যে জীবন মরীচিকা

আমরা চারটি বিষয়ের অনুসন্ধান করতাম, কিন্তু সে গুলোকে অর্জন করতে পারিনি। কেননা, আমরা ন্যায়সঙ্গত জায়গা থেকে তাদেরকে খুঁজিনি:
১. আমরা অর্থ সম্পদের মাঝে প্রাচুর্য খুঁজেছি, কিন্তু প্রাচুর্য আছে সন্তুষ্টিতে।
২. আমরা বিলাসিতার মাঝে আরাম খুঁজেছি, কিন্তু আরাম আছে অল্পে তুষ্ট থাকার মাঝে।
৩. আমরা সম্মান খুঁজেছি ভালো ব্যবহার এর মাঝে, কিন্তু সম্মান তো রয়েছে তাক্বওয়ায়।
৪. আমরা সুখ খুঁজেছি খাবার আর পোশাকে, কিন্তু সুখ আছে বিনয় আর ইসলামে।

 শাকীক আল- বালখী রহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন, লোকেরা এমন তিনটি কথা বলে যা তাদের কাজের বিপরীতে সাক্ষ্য দেয়:
১. তারা বলে, তারা আল্লাহর গোলাম, কিন্তু কাজ করে স্বাধীন মানুষের মতো।
২. তারা বলে, আল্লাহ রিজিক সরবরাহ করেন, অথচ তাদের হৃদয় এই দুনিয়ার জীবনের ধন-দৌলত আর চাকচিক্য অর্জন করা ব্যতীত কিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না।
৩. তারা বলে, মৃত্যু থেকে পালাবার কোন উপায় নেই, কিন্তু তারা এমন ভাবে কাজ করে যেন কখনোই তাদের মৃত্যু হবে না।

 “কিভাবে একজন মানুষ এই দুনিয়ার জীবনে উল্লাস করতে পারে যখন অতিবাহিত দিনগুলো তার মাসের একাংশকে গ্রাস করছে, অতিক্রান্ত মাসগুলো তার বছরের একাংশকে গ্রাস করছে, আর পেরিয়ে যাওয়া বছর তার জীবনের একাংশকে গ্রাস করছে? কিভাবে একজন মানুষ উল্লাস করতে পারে, যেখানে তার জীবন বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এর সমাপ্তির দিকে এগিয়ে চলেছে, আর যেখানে মৃত্যু হচ্ছে তার জীবনের শেষ পরিণতি?

আমাদের এই পরিণতি অবশ্যম্ভাবী। একমাত্র যে বিষয়টি এই পরিণতি থেকে আপনাকে দূরে রেখেছে, তা হলো মৃত্যু। লোকে এখনো ঘোষণা দেয়নি যে, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন।”

 “সেই তো পথহারা, যার একটি হৃদয় ছিল অথচ সে এটিকে মরে যেতে দিয়েছে; যার হাতে সময় ছিল কিন্তু সে তাকে পেরিয়ে যেতে দিয়েছে। যদি কোন ক্ষতির জন্য কাঁদতেই হয় তবে আপনার হারিয়ে যাওয়া সময়ের জন্য কাঁদুন, আর যদি কারো মৃত্যুতে শোক পালন করতেই হয় তবে আপনার অন্তরের মৃত্যুর জন্য শোক পালন করুন।”

 ইয়াহইয়া ইবনু মুয়ায রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন: “রাত দীর্ঘ, তাই স্বপ্ন দেখতে দেখতে একে সংক্ষিপ্ত করে ফেলো না। দিন পবিত্র, তাই তোমার গুনাহ দিয়ে একে কলঙ্কিত করে ফেলো না। দুনিয়ার জীবনে তুমি একজন পথচারীর মতো হও। উপলব্ধি করো যে, খানিক বিশ্রাম এর পরই চলে যেতে হবে এবং চলে যাওয়ার পালা অবসরের চাইতে অনেক দ্রুত আসে।”

মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসী রহিমাহুল্লাহ জিজ্ঞেস করেছিলেন: “জান্নাতে যাওয়ার পরও কোন লোককে কাঁদতে দেখলে তুমি কি অবাক হবে না? তার এ প্রশ্নের জবাবে লোকেরা বলল: হ্যাঁ। এরপর তিনি বললেন, এটি যতটা না বিস্ময়ের এর থেকেও বেশি বিস্ময়কর হলো সেই ব্যক্তি, যে কিনা দুনিয়ায় হাসছে অথচ সে একেবারেই জানেনা তার চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় হবে, জান্নাতে না জাহান্নামে।”

 আবু জার গিফারি রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন:
তোমাদের কেউ যদি সফর করতে চায়, তাহলে সে কি তার যাত্রার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পাথেয় প্রস্তুত করবে না? তারা জবাব দিল: হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে জেনে রেখো, শেষ বিচারের দিনই তোমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য। সুতরাং তোমরা তোমাদের সাথে করে পর্যাপ্ত পরিমাণ পাথেয় নিয়ে নাও।
তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, তাদের কি পাথেয় নেয়া উচিত। আবু জার বললেন, “ভবিষ্যতে বড় ধরণের যে সব বিপদ আসবে এবং বিপর্যয় ঘটবে তার প্রস্তুতি হিসেবে একবার হজ্জ করো, হাশরের দিনের দৈর্ঘ্যের কথা মাথায় রেখে গরমের দিনে একদিন সিয়াম রাখো এবং কবরে নিঃসঙ্গতার প্রস্তুতি হিসেবে রাতের অন্ধকারে দুই রাকাত সালাত আদায় করো। সেই ভয়ানক দিনের প্রস্তুতি হিসেবে ভালো কথা বলো নয়ত অন্তত খারাপ কথা বলা থেকে বিরত থাকো। তোমার সম্পত্তিকে দান করো যাতে করে সামনে যে কঠিন পরিস্থিতি আসছে তার তীব্রতা থেকে রেহাই পেতে পারো। এই জীবন কে দুই ভাগে ভাগ করে নাও- একভাগ যার ভেতরে তুমি বৈধ রিজিক তালাশ করবে এবং আরেক ভাগ যার মাধ্যমে তুমি আখিরাত তালাশ করবে। তৃতীয় যে কোন ভাগকে প্রত্যাখ্যান করো যা তোমার ক্ষতি করবে এবং তোমার কোন উপকারে আসবে না। তোমার অর্থ-সম্পদ কে দুই ভাগে ভাগ করো- যার এক ভাগ তোমার পরিবারের জন্য বৈধ জিনিসপত্র কেনার ব্যয় করবে এবং আরেক ভাগ তুমি খরচ করবে আখেরাতের প্রস্তুতি হিসেবে।”

~ শাইখ আব্দুল মালিক আল-ক্বাসিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *