সম্পর্কগুলো গাছের মত…

সেই দম্পতির চেয়ে অযোগ্য আর নেই, যারা নিজেদের সমস্যার সমাধান নিজেরা করতে পারেনা, তার জন্য তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম পক্ষ পর্যন্ত গড়াতে হয়। মীর্জা ইয়াওয়ার বেগ যেমনটি বলেছিলেন: যারা নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধান করতে পারেনা, তারা আসলে বিয়ের যোগ্যই না। আলবৎ সত্য…

আমার এই কথা শুনে হয়তো এবার স্বামী তার স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীকে দেখিয়ে বলবেন: দেখছো, তুমি আসলেই ইম্ম্যাচিউর, অযোগ্য। আমি বললাম: আপনি আরো এক ধাপ ইম্ম্যাচিউরিটির পরিচয় দিলেন। আপনাদের দুজনের অযোগ্যতার বোঝাকে আপনার স্পাউজের একার উপর চাপিয়ে নিরস্ত হলেন, তারচে বরং আমার স্বল্পজ্ঞানে একটা ছোট লিস্ট দিচ্ছি, মিলিয়ে দেখুন, সমস্যাটা আপনাদের কার মধ্যে কোনটা, সেই অনুযায়ী সমাধান করার চেষ্টা করুন:

১. হাজব্যান্ড-ওয়াইফ পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে সবচে বিশ্বস্ত একটা শেয়ারিং এর জায়গা, এই শেয়ারিং এর জায়গাটা আপনাদের মাঝে আগের মতই আছে কিনা, খেয়াল করুন। অর্থাৎ, আপনাদের কোন সুখ, দুঃখ, অভাব, অভিযোগের কথা স্পাউজের কাছে শেয়ার করার মত স্পেসটা আছে কিনা, একজন আরেকজনের অনুভূতিগুলো ইগ্নোর করেন কিনা, নিজের চিন্তাটা সবসময় চাপিয়ে দেন কিনা, তার অভিযোগগুলো মন দিয়ে শোনেন কিনা, সামান্য কথায় ওভার রিএক্ট করে বসেন কিনা…. এসব যদি হয়, আপনি নিশ্চিত থাকেন, বিয়ের অল্পদিনের মধ্যেই সেই শেয়ারিং এর ‘স্পেইস’ টা হারাবে, আর মানুষ তার কষ্টের কথা শেয়ার না করে বাচতে পারেনা, এটাই প্রবৃত্তি, আর এই প্রবৃত্তিটা প্রকৃতিগতভাবে মেয়েদের আরও বেশি, কিন্তু স্পাউজের কাছে এই স্পেইসটার বিশ্বস্ততা হারানো মানেই আপনার সংসারের কথা তৃতীয়, চতুর্থ পক্ষের কাছে গড়াবে, তাতে পরিণতি ভয়াবহ হবে, ঐযে বললাম, শেয়ারিং ছাড়া মানুষ আসলে বাচতে পারেনা। এই স্পেইসটুকু রিচেক করুন, না থাকলে আবার গড়ার চেষ্টা করুন। বিবাহিত দম্পতিদের মাঝে ‘তুমি আমাকে আর আগের মত ভালোবাসো না’ টাইপের যত অনুযোগ শোনা যায়, তার মূল বক্তব্য মোটামুটি এটাই: ‘তোমার কাছে আমার সেই ‘স্পেইস’টুকু আর নেই, আমি অন্য কোথাও স্পেইস খুঁজে নিচ্ছি অথবা নিজেই নিজেকে ধাতস্থ করছি যাতে তোমাকে আর প্রয়োজন না হয়।’ এই যে নেগেটিভ ফিলিংস ক্রিয়েট হলো, এটার কারণেই বিয়ের ৪০ বছর পরেও আপনারা উপলব্ধি করবেন: সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়েই সংসার করি, করতে হয় তাই করি, সুখের সংজ্ঞা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই….
আফসোস! এই কি তাহলে ‘সুকূন ওয়া মাওয়াদ্দাহ’!!

২. কথায় কথায় মা-বাবা, ভাই বোন কিংবা বন্ধু বান্ধবের কাছে স্পাউজের বদনাম শেয়ার করা পরিহার করুন। স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হয়েছে, মাকে ফোন দিয়ে বললেন: মা, আমি আর ওর সাথে সংসার করতে পারবোনা। স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়েছে, বাবাকে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন, আপনার বাবা বললো মা কে, মা বললো ভাইকে, পুরো সংসার কান্নাকাটি, খাওয়া নাওয়া বাদ দিয়ে আপনার স্বামীর বদনাম গাইতে লাগলো, ওদিকে ততক্ষণে হয়তো আপনাদের খুনসুটি মিটে গিয়ে সমঝোতাও হয়ে গেছে, আপনারা হয়তো একসাথে বসে কফি খাচ্ছেন। লসটা কার হলো??

শুনুন, মোটা দাগে একটা কথা বলি: কথায় কথায় বাপ মায়ের কাছে অভিযোগ করা ছাড়ুন, আপনি আপনার বাবা মায়ের কোলের শিশুটি নন, আপনি আরেকটি শিশুর হবু বাবা/মা, এই ধরণের ছেলেমানুষি আপনার সাজেনা,আপনার বাবা মা ভাই বোন বন্ধু বান্ধব সবাই মিলেও আপনাদের মাঝের জট খুলতে পারবেনা, যতক্ষণ না আপনারা নিজেরা উদ্যোগী না হন। আর বাবা মা কিংবা অন্য কারো সাথে ঘরের কথা শেয়ার করার ফলাফল জানেন? বলি:
★ আপনাদের বিয়েটা হওয়ার সময় যদি আপনার বাবা মা ৫% ও নারাজ ছিলো, এমন হয়ে থাকে, তারা প্রথমেই এই খোঁটাটা দিবেন: এইজন্যেই আমরা বিয়েটা চেয়েছিলাম না, তুইতো নিজেই পাগল হয়ে গেলি….
★ দুঃখের সময় আত্মীয়রা আপনার যেই কথাটা শুনে স্বান্তনা দেবে, পরবর্তীতে সুখের সময় সেই পয়েন্টগুলো তুলেই আপনাকে ঘায়েল করবে। কারও সাথে আপনার সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হলেও বলবে: স্বামী/স্ত্রীর সাথেই যে বনিবনা করে চলতে পারেনা, তার সাথে অন্যদের বনিবনা হবে কি করে?
★ স্বামী-স্ত্রীর খুনসুটি, ঝগড়া এগুলো সব সংসারেই আছে, কিন্তু তা আজ হোক কাল হোক মিটেই যায়, কিন্তু ঐ মুহুর্তে আপনি আপনার স্পাউজের যে নেগেটিভ গুলো শেয়ার করলেন, পরবর্তীতে আপনারা ভুলে গেলেও তারা ঠিক ধরে রাখবে, সেটা নিয়েই খোটা দিবে।
★ সবচে বড় কথা, সকালে যেই মানুষটার মুখ দেখে আপনার ঘুম ভাঙে, যাকে ছাড়া জীবন কল্পনা করতে পারেন না, তাকে অন্যদের কাছে খারাপ বানিয়ে আপনার কি আসলেই কোন ফায়দা আছে? অন্যদের মুখে সেই মানুষটা যখন এসব শুনবে, সেও কিন্তু তার বিপরীতে আপনার বদনাম করবে, সেটা কি শুনতে ভালো লাগবে? তারচে নিজেরাই মিটিয়ে ফেলুন না….

৩. তৃতীয় পক্ষের পরামর্শ যদি নিতেই হয়, কারও সাথে শেয়ার করতেই হয়, তাহলে এমন কাউকে বেছে নিন, যে আপনাদের সংসার ভাঙার সিদ্ধান্ত দেবেনা, একটা ওয়াইজ ডিসিশান দিতে পারে এমন কাউকে বলুন। আমার এক বান্ধবী আছে, কখনো যদি কর্তার সাথে কোন বিষয়ে খুনসুটি করে ওকে বলি, জানিস, তোর ভাইয়া এমন একটা কথা বললো। ও উত্তরে বলবে: আসলেই এটা বলা ঠিক হয়নি, কিন্তু তোর জামাই অন্য সব বিষয়ে যতখানি ভালো, এই একটা বিষয় নাহয় মাফই করে দে।

আবার ও যখন বলে কিছু, আমিও ওভাবেই উত্তর দিই: শোন, ভাইয়া এই কাজটা হয়তো ভালো করেনি, কিন্তু তুই কি জানিস ভাইয়া তোকে কত ভালোবাসে? বেশি ভালোবাসে বলেই বেশি অভিমান… 

৪. বাইরের মানুষের সাথে এক্সট্রোভার্ট হতে না পারলেও অন্তত স্বামী-স্ত্রী নিজেদের স্বার্থেই নিজেরা একটু এক্সট্রোভার্ট হওয়ার চেষ্টা করুন: আপনি হয়তো খুব মুখচোরা স্বভাবের, কক্ষণো মুখ ফুটে কোন কষ্টের কথা বলেন না, ভেতরে ভেতরে রাগ হতে হতে একসময় বার্স্ট করেন। তারচে বরং রাগের শুরুতেই স্পাউজকে জানিয়ে দিন: ‘এই বিষয়টি আমার পছন্দ না, আমি কিন্তু রাগ করবো।’ মুখে না বলতে পারলে মেসেজে ভেঙে বলুন, নিজের কথাগুলো ক্লিয়ার করে বলুন, একসময় তো বলবেনই, কিন্তু যত আগে বলা যায়, লেবু তত কম তেতো থাকে, ততই ভালো। তাই সম্পর্কগুলো চূড়ান্তে যাবার আগেই সমাধানের চেষ্টা করুন।

৫. রাগ তো মানুষই হয়, তবে রাগগুলোকে জমিয়ে রাখবেন না, ঠাণ্ডা মাথায় শেয়ার করুন। আর নিজেদের রাগগুলোও তাড়াতাড়ি ভাঙিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। আরে বাবা, মুখে বলতে না পারেন, মোবাইলেই একটা মেসেজ দিন না! যে আগে রাগ ভাঙায়, সে সাময়িক একটু ছোট হলেও আসলে কিন্তু সে বড়ই থাকে। আমার কর্তা একটা কথা বলে: যত ঝামেলাই হোক, দুজনে কথা না বলে ঘুমোতে যাওয়া উচিৎ না। আসলেও তাই, কথা না বলে, রাগটাকে জিইয়ে রেখে আসলে কি নিজে ভালো থাকা যায়??

৬. Ignore the ‘IGNORING’: স্পাউজকে কখনও ইগ্নোর করবেন না, এই একটা জায়গায় কেউ ইগ্নোরড হতে চায়না, ভালোবাসা, আদর, আহ্লাদ পেতেই চাই, সে চায় তার কথাগুলো মানুষটা শুনুক, বুঝুক, সাপোর্ট দিক, প্রতিকার করুক। এমন কিছু বিষয় থাকে, প্রতিকার করাও লাগেনা, শুধু মন দিয়ে শুনলেই হয়, Empathy জিনিসটার মূল্যও অনেক: ‘আসলেই তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি তোমার কষ্টটা কোথায়’ এই টুকু কথার মূল্যও অনেক। আপনার স্পাউজ কারোর একটা বিষয় নিয়ে অভিযোগ করলেই যে সেটা নিয়ে তাদের সাথে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ফেলতে হবে, তা নয়, অন্তত তাকে সাপোর্ট দিন যে তার পাশে আপনি আছেন। এইটুকু কথার জন্যেও সে যতখানি রিলাক্সড হবে, এইটুকু ইগ্নোর করার কারণেও তারচে অনেক বেশি রাগ-ক্রোধ তার মনে জমা হতে থাকবে, আল্টিমেটলি আপনি তার আস্থার জায়গাটুকু হারাবেন, সে হয়তো আস্থার জায়গায় অন্য কাউকে বসিয়ে ফেলবে।

৭. নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর চাপিয়ে দেবেন না, দুজনে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌছার চেষ্টা করুন, এটাই কিন্তু ইসলামিক সিস্টেম, মাশোয়ারা করা। ‘তোমাকে এটা করতেই হবে, এটাতেই মঙ্গল’ এমন না বলে বরং এভাবে বলুন, ‘চলো আমরা বিষয়টার পজিটিভ নেগেটিভ আলোচনা করে আমাদের দুজনের জন্যই ভালো হয়, এমন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাই’। মাছও ধরা হবে, পানিও ছুতে হবেনা, একটু ট্যাক্টিক মেইন্টেইন করা।

৮. কারও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিংবা কেউ সহ্য করতে পারে বলেই এতখানি বোঝা তার উপর চাপিয়ে দিতে থাকবেন না, যাতে একসময় সে আর সামান্যটুকু নিতেও অস্বীকৃতি জানায়, কারণ সহনশীলতার একটা সীমা আছে, তার বাইরে মানুষ যায়না, যেতে পারেনা; যেমন দ্রবন সম্পৃক্ত হয়ে গেলে তাতে আর দ্রব যোগ করা যায়না, আর অতিপৃক্ত হয়ে গেলে তা পড়ে থিতিয়ে। মানুষও তেমন, কেউ তৎক্ষণাৎ রিএক্ট করে, কেউ দশদিন বা একমাস পরে করে, কেউ বিশবছর পরে, কিন্তু করেই। লিমিটের মধ্যেই থেমে যাওয়ার চেষ্টা করুন, হাজার হলেও মানুষ কিন্তু এঞ্জেল নয়।

৯. বিয়ের আগে কিংবা বিয়ের পরেও অবশ্যই অবশ্যই বিয়ে নিয়ে পড়াশোনা করুন, আপনি সব জানেন, সব বোঝেন এমনটি ভাববেন না, ভালো বই, ভালো লেকচার কালেক্ট করে পড়তে ও শুনতে থাকুন। আপনি যা জানেন, তা গরু ছাগলও জানে, কিন্তু তারা মানুষ নয়, তাদের মধ্যে সাইকোলজক্যাল সংঘাত নেই, মানুষের মধ্যে যাবতীয় সমস্যাই সাইকোলজি কিংবা বিবেকবোধের কারণে। বিপরীত জেন্ডারের সাইকোলজিটা সহমর্মিতা নিয়ে জানার চেষ্টা করুন, ডাইভার্স মানুষের সাইকোলজিক্যাল ভ্যারাইটি নিয়ে চিন্তা করুন, বিশ্বাস করুন, আপনি কিছুটা হলেও নিজেকে শুধরাতে পারবেন, অন্যের কথা ও চিন্তার মূল্যায়ন করতে পারবেন। অমুক বই সালাফী/হানাফী আলেমের লেখা, আমি হানাফী/সালাফী তাই পড়বোনা, এমনটি ভুলেও ভাববেন না। মনে রাখবেন, উপকারী জ্ঞান যে সোর্স থেকেই আসুক,তা মানুষকে গাইড করে। আর আপনার সংসারে যখন আগুন লাগবে, তখন এই ছোট ছোট ফিলিংসগুলো, বইয়ে পড়া খুঁটিনাটি শিক্ষাগুলোই তাতে পানি ঢালতে পারবে, সেখানে কোন মানহাজের পরিচয় কাজে দেবেনা।

১০. একটা পয়েন্ট বলে আজকের মত ক্ষান্ত দিই, LAST BUT NOT THE LEAST:
“বাসর রাতে বিড়াল মারা”, আমি আসলেই জানিনা এই প্রবাদের সঠিক অর্থ কী। তবে যেটা বুঝি, প্রথম রাতেই স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেয়া যে তুমি আমার অধীন। এই ব্যাপারটাকে ভাইয়েরা কিছু কট্টর ইসলামিক বই পড়ে কিংবা সোসাইটি থেকে বিকৃত শিক্ষা নিয়ে যতটা ফানি কিংবা কার্যকর মনে করে থাকেন, আদতে বিষয়টা ততটাই ভয়ানক: আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না, প্রথম রাতে আপনার আচরণগুলো আপনার স্ত্রীর মনে কতখানি গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে থাকে, আপনার সামান্য চাপিয়ে দেয়া আচরনও তাকে বুঝিয়ে দেবে: এই মানুষটার কাছ থেকে আমাকে বাকি জীবন জুলুম সহ্য করতে হবে। আর আপনার সহানুভূতিশীল আচরণ তাকে রিলাক্সড করবে: সত্যিই, এই মানুষটির সাথে আমি বাকি জীবন ভালো থাকতে পারবো। বিশ্বাস করুন, মা বোনদের যত জনের কাছে তাদের কষ্টের সংসারগল্প শুনেছি, তাদের অধিকাংশের আক্ষেপের শুরুটাই ছিলো এমন: বিয়ের প্রথমদিনেই/রাতেই ওর ব্যবহার দেখে বুঝতে পেরেছিলাম, আমার মতামতের মূল্য ওর কাছে পাবোনা। বিশবছর কেটে গেছে, সেই ধারণাটাই পোক্ত হয়েছে, বদলেনি….. দেখুন, রাসূলুল্লাহই(সা:) বলেছেন: কোমলতা যে কোন কাজকেই সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। কঠোরতা তার বিপরীত। আপনি আপনার শৌর্য-বীর্য দেখানোর জন্য কঠোরতা প্রদর্শন করলে আসলে ফলাফল ভালো কিছু হবেনা, সংসার কিন্তু অফিস না, স্বামী কিন্তু বসও না। এই জায়গাটায় বস-কর্মচারীর সম্পর্কের চেয়ে সহকর্মী-সহধর্মীর সম্পর্কটাই বেশি সুন্দর, প্রতিযোগীর চেয়ে সহযোগী হতে পারাটাই বেশি সুখকর। এখানে কড়া শাসনে রেখে স্ত্রীকে যতটুকু ভালো বানানো যায়না, তা আদর সোহাগ দিয়ে করা যায়। রাগ কিংবা গোঁয়ার্তুমি দেখিয়ে স্বামীকে যতটুকু ঠিক না করা যায়, অভিমান কিংবা ভালোবাসা দিয়ে তার থেকে বেশি আদায় করা যায়। নিজেকে একরোখা, জেদী প্রমাণ না করে পরস্পর পরস্পরের কাছে সহনশীল প্রমাণ করুন, নিজের অধিকারের চেয়ে নিজের কর্তব্য নিয়ে বেশি সচেতন থাকুন; সবরের বিপরীতে সবরই পাবেন, মার্সির বিপরীতে মার্সিই পাবেন আশা করা যায়, এপারে না পেলেও ওপারে তো পাবেনই, কিন্তু জুলুম করে তার বিপরীতে ভালো আশা করা বোকামীই কেবল।

১১. তারবিয়াহ:
★ দুজনের জীবনের লক্ষ্য দুনিয়ামুখী না করে আখিরাতমুখী করুন, দুনিয়াবি চিন্তার বাইরে যাদের বড় কোন স্বপ্ন থাকে, দুনিয়াবি ছোট খাটো দুঃখ, কষ্ট, না পাওয়া তারা ঐ স্বপ্নের স্বার্থেই ইগ্নোর করতে পারে।

★ ঘরে তালীম চালু করুন, বেশি বেশি দ্বীনি আলোচনা করুন, যুহদের বই পড়ুন, নিজেদের ফরজ ইবাদাতে ঘাটতি থাকলে দূর করতে মনোযোগী হোন, একটু একটু করে সুন্নাত ও নফলে পাবন্দী করুন। দেখবেন অনেক সমস্যার সমাধান আপনিই বেরিয়ে আসবে।

★ নিজেদের রিযক্ব হালাল আছে কিনা চেক করে নিন। মনে রাখবেন, সংসারে সুখ শান্তির জন্য, বরকতের জন্য হালাল রিযক্ব খুব খুব জরুরী। এইখানে গলদ থাকলে লাখ টাকার বিছানায় শুয়েও আত্মিক সুখ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, এই জায়গাটা ঠিক থাকলে সামান্য ইনকামেও অনেক সুখী হতে পারেন।

সম্পর্কগুলো গাছের মত, পাতাগুলো একদম শুকিয়ে যাওয়ার আগেই গোড়ায় পানি ঢালুন, আগাছাগুলো উপড়ে ফেলুন, নিয়মিত পরিচর্যা করুন: যাতে বিয়ের ত্রিশ বছর পরও আপনার স্পাউজ বলতে পারে: I got him/her as excellent as the first day & even nicer….

[আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাকেসহ আমাদের সবাইকে কথা বলনেওয়ালার চেয়ে মানলেওয়ালা বেশি হওয়ার তাউফীক্ব দিন।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *