প্রেমেরই নাম বেদনা…

‘প্রেমেরই নাম বেদনা’…. সেই বেদনা এখন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, ধরতে পারছেন? প্রেমের জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ মানুষকে খুন করতেও দ্বিধা করছেনা!

কেউ সমস্যার তলায় হাতাচ্ছেন, কেউ উপরে উপরেই পানি ঢালছেন। অথচ ইসলাম যে সমাধানটা দিয়েছে, সেটা সামগ্রিক, এই আধুনিক বিশ্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া যাবে- সত্যিকার ইসলামের প্রয়োগ ছাড়া কোনভাবেই এই ক্রমবর্ধমান সমস্যার সমাধান সম্ভব না। এই সমাধান কেমন?

আজকে ইসলামী রাষ্ট্র থাকলে প্রথমেই কার্যকর হতো ক্বিসাস: খুনের বদলা খুন। তাও জেলের ভেতরে লোকচক্ষুর আড়ালে নয়, একদম প্রকাশ্যে জনসমক্ষে ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেয়া হতো৷ মানবতাবাদীরা ক্বিসাসের ভিডিও দেখে উহু, আহা করবেন জানি, কিন্তু পৃথিবীতে কুকুরের দমনে এরচে বড় মুগুর আর নাই, প্রকাশ্য দিবালোকে একটা কুকুরের কল্লা ফেলে দিন, বাকি কুকুরগুলোর লেজ আপসেই সোজা হয়ে যাবে। কিন্তু কোথায় সেই ইসলামী রাষ্ট্র? বাদ দিই, অতদূর চাইনা, শুধু বিচার চাই দেশীয় আইনে। কিন্তু সেই বিচার? জনগণ খুব ভালো করেই এখন বিচারের মুলো চেনে, নতুন করে পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন নেই। তার মানে, আগা কেটে ফেলার সম্ভাবনা যিরো পার্সেন্ট। তাহলে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে গোড়ায়। যে রোগের প্রতিকার মোটামুটি অসম্ভব, তার প্রতিরোধেই সমস্ত শক্তি নিয়োগ করা জরুরী, নাকি?

এবার আসা যাক, কী সেই গোড়ায় গলদ? ঐ যে বললাম, প্রেমেরই নাম বেদনা। ইসলাম এই বেদনার ধারেকাছে ঘেষাও সাফ সাফ হারাম করে দিয়েছে। আপনি পুরুষ? দৃষ্টি নত করে চলুন, দশটা নারী হেটে যাক, আপনার চোখের পর্দা যেন ঠিক থাকে। আপনি নারী? আপনার পুরো দেহই পুরুষ সমাজের আকর্ষণ, আপনি নিজেও জানেন, সেই আকর্ষণটুকু পুরো ঢেকে রাখুন, গৃহে থাকুন, প্রয়োজনে বাইরে গেলে ঢেকেঘিরে যান, দূরপথে গেলে মাহরাম সাথে নিয়ে যান। নেগেটিভ-পজিটিভ এক হলে সেখানে মিথষ্ক্রিয়া ঘটবেই, সেখানে এদের এক হতে দেয়ার পথই রুদ্ধ করে দেয়া হোক। আচ্ছা, যদি চোখে চোখ পড়েও যায়? ভালো লেগেও যায়? আপনি জানেন, প্রেমের চূড়ান্ত পরিণতি যিনা, আল্লাহ কঠোরভাবে যিনার ধারেকাছে ঘেষতেও নিষেধ করেছেন। আপনি ফিরে আসুন, তাওবা করুন। রিকশায় বসে বিএফের সাথে ইটিশ পিটিশ করবেন, আর দুদিন পর ধর্ষিত হলে নারী নির্যাতন মামলা ঠুকবেন, এমন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কেন? স্বেচ্ছায় করলে প্রেম, আর জোর করলেই দোষ!!

ও আচ্ছা, আপনি এতক্ষণে ধরে নিয়েছেন, আমি এসব নীতিকতা প্রাচীনকালের কোন অবাস্তব উপকথা থেকে আওড়াচ্ছি? মোটেই না! এই আমি কিংবা আমরা, যারা এরকম নষ্ট সমাজে থেকেও নষ্টামিকে থোড়াই কেয়ার করে এসেছি, ভালো থাকতে পেরেছি, বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্কটাকে সত্যিকারেই পবিত্ররূপে পেয়েছি, আমাদের সবার জীবনচিত্রে এই অবাস্তব উপাখ্যানের কমবেশি প্রতিফলন অবশ্যই পাবেন, আলহামদুলিল্লাহ। সেই ছোট্টবেলা খেলার ছলে মা-বাবার কাছ থেকে জেনেছিলাম, প্রেম/ভালোবাসাকে(অবৈধ) আল্লাহ হারাম করেছেন, সেই কথাটুকু বাকি জীবন মাথায় কোড করে নিয়ে পথ চলেছি, আলহামদুলিল্লাহ, কোনদিন ‘বেদনা’র ধারেকাছেও যেতে হয়নি। আপনারা হন্যে হয়ে খুজে ফেরেন, ‘শান্তি কোথায়?’ আমরা সহজ উত্তর বাতলে দিই: এইতো এখানে, আপনার সামনেই, দূরে কোথায় হাতড়ে বেড়াচ্ছেন? আমরা আর কত উপায়ে বোঝালে আপনারা বুঝতে পারবেন, হারামে আরাম নেই??

আমার ভাবতে খুব অবাক লাগে, কোমল হৃদয়ের একটা নারী কিভাবে মার্ডার কেইসের আসামী ধাচের নেতাকে ভালোবাসতে পারে? লগিবৈঠাওয়ালাদেরও কি কিরে জিএফ থাকতে পারে? হ্যা, আমিতো আমার ক্যাম্পাসেই দেখেছি। যে নেতা গোছের ড্যামস্মার্ট ছেলেটা সামান্য তর্কেই একটা মানুষকে পিটিয়ে, কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে, সেই ছেলেটার জিএফ পাশে বসে সেই দৃশ্যে সিনেমাটিক রোমাঞ্চ খোজে, পুরো ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে হেটে বেড়ায়- আমি অমুক নেতার ইয়ে, আমার সাথে ঝামেলা করলে তোমার লাশ পড়ে যাবে! সেই মেয়েটার কি একবারও চিন্তা হয়না, যে সন্ত্রাসী অন্যের গায়ে ছুরি চালাতে জানে, তার সাথে কোন কারণে বনিবনা না হলে সেই ছুরি তার গলায়ও চলতে পারে? আমি মনে মনে উত্তর খুজে নেই, বাইরে মিষ্টি চেহারার আড়ালে এসব মেয়েরা আসলে ভেতরে নোংরা কুৎসিত একটা অন্তর ধারণ করে আছে, যেটা হয়তো ঐ প্রকাশ্য সন্ত্রাসীর কলুষতাকেও হার মানায়। নচেৎ মেয়েমানুষ এত নির্দয় হতে পারে? আমার তো চোর পিটাতে দেখলেও বুক ধড়ফড় করা শুরু করে…..

মাঝে মাঝে রাস্তায় বের হলে, পার্কে কিংবা মার্কেটের গলি ঘুপচিতে বার-চৌদ্দ বছরের সুন্দর ভদ্র চেহারার কিছু ছোট ছোট মেয়ে দেখি, স্কুল ড্রেস পরে এমন এমন ছেলের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের এক পলক দেখলেই বোঝা যায়, একদম থার্ড ক্লাস লেভেলের, হিরোইঞ্চি নয়তো মদখোর। অবাক হয়ে ভাবি, ইস! এই মেয়েটার বাসায় জানে? এই ছেলেটা যদি এক্ষণই ওকে নিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটায়, তা ঠেকানোর সাধ্য ওর আছে? প্রেম কি এতটাই অবুঝ? ভালোবাসা কি এতটাই অন্ধ?

নাকি আমরা মা-বাবারাই অন্ধ? সময় থাকতে ওদের আলো-অন্ধকারের পার্থক্য চেনাতে পারিনি! আমরা বাবামায়েরা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়েই নিরস্ত হই- এই বুঝি বিদ্যেবোঝাই জাহাজ হয়ে ফিরে এলো! অথচ এই সামান্য জ্ঞানটুকু দিতে পারিনা, যা তাকে ভালোমন্দের বাছ-বিচার করতে শেখায়, গহীন অরন্য কিংবা সমুদ্রের তলদেশেও এক আল্লাহকে ভয় করতে শেখায়! ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে- শিক্ষার বড় বড় সার্টিফিকেটওয়ালা ছাত্ররাই আজ হচ্ছে লগি, বৈঠা, রামদাধারী খুনী, ধর্ষক; আর ছাত্রীরা হয়ে উঠছে সেই খুন ধর্ষণের প্রথম নিয়ামক- শয়তানের সবচে ভয়ংকর তীর ‘নারী’…..

আল্লাহ আমাদের মেয়ে সন্তানগুলোকে শয়তানের তীর না বানিয়ে সম্ভ্রমশীলা জীবন্ত তাবু হয়ে ওঠার তাউফীক দিন, শয়তানের তীর যার ধার ঘেষতে চাইলেও ঝলসে যায়। ছেলেগুলোর দৃষ্টিকে করে দিন ইস্পাতকঠিন, শয়তানের প্রতিটি তীর যা থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ফিরে যায়, ‘নারী’র সতীত্বের ভক্ষক না হয়ে যারা হয়ে ওঠে পবিত্র ‘তাবু’র মজবুত রক্ষক, গায়রতওয়ালা পুরুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *