– খালা, ডালে আজকে লবন দেননি?
– খালা, ডালে আজকে লবন বেশি কেন?
– খালা, ভাত আজকে সিদ্ধ কম হয়েছে কেন?
– মামা, তরকারিতে গাজর কেন?
– মামা, গাজর দেন না কেন?
– খালা, খাবারের মধ্যে চুল কেন?….
বুঝতেই পারছেন, এগুলো আমাদের হোস্টেলবাসীদের ডাইনিং এর রাঁধুনি মামা খালাদের প্রতি ছুড়ে দেয়া নিত্যকার অভিযোগ। আমার নিজেরও মাঝে মাঝে এমনটা মনে হয়, যদিও জিজ্ঞাসাবাদ না করার চেষ্টাই করে থাকি। যাহোক, একটা সিম্পল বিষয় ‘চিন্তাশীল’দের জন্য শেয়ার করার ইচ্ছে হলো।
দেখুন, ‘নানা মুনির নানা মত নানা পথ’, এত এত মত পথের সাথে মিলিয়ে চলা একজনের পক্ষে সত্যিই সম্ভব না। আমি আমার পরিবারের উদাহরণই যদি দিই: আমার বাবার বাড়ি সবাই লবন, তেল মশলা কম খায়, আব্বু তার মধ্যে আরও কম। ওদিকে আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই লবন, তেল, মশলা বেশি খায়(উত্তরবঙ্গে এটাই প্রচলিত যেহেতু)। আমাদের বাসায় আমার হাজব্যান্ড যখন বেড়াতে যায়, প্রথম দিকে রান্না নিয়ে আম্মুকে বেশ ঝামেলায় পড়তে হতো। রান্নায় লবন বেশি হলে আব্বু খেতেই পারেনা, আর কম হলে মেয়ের জামাই খেতে পারেনা(যদিও কষ্ট করে খাওয়ার চেষ্টা করে)। এই ব্যাপারটা দেখেই আমার মনে হয়েছিলো: একজন মানুষের পক্ষে একইসাথে দুই পথে চলাতো সম্ভব না, অন্তত রান্নার ক্ষেত্রে তো আরও না, এক ঘরে দুই রুচির মানুষ থাকলে লবন কারও বেশি কারও কম, ঝাল কারও বেশি কারও কম, এসব হবেই। ৪/৫ জন মানুষের একটা সংসারেই যদি এটা সম্ভব না হয়, তবে চিন্তা করুন তো: একটা হোস্টেলের ডাইনিং এ কয়েকশ’ স্টুডেন্ট খায়, একেক জন একেক বঙ্গের, একেক বংশের, একেক রুচির, একেক চিন্তার। মামা খালারা যেদিকেই চলুক, কেউ না কেউ বেজার হবেই, এটাই স্বাভাবিক নয়কি?
আমরা আসলে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সময় কেবল নিজেকে অন্যের পরস্থিতিতে বসিয়ে চিন্তা করতে পারলে ৮০% অভিযোগের সমাধান আপসেই হয়ে যায়।
♦ তাছাড়া খাবারের ব্যাপারে অভিযোগ? এটা আল্লাহর রাসূল(সাঃ) খুব অপছন্দ করতেন। তিনি তার জীবদ্দশায় কখনও খাবার নিয়ে অভিযোগ করেননি, (ইন ফ্যাক্ট উনার ঘরে তো দিনের পর দিন চুলাই জ্বলেনি) কোন খাবার তার পছন্দ হলে খেয়েছেন, না হলে খাননি, কিন্তু তা নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলেননি।
♦ আর হ্যা, চিন্তা করে দেখুন তো, এই হোস্টেল থেকে বের হয়ে আপনি যখন সংসারে ঘরকন্যার কাজ শুরু করবেন, অফিস থেকে ফিরে আপনার কষ্ট করে করা রান্না নিয়ে আপনার হাজব্যান্ড যদি প্রতিদিন এরকমই এক একটা অভিযোগ তোলে, আপনার কি ভালো লাগবে??