যে অর্থ দাড় করাই, সেগুলোই বিপর্যস্ত করে। এই চিন্তাটিকে প্রকাশ করা হয় একটি ত্রিভুজ দিয়ে, যার তিন কোনে পরপর তিনটি উপাদান অবস্থিত:

Thoughts -> Feelings -> Behavior (চিন্তা -> অনুভূতি -> আচরণ)

অর্থাৎ, মানুষ যেভাবে চিন্তা করে, তার অনুভূতি সেভাবেই তৈরি হয়, আর সেই অনুসারেই সে আচরন করে। মানে চিন্তাটাকে ঘুরিয়ে দিতে পারলেই মানুষের আচরন ও কাজ সবগুলোকেই ঘুরিয়ে দেয়া সম্ভব। একটা উদাহরণ দিই:

♦ ‘X’ তো মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেলো, আমি পেলাম না। হায়রে, আমার জীবন শেষ….
♦ ‘X’ তো মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেলোই, যাক কি আর করা? মাথা কুটে কী লাভ? সবাই তো আর সব পায়না, এটা না পেলাম, হয়তো আরও ভালো কিছু পাবো….
♦ ‘X’ তো মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেলো, থাক কি আর করা? নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার চেয়ে ভালো জানেন, আমি তো কেবল বর্তমানটুকুই জানি। আমার জন্য নিশ্চয়ই উত্তম কিছু আছে, দুনিয়ায় যদি না পাই কিছু, তাতেও ক্ষতি নেই, দুনিয়ায় অপূরণীয় প্রতিটি দু’আ আখিরাতের ব্যাংকে জমা থাকে। আর হ্যা, তাক্বদীর তো পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগেই ফিক্সড ছিলো, কেউ চাইলেই বদলাতে পারতোনা। আর ও চান্স পেলো তাই আমার জীবন কেন ব্যর্থ হবে? দেশে ও ছাড়াও আরও কত শত শত মানুষ চান্স পেয়েছে, কাউকে কি আমি ঠেকাতে পারতাম? আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সবর & শুকর করতে পারি। ও হয়তো বড় একটা পদ পেয়ে গেলো দুনিয়ায়, আর অনন্তকালীন যে জীবন, আমি আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকলে সেই জীবনে ওর চেয়ে অনেক অনেক উপরে চলে যেতে পারি, সেই পথটা সবার জন্য খোলাই আছে, ওখানে সিজিপিএ চাইবে না, ইখলাস নিয়ে করা এতটুকু আমল।

★ উপরের ১ নং চিন্তাটি একজন টিপিক্যাল নৈরাশ্যবাদী মানুষের চিন্তা, ২ নং চিন্তাটি CBT এর চিন্তাধারা, আর ৩ নংটি একজন মুত্তাক্বী, মুতাওয়াক্কীলের চিন্তা। কোনটা সবচে ইফেক্টিভ?? আসলে দুনিয়ায় আপনি যতভাবেই চেষ্টা করেন না কেন, সব অপ্রাপ্তির উত্তর আপনি পাবেন না, কিন্তু আখিরাতে বিশ্বাসই কেবল আপনার প্রতিটি অপ্রাপ্তি, প্রতিটি দুঃখ, কষ্ট, হতাশার একটা উত্তর দিতে পারে: যতটুকু মাইনাস, তারও বেশি প্লাস। আমার মনে হয়না, ক্বুরআন & হাদীসের চেয়ে কার্যকরী আর কোন এন্টি সাইকোটিক, এন্টি ডিপ্রেসান্ট হতে পারে; হতে পারেই না, তবে তা প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন প্রায়োগিক দক্ষতা, কিংবা একটি পজিটিভ চিন্তাশীল হৃদয়।

এমন কোন সমস্যা নেই, যেটার একটা পজিটিভিটি বের করতে পারবেন না ক্বুরআন & হাদীস থেকে। সামান্য এক একটি আয়াতে এক একটি ফর্মূলা বলে দেয়া হয়েছে, যার প্রয়োগে আপনার মন পজিটিভ হতে বাধ্য, কিন্তু সেইভাবে চিন্তা আর প্রয়োগ ঘটাতে হবে। পড়েই দেখুন না, সূরা হাদীদের ২০ থেকে ২৩ পর্যন্ত, কয়েকটি কথায় কী অদ্ভূত সুন্দরভাবে মানুষকে সান্ত্বনার পথ বলে দেয়া হয়েছে।

তো সেদিন যেটা বলছিলাম এক ছোট বোনকে, তার প্রশ্নের উত্তরে:
‘আপু, আমার জীবনটা ব্যর্থ মনে হয়, কোন অর্থ খুঁজে পাইনা।’
– চোখ বন্ধ করে যদি জান্নাত- জাহান্নাম দেখতে পাও, পৃথিবীর কোন অপ্রাপ্তিই তোমার কাছে অপ্রাপ্তি মনে হবেনা, এই চোখটা নিজেকেই বানাতে হবে, এই ভিজ্যুয়ালাইজেশানটাই ঈমান কিংবা তাওয়াক্কুল…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *